১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

মিঠাপুকুরে ৭ কৃষক পরিবারকে আমন চাষ করতে দিচ্ছেনা দুস্কৃতিকারীরা

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
162


৪ মাস ধরে বাড়ি ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য

মিঠাপুকুর প্রতিনিধি:

মিঠাপুকুরে ৭ কৃষক পরিবার ২৩ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষাবাদ করতে পারছে না। একটি ধর্ষণ মামলার আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গ্রাম্য শালিক বৈঠকের রায়ে জমিগুলোতে ফসল ফলাতে দিচ্ছে না কতিপয় দুস্কৃতিকারী। আশেপাশের সকল জমিতে আমন ধানের চারা রোপন হলেও ওই জমিগুলো রয়েছে পতিত অবস্থায়। কয়েকদফা ধানের চারা লাগানোর চেস্টা করা হলেও হামলা শিকার হতে হয়েছে। জমি হতে তুলে দেওয়া হয়েছে ট্রাক্টর ও শ্রমিকদের। বাধ্য হয়ে জমিগুলো ফেলে রাখা হয়েছে। এরফলে ওই পরিবারগুলো নিরাপত্তা হুমকি ও চরম ক্ষতি সম্মুখিন হচ্ছে। এছাড়াও ওই দুস্কৃতিকারীদের ভয়ে প্রায় ৪ মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের খিয়ারপাড়া ফকিরপাড়া গ্রামের কৃষক ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলি আহম্মেদ। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ৭ পরিবারের প্রায় ৩০ জন সদস্য। উপজেলা নির্বাহি অফিসার ও মিঠাপুকুর থানায় অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। উল্টো সন্ত্রাসীদের ভয়ে হয়েছেন বাড়িছাড়া। অব্যাহত ভাবে প্রাণনাশের ও বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগের হুমকির মুখে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন তারা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, খিয়ারপাড়া ও ফকিরপাড়া গ্রামের প্রায় সকল জমিতে আমন ধানের চারা রোপন করা হয়েছে। চারাগুলোর বয়সও প্রায় মাসখানেক। কিছু জমিতে রয়েছে আখক্ষেত। কিন্তু এরই মাঝখানে বেশ কয়েকটি জমি পতিত রয়েছে। সেগুলোতে কোন চাষাবাদ করা হয়নি। ঘাসের পরিপূর্ণ। জমিগুলো অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলী আহম্মদ ও তার পরিবারের। এরমধ্যে আলী আহম্মদের প্রায় ৬ বিঘা, তার ভাই আবুল খায়েরের ৫ বিঘা, আব্দুল মালেকের ৪ বিঘা, লিয়াকত আলীর ২ বিঘা, বোন ফাতেমা বেগমের দেড় বিঘা, মরিয়ম বেগমের আড়াই বিঘা ও আনোয়ারা বেগমের ২ বিঘা জমিতে কোন চাষাবাদ হয়নি।

আব্দুল মালেকের ছেলে আবু সাইদ বলেন, আমরা জমিতে ধান লাগাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু স্থানীয় কিছু দুস্কৃতিকারীরা আমাদের ধান আবাদ করতে দেয়নি। তারা জমিতে পানি দিতে, ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে ও চারা লাগাতে বাধা দিয়েছে। হামলাও করেছে আমাদের উপর। বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক ও স্থানীয়  সূত্রে জানা গেছে, সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহনের পর কৃষি জমিতে ফসল ফলিয়ে জিবিকা নির্বাহ করেন আলী আহম্মদ। কিন্তু স্থানীয় আরিফুল ইসলাম লুলু, রাশেদুল ইসলাম, সেরাজুল ইসলাম, রব্বানী মিয়া, সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলামসহ কতিপয় দুস্কৃতিকারী এবারের আমন চাষ করতে দিচ্ছে না ওই ৭ পরিবারকে। স্থানীয় কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, ফকিরপাড়া গ্রামের জোবেদা বেগমের পিতৃপরিচয়হীন মেয়েকে আলি আহম্মেদের পরিচয়ে সমাজে স্বীকৃতি দিতে চায় অভিযুক্তরা। এ নিয়ে ২০০১ সালে একটি মামলা করলেও ২০০৬ সালে আলী আহম্মদের পক্ষে রায় আসে। কিন্তু ওই রায় মানতে নারাজ স্থানীয় দুষ্কৃতিকারীরা। তারা গ্রাম্য শালিসের নামে পুনরায় ওই মামলার বিচার করতে চাচ্ছে। একারণে আলী আহম্মদকে চাপে রাখতে জমিতে চাষাবাদ ও মামলা-হামলার ঘটাচ্ছে। একারণে তাদের ভয়ে প্রায় ৪ মাস ধরে বাড়িছাড়া ওই সেনা সদস্য।

ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, আলি আহম্মেদ ও তার পরিবার প্রাণভয়ে নিজের বাড়িতে আসতে পারে না, জমি চাষাবাদ করবে কিভাবে? আমরা যদি চাষ করার জন্য ট্রলি ডাকি তাহলে তারা চাকা খুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। তাদের ভয়ে কাজে কোন শ্রমিকও আসে না। এ জন্য এতোগুলা জমি পতিত পরে আছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন পাওয়ার ট্রাক্টর চালক বলেন, জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে দুস্কৃতিকারীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। ট্রাক্টর পুড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়। আমরা নিরুপায় হয়ে তাদের জমিতে চাষ করতে যাইনা।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আলী আহম্মদ বলেন, দুস্কৃতিকারীরা ৭ পরিবারের জমিজমা চাষাবাদ করতে দিচ্ছেনা। আমি বাড়িতে যেতে পারছিনা প্রায় ৪ মাস ধরে। একাধীকবার হামলা ও মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেস্টা করেছে। গ্রামে ওই দুস্কৃতিকারীর সংখ্যায় বেশি। তাদের একেকজনের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তারা আমার কাছে চাঁদাদাবি করছে, আমি নিরুপায়। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তা চাই।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয়েছিল কয়েকজন অভিযুক্ত ব্যক্তিদেন সাথে। এরমধ্যে আরিফুল ইসলাম লুলু বলেন, ২০০১ সালে একটি ধর্ষণ মামলা হয়েছিল আলী আহম্মদের বিরুদ্ধে। ২০০৬ সালে কৌশলে মামলা হতে সে খালাস পেয়েছে। একারণে গ্রামের লোকজন মিলে তার বিচার করতে ও চাপে রাখতে এমনটি করা হচ্ছে। গ্রাম হতে তাকে একঘরে করা হয়েছে। আদালতে রায়ের এতো বছর পর আপনারা গ্রাম্য শালিস বসিয়ে বিচার করতে পারেন কিনা?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আদালত ঠিকঠাক বিচার করতে পারেনি। এভাবে চাপে রাখলে, এমনিতেই সব সোজা হয়ে যাবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ সাইফুল আবেদীন বলেন, কোন জমি পতিত রাখা যাবেনা। উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। কেউ যদি চাষাবাদ করতে না দেয় তাহলে আইনের আশ্রয় নেওয়া দরকার। জরুরী ভিত্তিতে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা দরকার।

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়