১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

রংপুর বিভাগের ৩৩ আসনে ৪শতাধিকের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশী

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
361


এরশাদের ‘শূন্যতায়’ দলীয় প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে জাপায়

হারুন উর রশিদ সোহেল:

আগামী নভেম্বর মাসে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণা করা হবে এমনটাই জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এই নির্বাচনকে ঘিরে তৎপরতা বেড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের। তারা দলীয় সভা-সমাবেশ, ঘরোয়া বৈঠকসহ নানা উপায়ে নিজেদের পরিচিত করে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ,ওয়াকার্স পার্টি সহ বেশকয়েকটি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রকাশ্যে তৎপর হলেও বিএনপিসহ তাদের মিত্র সমমাননা দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আন্দোলন-সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাদের দাবি, নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে তারা অংশ নেবে। তবে একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি ও তাদের মিত্ররা আন্দোলনে রাজপথে থাকলেও তারাও ভিতরে ভিতরে নির্বাচনের প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।

এবারের নির্বাচনে রংপুর সহ বিভাগের আট জেলার ৩৩টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, জাসদ, বাসদ, কল্যাণ পার্টি,এনপিপি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, কংগ্রেস, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের ৪৩২ জন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আওয়ামী লীগের ১৬৯ জন। বিএনপির ১০৯, জাতীয় পার্টির ৬০, জামায়াতে ইসলামীর ২৫ এবং কল্যাণ পার্টি, লেবার পার্টি, জমিয়তে ইসলাম, ন্যাপসহ অন্যান্য দলের ৭০ জন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে খ্যাত রংপুর বিভাগে এবার সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ‘শূন্যতায়’ দলীয় প্রার্থীর সংখ্যা কমেছে। জামায়াতের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো। তবে দলের নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা না কাটলে জামায়াত প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোট করবেন বলে দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।

আজ প্রথম পর্বে থাকছে রংপুর জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের খবর যা নিচে তুলে ধরা হলো-----

রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া ও সিটি কর্পোরেশন আংশিক) আসনে  বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব দল থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি ছাড়াও জাতীয় পার্টি থেকে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের ভাতিজা, সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় যুব সংহতির আহবায়ক হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ মনোনয়ন চাইবেন।

আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন রংপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, গঙ্গাচড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবলু, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রেজভী, গঙ্গচড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াহেদুজ্জামান মাবু, রংপুর জেলা আহবায়ক কমিটির সদস্য ও আলমবিদিতর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোকাররম হোসেন সুজন, রংপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নেওয়াজ জোহা, রংপুর জেলা নাগরিক ঐক্যের নেতা খায়রুল আলম বাবু ও মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি অধ্যাপক রায়হান সিরাজী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নের জন্য দলের কাছে আবেদন করেবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে শিল্পপতি সিএম সাদিক রয়েছেন।

রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে  এবারে মনোনয়ন চাইবেন, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল কালাম মোঃ আহসানুল হক ডিউক চৌধুরী। তিনি ছাড়াও আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়নের চাইবেন বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ সাবেক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটু ও বদরগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র উত্তম কুমার সাহা, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি সুমনা আক্তার লিলি, জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আনিছুল হক মন্ডল, অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু, এ্যাড মোকাম্মেল হোসেন চৌধুরী, জাসদ (ইনু) থেকে কেন্দ্রীয় নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায়, বিএনপির দুই সাবেক সংসদ মোহাম্মদ আলী সরকার  ও অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি এ্যাড. গোলাম রসুল বকুল, বিএনপি নেতা আজিজুল ইসলাম, রংপুর মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. মাহফুজ উন নবী ডন, বিএনপি নেতা শিবলী রহমতউল্ল্যাহ।

রংপুর-৩ (সদর ও সিটি কর্পোরেশন আংশিক) আসনে স্বাধীনতার পর এ আসনটি জাপার দখলে রয়েছে। এ আসনের বর্তমান সাংসদ রয়েছেন প্রয়াত জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ পুত্র রাহগির আল মাহি সাদ এরশাদ। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ  এ আসনে পরপর চারবার এমপি নির্বাচিত হন। তার মৃত্যুর পর উপ নির্বাচনে তার পুত্র সাদ এরশাদ সাংসদ নির্বাচিত হন। 

জাতীয় পার্টি থেকে দলের চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের প্রার্থী হোক এটা নেতাকর্মীরা দাবি করছেন। মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও সাবেক সাংসদ এ্যাড. হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবির) পরিচালক অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, রংপুর  মহানগরের সাবেক সভাপতি সাফিউর রহমান, সাবেক  সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডল এবং বিএনপি স্থানীয়রা চায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল এখানে প্রার্থী হোক। তবে তিনি রংপুর নাকি ঢাকায় নির্বাচন করবেন তা জানা যায়নি। এছাড়াও বিএনপি থেকে প্রয়াত মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়ার কন্যা রিটা রহমান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সামসুজ্জামান সামু, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শহিদুল ইসলাম মিজু ও মহানগর বিএনপির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আশিকুর রহমান তুহিন, নিবন্ধন হারানো জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় শুরা কমিটির সদস্য ও রংপুর ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবার রহমান বেলাল, ইসলামী আন্দোলন থেকে এটিএম গোলাম মোস্তফা ও আমিরুজ্জামান পিয়াল, বাসদ থেকে আনোয়ার হোসেন বাবলু, আব্দুল কুদ্দুস, জাসদ থেকে গৌতম রায়, সাব্বির হোসেন, কল্যাণ পার্টির মোহাম্মদ ইলিয়াছ, এবি পার্টির মহানগর কমিটির সদস্য সচিব মাহবুবার রহমান মাহবুব, খেলাফত মজলিস থেকে নুর হোসেন ও তৌহিদুর রহমান মনোনয়ন চাইবেন।

রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে  আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান বানিজ্য মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি। আওয়ামীলীগ থেকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও বর্তমান যুবলীগের সহ-সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ,  কাউনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম মায়া, বারিস্টার আনোয়ার হোসেন,  জাতীয় পার্টি থেকে প্রয়াত সাংসদ শিল্পপতি করিম উদ্দিন ভরসার পূত্র যমুনা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ভরসা, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মোস্তফা সেলিম বেঙ্গল, পীরগাছা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আবু নাসের শাহ মো. মাহবুবার রহমান, বিএনপি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ও ভরসা গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত রহিম উদ্দিন ভরসার পুত্র রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি এমদাদুল হক ভরসা, কর্নেল (অব:) আব্দুল বাতেন, পেশাজীবি পরিষদ নেতা এ্যাড. সাহেদ কামাল পাটোয়ারী, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আফসার আলী ও পীরগাছা উপজেলা আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙা, ওয়াকার্স পার্টি থেকে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির জেলা সভাপতি ফয়জুল হক, বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে এমএম হক আকরাম, জামায়াত নিবন্ধন হারালেও দলটির জেলা কমিটির আমীর এটিএম আযম খান। এই নেতৃবন্দ এবারে  নিজ নিজ দলের পক্ষে প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান, তার ছেলে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রাশেক রহমান, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকার, রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি’র প্রার্থী হিসাবে উপজেলা আহবায়ক অধ্যাপক গোলাম রব্বানি, প্রভাষক একেএম রুহুল্লাহ জুয়েল, ডা. মমতাজ হোসেন, জাতীয় পার্টি থেকে জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি এসএম ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান, স্বতন্ত্রভাবে জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী ও হাফিজুর রহমান সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েছেন।

রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) আসন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুড়বাড়ি। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অথবা তার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়কে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন। এখানে আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড.শিরীন শারমিন চৌধুরী ছাড়াও রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক একেএম ছায়াদত হোসেন বকুল, শিল্পপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ ও ইঞ্জিনিয়ার সাঈদ রেজা শান্ত, বিএনপি’র জেলা আহবায়ক সাইফুল ইসলাম, পীরগঞ্জ পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম সেবু মন্ডল, সাবেক সহ-সভাপতি ফিরোজ রাব্বানী ও জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক  নূরে আলম যাদু, বিএনএফ থেকে জিএম মজনু সরকার, স্বতন্ত্র প্রার্থী তাকিয়া জাহান চৌধুরী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়