১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

শিশু রাকিবের জীবন শিকলে বাঁধা, অর্থাভাবে হচ্ছে না চিকিৎসা

আমাদের প্রতিদিন
6 months ago
70


আরমান আলী,ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম):

রুঙ্গামারীতে ৪ বছর ধরে পায়ে শিকল পড়া অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে ১১ বছরের মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু রাকিব ।

এদিকে প্রতিবন্ধী ছেলের পাগলামীতে অতিষ্ঠ হয়ে তার মা স্বামীর সংসার ও ছেলেকে ফেলে তালাক নিয়ে চলে যান। অন্যের সংসারে তার মা ভালো থাকলেও ভালো নেই শিশু রাকিব।

মানসিক প্রতিবন্ধী রাকিব উপজেলার পাইকেরছড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের গছিডাঙ্গা গ্রামের রুহুল আমিন এর ছেলে। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে তার বাবা তাকে চার বছর ধরে দু'পায়ে শিকল পরিয়ে তালা দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছেন। এদিকে অর্থের অভাবে সঠিক চিকিৎসা দিতে পারছেন না তার বাবা। এতে রাকিবের মানসিক প্রতিবন্ধকতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিশু রাকিবের পায়ে লোহার শিকল ও তালা লাগিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। প্রচণ্ড শীতে উদোম শরীরে সারাদিন গাছের চারপাশে ঘুরছে। মানুষ দেখলেই শেকল দেখিয়ে খুলে দেওয়ার ইশারা করে সে। হৃদয় বিদারক এই অমানবিক নির্মম দৃশ্য দেখে সকলের কষ্ট হলেও তার হতদরিদ্র পরিবারের পক্ষে এ ছাড়া আর কিছু করার নেই। টাকার অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন ছেলেটির চিকিৎসা করাতে পারছেন না দিনমজুর রুহুল আমিন। সন্তানটি যাতে হারিয়ে না যায়, সেই কারণে শেকল দিয়ে তাকে বেঁধে রেখেছেন বলে জানান তিনি।

শিশুটির পরিবার জানায়, রাকিব প্রায় ৫ বছর আগে বাড়ির সামনে বড় রাস্তায় ট্রলির সাথে এক্সিডেন্ট করে মারাত্মক ভাবে আহত হয়। চিকিৎসায় মোটামুটি সুস্থ হলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে রাকিব। এর পর বাড়ি থেকে বেড়িয়ে সে আর ফিরে আসতে পারতো না। একাধিকবার হারিয়ে গেছে। পরে সন্ধানদাতা ও এলাকাবাসির সহায়তায় খোঁজে এনে বাড়িতে বেঁধে রাখেন তার বাবা। শিকলে বাঁধা অবস্থায় তাকে খাইয়ে দিতে হয় । অসুস্থ হওয়ার পর থেকেই সে কথা বলতে পারে না বলে জানায় পরিবার।

স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই জানান, এর আগে তারা রাকিবের শিকল খুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু বার বার অন্যত্র চলে যাওয়ায় তাকে স্থায়ীভাবে পায়ে শিকল পরিয়ে তালাবন্দি করে রাখা হয়েছে।

এলাকাবাসী গাজিউর, এরশাদ ও রাকিবের দাদি রহিমা বেগম বলেন, সেই ছোটকাল থেকে ছেলেটাকে শেকলে বেঁধে রাখা হয়েছে। ছেলেটির কষ্ট সহ্য করার মত না। কিন্তু আমাদের তো কিছু করার নেই।

রাকিবের বাবা রুহুল আমিন জানান, প্রতিদিন সকালে ছেলেকে শিকল দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে আমি কাজে যাই। বিকেলে কাজ থেকে ফিরে ছেলেকে ঘরে নিয়ে আসি। রাতের অন্ধকারে একটু ঘুমায়। অভাবের সংসারে

কাজ না করলে পরিবারের খাবার জোটে না। দিন এনে দিন খাই। আমার ছেলের চিকিৎসা করাবো কি ভাবে?

পাইকেরছড়া ইউনিয়নের অত্র ওয়াডের মেম্বার নুরুজ্জামান বলেন, শিশুটির নামে সম্ভবত একটি প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড রয়েছে। তাকে সুচিকিৎসা দিলে সম্পর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবে বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তাই শিশুটির চিকিৎসায় সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসার আহহ্বান জানান তিনি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়