৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ - ২৩ মে, ২০২৫ - 23 May, 2025

বেরোবির ২ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অসদাচরণ ও পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়মের অভিযোগে

1 month ago
181


বেরোবি  প্রতিনিধি :

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে পরীক্ষা সংক্রান্ত অনিয়ম এবং অসদাচরণ অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের কঠোর আওয়ামী পন্থী  প্রফেসর ড. মো: রশীদুল ইসলাম ও সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহ।  বিষয়টি নিয়ে মঙ্গলবার (১৭ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিকের কাছে লিখিত অভিযোগপত্র জমা দেন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, গত ২২ মার্চ ২০২৫ তারিখে ওই বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের Multivariate Analysis II (কোর্স কোড: STAT 4201) এবং Economic Statistics and Econometrics (STAT 4202) কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা জানান, ১ম থেকে ৭ম সেমিস্টার পর্যন্ত কখনো কেউ ফেল না করলেও এবার ফলাফল নিয়ে তাদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।

বিশেষ করে STAT 4201 কোর্সের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র সিংহের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ক্ষেত্রে একরকম টপিক পড়ালেও, মিড পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে সিলেবাসের টপিকগুলোর সঙ্গে কোনো মিল ছিল না। মিড টার্মে গড় নম্বর ছিল মাত্র ৫/২৫। এমনকি পরীক্ষার পরে কন্টিনিউয়াস মূল্যায়ন প্রকাশ করলেও সেখানে তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে পরীক্ষার আগের সময়, যা শিক্ষার্থীদের মতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। এ ছাড়াও তারা দাবি করেন, বিভাগের আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয়তা এই শিক্ষকের অপছন্দ হওয়ায় পরবর্তীতে তাদেরকে নানা ধরনের হয়রানি ও হুমকির মুখে পড়তে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, কিছু ‘পছন্দের’ শিক্ষার্থীকে অতিরিক্ত নম্বর দেজওয়া হলেও অধিকাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় উত্তর না দিতে পারায় ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ছাড়া অভিযোগ রয়েছে শিক্ষক অতুল চন্দ্র সিংহ শিক্ষাসফরে না যেতে পারায় ব্যাচের প্রতি ব্যক্তিগত ক্ষোভ পোষণ করেন। 

পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘দেশ সংস্কার’ সংক্রান্ত পোস্ট, লেখালেখি এবং বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে ক্লাসেও শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

অন্য দিকে, STAT 4202 কোর্সের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলামের বিরুদ্ধেও শিক্ষার্থীরা কন্টিনিউয়াস মার্ক প্রকাশে দীর্ঘ বিলম্ব, মানসিক চাপ প্রয়োগ এবং নারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনৈতিক কার্যকলাপ, বিভাগীয় প্রধান হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উস্কানি প্রদানের অভিযোগ এনেছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। জুলাই পরবর্তী সময় বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে সুবিধা না নিতে পারার কারণে আন্দোলন পরবর্তী সময়ে আনদোলনকারী শিক্ষার্থীদের দাবিতে বিভাগের ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও অন্যান্য আয়োজনে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা থাকলেই চিহ্নিত করে হুমকি, মানসিক নির্যাতন ও পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিভিন্নভাবে হেনস্তা করেন। এ সব নিয়ে ভয়ে এককভাবে গণমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতেও ভয় পাচ্ছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা কিছু দাবিও তুলে ধরেছেন। এর অংশ হিসেবে বর্তমান পরীক্ষা কমিটি বাতিল করে নতুন নিরপেক্ষ পরীক্ষা কমিটি গঠন, STAT 4202 কোর্সের কন্টিনিউয়াস মার্ক দ্রুত প্রকাশ এবং ফাইনাল পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত ঘোষণা, STAT 4201 কোর্সে শিক্ষাদান ও পরীক্ষার গড়মিলের জন্য শর্তসাপেক্ষে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া, এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের দায়ী করে তদন্ত কমিটি গঠন ও কোনো ধরনের হুমকি বা ক্ষতির চেষ্টা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অভিযোগের প্রসঙ্গে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মো. রশীদুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ উঠানো হচ্ছে তার সবই ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। আর আমি যে তাদের পরীক্ষার হলে কীভাবে হেনস্তা করেছি সেটাও বুঝতে পারছি না।

রশীদ আরও বলেন, আমার বিভাগীয় প্রধান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আইনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে। আমি তার বিরুদ্ধে কথা বলার পাশাপাশি ভিসি স্যারকে লিখিত দিয়েছি। এটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আমি কোনো ধরনের বাজে আচরণ করিনি। এরপরও কেউ যদি এমন বলে থাকে তবে তা ভিত্তিহীন। এ সময়, ফাইনাল পরীক্ষার আগে কন্টিনিউয়াস নম্বর না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে স্বল্প সময়ের কারণে বিভাগের অনেক শিক্ষকই তা দেননি বলে দাবি করেন তিনি।

অপর অভিযুক্ত শিক্ষক অতুল চন্দ্র সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হয়েছে এগুলো সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। তারা যে অভিযোগটি করেছে সেটি হল মিড পরীক্ষায় আমি সিলেবাসের বাইরে গিয়ে প্রশ্ন করেছি, এটি সঠিক নয়। আমার কাছে পড়ানোর সীট আছে, প্রশ্ন আছে।আমি একমাস আগে কন্টিনিউয়াসের মার্ক দিয়েছি, এতদিনপর অভিযোগ কেনো। আমি চাই খাতা এক্সপার্ট দিয়ে মূল্যায়ন করা হোক।

অন্য দিকে, বিশেষ কিছু শিক্ষার্থীকে নম্বর বেশি দেওয়ার যে অভিযোগ শিক্ষার্থীরা করেছেন তাকে তাদের ভুল ধারণা বলে উল্লেখ করেন অতুল। তিনি বলেন, তারা মনে করে আমার প্রজেক্ট গ্রুপে যেসব শিক্ষার্থী রয়েছে আমি তাদের বেশি নম্বর দিয়েছি।

জুলাই আন্দোলন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘দেশ সংস্কার’ বিষয়ক লেখালেখির কারণে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত শিক্ষার্থীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করব এটি সজ্ঞানে আমার করার কথা না। আন্দোলনের সময় আমি তাদের পক্ষে ছিলাম এবং যেকোনো যৌক্তিক দাবির পক্ষে আমি থাকি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরামর্শ দপ্তরের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামানিক বলেন, “আমি অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে অভ্যন্তরীণভাবেই আলোচনার পরামর্শ দিয়েছি। এতে কোনে ফল না এলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করব।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth