১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

চিলমারীতে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে, পুকুরে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে

আমাদের প্রতিদিন
4 months ago
114


হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম):

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে রমনা ইউনিয়নের চর পাত্রখাতা গ্রামে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে, পুকুরে গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে।  জানাযায় গতকাল, চর পাত্রখাতা গ্রামের বাবর আলীর পুত্র মাসুদ মিয়ার পুকুরে পূর্ব শত্রুতার জের ধরে, তার লিজ নেওয়া পুকুরে গ্যাসের ট্যাবলেট/বিষ দিয়ে মাছ নিধনের অভিযোগ উঠেছে কাজিমুদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে মাসুদ মিয়ার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যে জমি বা পুকুর নিয়ে কাজিয়া (সমস্যা) চলছে, সে জমিটি আমার মা ও বাবার নামে কবুলত দলিল আছে। ২০০৭ সালে সরকার কে সকল প্রকার খাজনা পাতি দিয়ে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ভোগ দখল করে আসছি। এর আগেও আমার বাবা ১৫ বছরের জন্য ভূমিহীন লিজ নিয়ে ছিল বলে জানান। এবং  তিনি বলেন, আমি হঠাৎ করে শুনি আমাদের এলাকার কয়েক জনের ইন্দোনে ইউএনও স্যার ও মৎস্য কর্মকর্তা এই জমিকে মৎস অভয়াশ্রম করছেন। এটা শোনার পরে আমি ইউএনও স্যারের নামে কোর্ডে মামলা করি ও ইউএনও স্যারের বিরুদ্ধে স্টাটাস করি ও হাইকোর্ট থেকে কাগজ নিয়ে আসি। এবং এই মাসের ৫ তারিখে ইউএনও স্যার, উপজেলা চেয়ারম্যান, মৎস অফিসার ও ডিসি স্যারকে অবগত করি। ওরা বলে আপনি মৎস অফিসে একটা কাগজ দিয়ে জান। পরে আমি কাগজ দিয়ে পুকুরে মেশিন নিয়ে যাই, এবং পানি ছেকার পরে কিছু মাছ ও তুলি। পরে ওসি স্যার আমাকে কল দিয়ে বলে ইউএনও স্যার মেশিন বন্ধ করার জন্য বলল। কালকে দু দলে বসার পর কাগজপাতি দেখে, কোর্ড যাদের কে রায় দিয়েছে তাদের কে আমরা দিয়ে দিব। পরে ইউএনও স্যার মিটিং এর তারিখ দেয়, ২/৩ টা তারিখ দেওয়ার পরে গত ১৮ তারিখ শেষ বসার কথা ছিল। উপজেলায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম লিচু, জেলা পরিষদ সদস্য জামিনুল হক ও বিপ্লব মেম্বার ভাইসহ সবাই আমাকে ১৮ তারিখ বসার জন্য কথা দিল, বসার পরে যার কাগজ আছে তাকে পুকুরে মাছ মারতে দিব বলে জানান। তখন থেকে ঐ অবস্থায় আমি আছি, এবং ১৮ তারিখে আমি ইউএনও অফিসে যাই গিয়ে দেখি ইউএনও স্যার ও আমার বিরোধী দলের কেউ সেখানে উপস্থিত নাই। এরপরে তাদেরকে বলে আমি চলে আসি যে পরে কখন বসবেন আমাকে জানান। এর পরে ঐ রাতেই তারা পুকুরে গ্যাসের ট্যাবলেট/বিষ দিল তারা, তিনি আরও বলেন আমি ভোর ৩.৩০ মিনিটে পুকুর পাড়ে যাই লাইট দিয়ে দেখি আইজল, কাজিমুদ্দিন, শাহাবুদ্দিন ও বাবুসহ কয়েকজন পুকুরে ঢিল মারছে, তখন আমি কেরে কেরে বলে উঠলে তারা চলে যায়। গ্যাস ট্যাবলেট দেওয়ার সাথে সাথে তো বোঝা যায় না ৩/৪ ঘন্টা পরে বোঝা যায়। তারপর আমার কথা শুনে আমার চাচা দেলাবর ও চাচাত ভাই আসে, পরে ভোর ৫টায় দেখি মাছ মরে ভেসে ভেসে আছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী জয়নাল আবেদীন, গোলজার ব্যাপারী, বাবলু মিয়া ও লাকী বেগম বলেন- কয়েকদিন আগে পুলিশ আসে এবং দু দলের লোককে মাঠের পাড়ে ডাকে, তখন দারোগা বলে মাসুদরা কোর্ডের অডার নিয়ে আসছে, এদের কে মাছ মারতে বাধা দেন ক্যে তখন বিপক্ষ দলের লোজ ও কাজিমুদ্দিন পুলিশ কে বলেন আমরা আর ওখানে কেউ যাব না, তখন আমরা কোর্ডের রায়ের উপর পুকুর সেকার জন্য মেশিন লাগাই। ও পরে তারা লাঠি, চোরা নিয়ে আসে, তাদের কে দারোগা ও টিএনও নাকি অডার দিয়েছে বলে পরে তারা চলে যায়। তখন থানা থেকে ফোন দেয় মেশিন বন্ধ কর, পরে বসে মিমাংসা করা হবে। তখন থাকি টিএনও স্যার ৩/৪ টা তারিখ দেয় বসে মিমাংসা করে দেওয়ার জন্য, এটা বলতে বলতে গতরাতে গ্যাসের ট্যাবলেট/বিষ দিয়ে মাচ গুলো মারি দিল। এবং তারা আরও বলেন যাদের সাথে দ্বন্দ্ব তারাই গ্যাস ট্যাবলেট/বিষ দিয়েছে। বাবলু মিয়া আরও বলেন- কাজিমুদ্দিনের ভাই আঃ খালেক আমাদের কে বলেন তার ভাই (যে আজান দেয়) তারাই এই সব কাজ করেছে বলে জানান। এলাকাবাসী ইব্রাহিম বলেন- মাসুদ সরকারের থেকে এই জমি লিজ নিয়েছে, এটা মাসুদের জমি অন্য কার জমি হতে পারে না। এ ব্যাপারে বিবাদী কাজিমুদ্দিন ব্যাপারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- মাসুদ মিয়ার সাথে জমা-জমি নিয়ে আমাদের ৫/৬ বছর ধরে দ্বন্দ্ব ও মামলা চলছে। তিনি আরও বলেন তারা হাইকোর্ট থেকে একটা ফলছ (ভূয়া) কাগজ নিয়ে এসেছেন, এটা নিয়ে তারা বলছে আমরা রায় নিয়ে এসেছি। এখন আমরা মাছ ধরব, এবং তারা থানার আতিকুর পুলিশের সাথে ভাও করে সকালে তারা মাছ ধরে। পরে ইউএনও স্যার পুলিশ পাঠে দিল, তারা এসে বলে এরা কাগজ নিয়ে এসেছে এরা মাচ মারুক, বলে তারা চলে গেল। পরে আমার মনে হল আমরা তো কাগজ দেখলাম না, হাকাউ ওদের মাছ মারার অডার দিলাম। এরপরে আমার বড় ভাইসহ ইউএনও ও মৎস অফিসে গেলাম, তাদের থেকে কাগজ নিয়ে ফটোকপি করে দেখি ওখানে তো মাছ মারার (ধরার) অডার নাই, ওখানে আছে নিষেধাজ্ঞা। পরে ওসির কাছে যাই ও কাগজ দেখাই, তখন ওসি বলে এ কাগজ তো আমাকে দেয় নাই। তখন ওসি ইউএনও কে কল দিয়ে বলে এখানে তো মাছ ধরার অডার নাই, পরে ওসি আতিকুর কে বলে মাছ ধরার অডার দিল কে। পরে আমার ছেলে বলে এখন ও মেশিন চলছে, তখন ওসি আতিকুর কে বলেন মেশিন বন্ধ কর। কাজিমুদ্দিন আরও বলেন- আমরা অভয়াশ্রমের সদস্য, আমরা গ্যাসের ট্যাবলেট/ঔষুধ দেই নাই, তারাই গ্যাসের ট্যাবলেট/ঔষুধ দিয়েছে। তিনি বলেন এখানে মাছ ধরা সবার জন্য নিষেধ, কেননা এখানে মাছটা হবে মা মাছ, বড় হয়ে বাচ্চা দিবে, তখন সব জায়গায় যাবে এবং সবাই ধরবে/মারবে বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে উপজেলা মৎস্য অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান খান বলেন- বিষ দিয়ে মাছ নিধনের বিষয়ে আমি সকালে খবর পাই এবং সাথে সাথে সেখানে যাই ও পুকুরে মরা মাছ দেখতে পাই, পরে মরা মাছ ও পুকুরের পানি নিয়ে আসি এবং ইউএনও মহোদয় কে বিষয়টি জানাই। আর আমাদের উপজেলা ও জেলা অফিসে এই বিষ পরিক্ষা করার মত তেমন কোন মেশিন নাই বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিনহাজুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন- বিষ দিয়ে মাছ নিধনের বিষয়টি আমি শুনেছি এবং এটা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।  

সর্বশেষ

জনপ্রিয়