পীরগাছার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই
![](https://www.amader-protidin.com/storage/postpic/1710594999.webp)
এক মঞ্চে ৪টি রাজনৈতিক দলের নেতারা
পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি:
রাজনৈতিক মাঠে ভিন্ন মত, ভিন্ন বক্তব্য আর রেশারেশি থাকলেও গত এক সপ্তাহ থেকে একই সময়ে এক মঞ্চে দেখা গেছে পীরগাছার ৪টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের। আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পাটি ও জামায়াতের প্রথম সারির এসব নেতা আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বিরতির দাবিতে এক হয়ে প্রতিদিন আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাদের সাথে বীর মুক্তিযোদ্ধারাও একত্বতা ঘোষনা করেন। প্রতিদিন বিকেল ৫ টা এবং রাত ১০ টায় পীরগাছা রেল স্টেশনে অস্থানীয় মঞ্চে তারা বক্তব্য দিচ্ছেন। নেতাদের দাবি, পীরগাছার উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন বিকল্প নেই।
জানা গেছে, গত ১২ মার্চ বুড়িমারী—ঢাকা রুটে আন্তঃনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করা হয়। ট্রেনটি রংপুরের কাউনিয়া—বগুড়া হয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে পীরগাছা, বামনডাঙ্গা ও বগুড়ার সোনাতলা স্টেশনে কোন যাত্রা বিরতি রাখা হয়নি। বিষয়টি জানতে পেরে উদ্বোধনের আগে থেকেই পীরগাছা যাত্রা বিরতির দাবিতে আন্দোলনের ঘোষনা দেয় উপজেলা নাগরিক পরিষদ। সেই মতে ১০ মার্চ সংবাদ সম্মেলন, ১১ মার্চ স্টেশন চত্ত্বরে মানববন্ধন এবং ১২ মার্চ ট্রেনটির উদ্বোধনী দিনেই পীরগাছা স্টেশনে ১০ হাজার লোকের গনজমায়েত করে নাগরিক পরিষদ। ওইদিন রাত সাড়ে ১০ টা থেকে ১১ টা ১০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় ৪০ মিনিট ট্রেনটি আটকে রাখে বিক্ষুদ্ধ জনতা। পরে ট্রেনে থাকা রেলওয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঞ্চে এসে যাত্রা বিরতির আশ^াস দিলে ট্রেনটি ছেড়ে দেয়া হয়। ওইদিন থেকেই দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিদিন বিকেল ৫ টা ও রাত ১০ টায় ট্রেনটি ৩ মিনিট করে আটকে রেখে আন্দোলন করা হচ্ছে। দাবি আদায় না হলে ট্রেনের নিচে ঝাপিয়ে আত্মহুতির ঘোষনা দেন কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও।
স্থানীয় লোকজনের দাবি, এই রুটে দুইটি আন্তঃনগর রংপুর ও লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচলা করে। দুটি ট্রেনেই পীরগাছা যাত্রা বিরতি আছে। কিন্তু টিকেট সংখ্যা অপতুল্য হওয়ায় আমরা নানা সমস্যায় পড়ছি। ভালো কোন বাস চলাচল নেই এখান থেকে। তাই বুড়িমারী ট্রেনটির কোন বিকল্প নেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়াজেদ আলী সরকার বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই ট্রেনটি থামাতে হবে। প্রয়োজনে আমি ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে জীবনকে উৎসর্গ দিব। তবুও আমি চাই ট্রেনটি থামানো হউক।
উপজেলা নাগরিক পরিষদের সভাপতি ও পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন, দলমত নির্বিশেষে সব দল ঐক্যবদ্ধ। কৃষি বান্ধন এই উপজেলার উন্নয়নের স্বার্থে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেন যাত্রা বিরতি ও অধিক সংখ্যক টিকেট বরাদ্দ না দিলে আমাদের আন্দোলন চলবে।
পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন বলেন, ‘আমাদের এমপি সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সাথে এ বিষয়ে আমাদের কথা হয়েছে। তিনি আমাদের ঢাকায় ডেকেছেন। আমরা আশা করছি, শিগগিরই পীরগাছায় যাত্রা বিরতির বিষয়ে পরিপত্র জারি হবে। তবে পরিপত্র না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি চলবে।
পীরগাছা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ মাহবুরার রহমান বলেন, এ উপজেলার মানুষ ঢাকায় যাতায়াতে ট্রেনেই তাদের একমাত্র ভরসা। একটি বড় উপজেলার মধ্যে দিয়ে ট্রেন যাবে, দাড়াবে না, তা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা রেল মন্ত্রী ও সচিবের সাথে দেখা করতে ঢাকা যাচ্ছি। সফলতা আসবেই।
তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, ইতিহাস খ্যাত দেবী চৌধুরাণীর বাড়ি এ উপজেলায়। অনেক বড় বড় কর্মকর্তার বাড়িও এ উপজেলায়। তারা সব সময় ট্রেনের যাতায়াত করেন। অথচ ট্রেনটি আমাদের বুকের উপর দিয়ে চলে যাবে, এটা মানা যায় না।
জানতে চাইলে রেলওয়ের লালমনিরহাট বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আব্দুস সালাম বলেন, তাদের দাবি যৌতিক। আমার কাছে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ মতামত চাইলে আমি দেব।