২৫ আষাঢ়, ১৪৩২ - ০৯ জুলাই, ২০২৫ - 09 July, 2025

কুড়িগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায়  লাইট হাউজের কার্যক্রম

1 week ago
47


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামে দুর্যোগ মোকাবেলায় লাইট হাউজ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারী সংস্থার কার্যক্রম শুরু করেছে। লাইট হাউজ একটি স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়নমূলক বেসরকারী সংস্থা। ১৯৯২ সালে অনুমোদন পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের গ্রামীণ-শহরে দরিদ্র,প্রান্তিক ও উচ্চ ঝুঁকির জনগোষ্ঠি, হিজড়া, আদিবাসী,কৃষক এবং অন্যান্য  পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে। ভূমিহীন, গৃহহীন, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী, জলবায়ু পরিবর্তন,দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা,লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতা, পথশিশু, স্কুল থেকে ঝরে পড়া শিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও প্রাপ্ত বয়স্কদের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে।

বর্তমানে লাইট হাউজ কুড়িগ্রাম জেলার ৫টি উপজেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এরমধ্যে কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারী এবং রাজিবপুর । এসব উপজেলার মধ্যে দুর্যোগ প্রবণ ৩৫টি ইউনিয়নে স্থানীয় পর্যায় ৭০জন স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকদেরকে প্রশিক্ষণ, ওয়ার্কসপ,সচেতনকরন সভা, দুর্যোগ প্রবন এলাকার দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকি প্রবণ নারী,কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দুর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সহিংসতা হ্রাসে সচেতনতামূলক জ্ঞান প্রদান করা হয়। দূর্যোগ প্রবন কুড়িগ্রামের দারিদ্রপীড়িত এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা করার জন্য মোবাইল অ্যাপ, পোষ্টার,লিফলেট, ফ্লায়াস,অনলাইন প্লাটফর্মসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করে তোলা হচ্ছে।

দুর্যোগকালীন সময় বিষয়বস্তু নির্বাচন করা,নির্বাচিত বিষয়ের উপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণা করা,লেখার কাঠামো, ছবি ও গ্রাফিক্স আকর্ষণীয় করার উপর স্বেচ্ছাসেবকদের প্রশিক্ষণে তুলে ধরা হয়।

দূর্যোগ প্রবণ এলাকার দারিদ্রপীরিত এবং ঝুঁকিপ্রবন নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে দূর্যোগকালীন সময়ে জেন্ডার সহিংসতা হ্রাসে সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানোর অংশ হিসেবে ৯০জন স্থানীয় সাংবাদিকদের জেন্ডার সংবেদনশীল ও দূর্যোগ সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যুব ও কিশোরী স্বেচ্ছাসেবীদের সিটিজেন জার্নালিজম এর উপর ওরিয়েন্টেশন প্রদান।

দূর্যোগ ব্যবস্থাপনার পলিসি বাস্তবায়ন বিষয়ক টেলিভিশন সংলাপের আয়োজন করা। দূর্যোগ কালীন সময়ের নারী,কিশোর-কিশোরী এবং প্রতিবন্ধীদের সামগ্রীক পরিস্থিতির উপর প্রতিবেদনের জন্য নির্বাচিত সাংবাদিকদের ফেলোশীপ প্রদান করা। লাইট হাউজ কর্তৃক আয়োজিত রাজধানীসহ কুড়িগ্রামে দূযোর্গকালীল সময়ে জেন্ডার সংবেদনশীল রির্পোটিং বিষয়ক জাতীয় পর্যায়ের প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণ কর্মশালা বাস্তবায়ন করেছে। প্রশিক্ষণে দূযোর্গকালীন সময়ে সাংবাদিকগন দূর্যোগের উপর সঠিত তথ্য চিত্র তুলে ধরা এবং দূযোর্গকালীন সময়ে জেন্ডার সংবেদনশীল ও সহিংসতা বিষয়ক রির্পোটিং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবক রাকিবুল ইসলাম রাফি বলেন, লাইট হাউজ সংস্থার মাধ্যমে এবারই প্রথম আমি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি নিজে এবং দুর্যোগ প্রবণ এলাকায় আক্রান্ত পরিবারকে কিভাবে সহায়তা এবং অ্যাপস এর মাধ্যমে তথ্য পৌছে দেয়া যায় তা শেখানো হয়েছে। ইউনিয়নগুলোতে উঠানবৈঠক এর মাধ্যমে গ্রামের বসবাসরত নারী, কিশোরী এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং দুর্যোগকালীন সময়ে করনীয় বিষয়ে সচেতন করে তোলা হয়।

স্বেচ্ছাসেবী রুবাইয়া ইসলাম কুরসি বলেন, আমাদের আরও স্বেচ্ছাসেবক বাড়ানো দরকার। কেননা জেলায় অনেক প্রত্যন্ত দুর্যোগপূর্ণ এলাকা রয়েছে। সেসব এলাকায় অনেকের ভালো মোবাইলও নেই। তাই এসব এলাকার প্রাইমারী, হাই স্কুল, কলেজ এবং মাদ্রাসার শিক্ষকসহ মসজিদের ঈমামদেরও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা। এছাড়াও কুড়িগ্রাম আবহাওয়া অফিস থেকে দুর্যোগের আগাম তথ্য সংগ্রহ করে স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে ছড়িয়ে দিলে আমরা আরও দুর্যোগকালীন ক্ষতি কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো বলে মনে করি।

লাইট হাউজ কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন,দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান,দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের (গবেষণা ও প্রশিক্ষণ) পরিচালক যুগ্ন সচিব নাহিদ সুলতানা মল্লিক, উপসচিব সানজিদা ইয়াসমিন, কমিউনিকেশন ও মিডিয়া স্পেসালিষ্ট সৈয়দ আশরাফ উল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), উওম কুমার রায়, উপজেলা নিবার্হী অফিসার মহোদয়গন, দৈনিক আজকালের খবর সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার এবং লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদ প্রমুখ।

দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে চলে। তাই প্রাকৃতিক দূর্যোগ প্রতিরোধ করার শক্তি যেমন মানুষের হাতে নেই তেমনি জানা নেই আত্মরক্ষার কৌশলও। তবে দূর্যোগ মোকাবিলা করার প্রস্তুতি ও সর্তকতামূলক ব্যবস্থা গ্রহন করলে অনেক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ জন্য গণসচেতনতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার ঝড়-জলোচ্ছাস ও বন্যা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো অবকাঠামো নির্মাণ, উঁচু বাঁধ তৈরি। একই সঙ্গে টেকশই দূর্যোগ মোকাবিলা অনেকটাই নির্ভর করছে আমাদের কর্মকান্ড ও প্রকৃতি ভিত্তিক সমাধানের ওপর কতটা জোর দিচ্ছি।

লাইট হাউজের নির্বাহী প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন,দূযোর্গ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি কুড়িগ্রামে সফলতার সাথে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তবে প্রকল্পটি দীর্ঘমেয়াদি হলে এলাকার স্থায়ীভাবে উন্নয়ন করা সম্ভব বলে মনে করছি। তাই প্রকল্পটি চলমান রাখতে দেশি এবং বিদেশী দাতা সংস্থার কাছে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth