৯ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ - ২৩ মে, ২০২৫ - 23 May, 2025

১০ দফা দাবিতে বগুড়া-পঞ্চগড় লং মার্চ

1 month ago
129


দেশের কৃষি ও কৃষককে বাঁচাতে সরকারকে পাশে থাকার আহ্বান

মহানগর প্রতিবেদক:

‘গ্রামবাংলার সাধারণ কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখতে ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনা, গুদামজাত করা এবং প্রয়োজনে বিদেশে রপ্তানি করার মতো উদ্যোগ নেওয়া ও অবকাঠামো গড়ে তোলা উচিত। আর এ মুহূর্তে সরকারকে কৃষকের পাশে থাকতে হবে। কেননা কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ।’ রোববার (২০ এপ্রিল) দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে কৃষক ঐক্য পরিষদ আয়োজিত পথসভা থেকে সরকারের প্রতি এ দাবি জানানো হয়।

‘যে কৃষক যোগায় ক্ষুধায় অন্ন, সে কৃষক আজ কেন বিপন্ন’ স্লোগানে গত ১৭ এপ্রিল দশ দফা দাবিতে বগুড়া থেকে পঞ্চগড় অভিমুখে সপ্তাহব্যাপী লং মার্চ শুরু করে কৃষক ঐক্য পরিষদ। লং মার্চের চতুর্থ দিনে রোববার দুপুরে বিভাগীয় নগরী রংপুরের প্রবেশদ্বার মর্ডাণ মোড় হয়ে প্রেসক্লাবের সামনে পথসভায় মিলিত হয়।

পথসভায় কৃষক নেতারা বলেন, কৃষিখাত দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হলেও কৃষকেরা আজ নানা কারণে দুর্ভোগ, হয়রানি ও লোকসানের শিকার। কৃষকের সমস্যা জিইয়ে রেখে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে চাঙ্গা অবস্থানে নেওয়া সরকারের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। কারণ কৃষকেরা কৃষিবিমুখ হলে অর্থনৈতিক ভাবে দেশ আরো পিছিয়ে যাবে। যেকোনো ফসলের লোকসান থেকে কৃষকদের বাঁচাতে সরকারকেই উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে। তা না হলে কৃষকরা চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন।

বক্তারা আরও বলেন, এবার যদি আলুর দিকে তাকান, তাহলে কান্না আসে। লাভ তো দূর অস্ত, উৎপাদন ব্যয় ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। মড়ার ওপর খাড়ার ঘা’র মতো আছে প্রতাপশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। তাহলে কি কৃষকরা আলু উৎপাদন করে অপরাধ করেছেন? নাকি কৃষিই অভিশাপ হয়ে উঠেছে? এভাবে চলতে থাকলে এদেশে কৃষির ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কা দেখা দেবে।

কৃষক নেতারা বলেন, অতি ক্ষরা ও অতি বৃষ্টির নেতিবাচক প্রভাবের সাথে আমরা লড়াই করে টিকে আছি। প্রতিবেশি দেশের অবাঞ্চিত জলস্রোতে আকস্মিক বন্যার সাথে লড়তে হয়। প্রতিবছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রায়ই আমাদের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। আমাদের জানমাল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশেষ করে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকরা আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। পরের বছর কৃষকরা স্বাভাবিক উৎপাদন বজায় রাখতে পারেন না। জীবন-সংসার বাঁচাতে বাধ্য হয়ে এনজিও ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েন। এসময় এসব ঝুঁকি মোকাবেলায় উন্নত বিশ্বের মতো আমাদের দেশে কৃষি এবং কৃষকের জন্য কল্যাণকর কৃষি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে।

কৃষক ঐক্য পরিষদের রংপুর জেলা সভাপতি মনিরুজ্জামান তালুকদারের সভাপতিত্বে পথসভায় বক্তব্য রাখেন- পরিষদের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মঞ্জুর আলম, মহাসচিব সুলতান হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. নজরুল ইসলাম, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন ফরাজী ও দপ্তর সম্পাদক মাকসুদুর রহমান খান।

এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে কৃষক ঐক্য পরিষদের কুড়িগ্রাম জেলা সভাপতি মাসুদুর রহমান জালাল, লালমনিরহাট জেলা সভাপতি রেজাউল করিম, রংপুর জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান, কাউনিয়া উপজেলা সভাপতি আরিফ আজাদ বক্তব্য রাখেন। 

এ সময় কৃষকদের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১০ দফা তুলে ধরে তা বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।

দাবিসমূহ হলো - ১. আলু ও পেঁয়াজ কমিশন গঠন এবং উপজেলা ভিত্তিক সংরক্ষণাগার ও রপ্তানি কেন্দ্র স্থাপন, ২. ঢাকাসহ সারা দেশে কৃষকের বাজার প্রতিষ্ঠা, ৩. কৃষিঋণ ও প্রণোদনা সহজীকরণ, ৪. সিন্ডিকেটমুক্ত করে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, ৫. কৃষিপণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি ও টোল প্রথা বন্ধ করে রেলবগি বরাদ্দ করা, ৬. খাস ও পতিত জমি বরাদ্দসহ কৃষকদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু, ৭. সরকারিভাবে কৃষি বীমা ও আর্থিক সহায়তা ব্যবস্থা, ৮. সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে কৃষকদের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড়ে বিশেষ চিকিৎসাসেবা প্রদান নিশ্চিত করা, ৯. জাতীয় সংসদসহ বিভিন্ন কমিটিতে কৃষক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা, ১০. আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সরবরাহ ও বাস্তবমুখী করা।

পথসভা শেষে পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্য লং মার্চ শুরু করে পরিষদের নেতাকর্মীরা। এতে বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার কৃষকরা অংশ নিয়েছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth