১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

ভালোমানের শিশুবান্ধব ও পরিপাটি সুন্দর দৃষ্টিনন্দন পলাশবাড়ীর শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
258


বায়েজীদ, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা):  

মনের মতো স্কুল পেলে,শিখব মোরা হেসে খেলে'। মিনা দিবসের একটি প্রতিপাদ্য। একটি বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের যদি সততা,ন‍্যায় নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা থাকে এবং বিদ‍্যালয়টিকে তিনি নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন তাহলে একটি বিদ‍্যালয়কে দৃষ্টি নন্দন করতে তার খুব একটা কষ্ট হওয়ার কথা নয়। একটি বিদ‍্যালয়কে যদি প্রধান শিক্ষক ভালো মানের তৈরী করতে চান প্রতিষ্ঠানটি আকর্ষণীয় করে তোলেন তবে অভিভাবকসহ ছাত্র-ছাত্রীদের সেই বিদ‍্যালয়ের টানবে।

সুন্দরের প্রতি আকর্ষণবোধ মানুষের চিরন্তন। তেমনি একটি সুসজ্জিত আকর্ষণীয় বিদ‍্যালয় যেমন অভিভাবকদের ঐ বিদ‍্যালয়ের প্রতি আকৃষ্ট করবে। তেমনি একটি বিদ‍্যালয়ও সুন্দর,সাজানো-গুছানো,রঙিন ও আকর্ষনীয় হলে ছোট কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীসহ সকলেই সে বিদ‍্যালয়কে পছন্দ করবে।

শিশু শিক্ষার্থীরা সুন্দরের পূজারী তারা পছন্দ করে ফুল,পাখি,প্রজাপতি, বিভিন্ন রকমারি ডিজাইনের ছবি ইত্যাদি।আর তার বিদ‍্যালয়টি যদি রঙিনভাবে অঙ্কন করে রাখা হয় এবং বিদ‍্যালয়টি যদি তার ঘর-বাড়ী চেয়ে দেখতে অনেক সুন্দর হয় তাহলে সে সেখানেই বেশিক্ষণ থাকতে ইচ্ছা পোষন করবে।

বতর্মান আ.লীগ সরকার প্রত‍্যেকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে স্লিপ,রুটিন মেরামত,শিশু শ্রেনীসহ দুর্যোগের বরাদ্দসহ বিভিন্ন বরাদ্দ দিয়ে শিশুবান্ধব প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করে শিশুদের জন্য একটি আনন্দময় শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টিতে সক্ষম করতে শিক্ষার মানোন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে। এ উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উপজীব্য বিষয় হলো বিদ‍্যালয়ের নিজস্ব বাস্তবতা এবং প্রয়োজন ভিত্তিক বিদ‍্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন। বিদ‍্যালয়ের সামগ্রিক শিখন শিখানোর পরিবেশ উন্নয়ন করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণ।শিশুদের বিষয়ভিত্তিক ধারাবাহিক মূল‍্যায়ন করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় উদ‍্যোগ গ্রহণ। পাশাপাশি বিদ‍্যালয় বহুতল ভবনসহ জনস্বাস্থ‍্য থেকে দুইতলা বিশিষ্ট ওয়াশিং রুম করে দিচ্ছেন সরকার।

এরকমই একটি ঝকঝকে পরিস্কার বিদ‍্যালয় আঙিনা,কোথাও কোনো ময়লা-আবর্জনার দেখা নেই। সুন্দর  পরিপাটি,পড়াশোনায় ভালো,সুসজ্জিত ক্লাশরুম, ছিমছাম,গুছানো,পরিচ্ছন্ন  ভালোমানের বিদ‍্যালয়ের নাম শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়। গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে দুই কিমি দুরে বিদ‍্যালয়টির অবস্থান। বিদ‍্যালয়টি প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৬৭ সালে। সরকারিকরণ করা হয় ১৯৭৩ সালে।

এর প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা এবং বতর্মান সভাপতি স্কুলেরই প্রাক্তন শিক্ষক আলহাজ্ব আজিজার রহমান। স্কুলটি সেসময় ৫২ শতক জমি দিয়ে সরকারিকরণ করা হলেও বতর্মানে স্কুলটি দাঁড়িয়ে রয়েছে ১৫ শতাংশ জমির উপর। যার কারণে স্কুলটির বিল্ডিং বার বার এসেও ফেরত যাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীদের নেই খেলার মাঠ। জায়গা অভাবে হয়নি একটি শহীদ মিনার।

পলাশবাড়ী পৌরসভার শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ‍্যুতিক পাখার শীতল বাতাসে পরীক্ষা দিচ্ছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীরা। বিদ‍্যালয়ের প্রতিটি দেয়ালে মনোমুগ্ধকর চিত্রকর্ম,যা শিশুদের সহজেই নজর কাড়ে।শুধু শ্রেনী কক্ষ নয়।আরো আছে মনিষীদের বানী।প্রাক-প্রাথমিক শ্রেনীতে রয়েছে রং বেরংয়ের খেলনা।একটি কক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনী ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিখ্যাত লেখকদের বই সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ কর্ণার।দুটি ওয়াশব্লক,পরিস্কার স্বাস্থ্যসম্মত ওয়াশরুম রয়েছে। ক্লাশরুম ৬ টি,প্রতিটি রুমে দুটি করে বৈদ‍্যুতিক পাখা লাগানো রয়েছে। ১২ জোড়া নতুন ব্রেঞ্চসহ প্রতিটি রুমে সুন্দর পরিপাটি দৃষ্টিনন্দন করে সাজানো হয়েছে ব্রেঞ্চগুলো। প্রতিটি ক্লাশরুমের দেয়ালে দেয়ালে চিত্রকর্মে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে  বঙ্গবন্ধুর ছবি,কবি -সাহিত‍্যক ও মনিষীদের ছবি,ফুল,দোয়েল পাখি,কাঁঠাল,মাছের ছবি,জাতীয় ফুল শাপলা,রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি। শিশু শ্রেনীর সুসজ্জিত ক্লাশরুম। স্কুলের একপাশে টাইচ দিয়ে তৈরী  করা হয়েছে ওয়াশিংরুম,বাথরুম,টয়লেট,রাখা হয়েছে দুটি পানি উঠানো পাম্প ,স্কুলের বিল্ডিংয়ের উপরে দুটি পানির টেংকিসহ দুটি টিউবওয়েল। বাচ্চাদের পানি খাওয়ার জন‍্য এবং হাত মুখ ধৌতকরণ এবং খাবারের জন‍্য আরও একটি আলাদা  ট‍্যাব বসানো হয়েছে। স্কুলটির এর আগে  সীমানা প্রাচীর ছিল না,স্কুলে প্রবেশের মুখে বড় ইষ্টিলের গেট করা হয়েছে।

দুপুরের পর পরীক্ষা দিতে এসেছেন চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনীর প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী। তাদের দুই,তিনজনকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, বতর্মান প্রধানমন্ত্রীর নাম এবং জাতির জনকের নাম ও শিক্ষা মন্ত্রীর নাম। তারা কোন প্রকার সংকোচ ছাড়াই সব নাম সঠিকভাবে বলতে পেরেছেন। শিশুশিক্ষার্থীদের আরও জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ১৫ আগষ্ট কি দিবস। তারা সরাসরি উত্তর দিয়েছিল জাতীয় শোক দিবস। কার শোক দিবস বলা হয়েছিল,তারা বলেছিল,জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন,শিক্ষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সরকারি বিভিন্ন বরাদ্দের অর্থের স্বচ্ছ ব‍্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে বিদ‍্যালয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়নসহ শিক্ষার গুনগতমান বৃদ্ধি সম্ভব।

জানা যায়, শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়টি কিছু বছর আগেও নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল। বিদ‍্যালটির ছিলনা সীমানা প্রাচীর,গেট,অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ছাত্র-ছাত্রী। জরাজীর্ণ একটি বিদ‍্যালয় ছিল। প্রায় প্রায় দিন ছিল অভিভাবকদের নানান অভিযোগ।

এরপর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের ২ তারিখে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম যোগদান করেন। তিনি স্কুলটিতে যোগদানের পর থেকে স্কুলটির দৈন‍্যদশা দেখে খুবই মর্মাহত হন। তারপর তিনি পরিকল্পনা করেন কিভাবে স্কুলটি একটি ভালো মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করা যায়। তিনি এস,এম,সিসহ স্থানীয় গন‍্যমান‍্য শিক্ষানুরাগী ও শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনা সভা করে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। সকলেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলামকে সহযোগীতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। এরপর বসেন উক্ত ক্লাষ্টারের উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান দোলনের সঙ্গে। তিনি তাকে স্বর্বোত্ত সহযোগিতা করবে বলে জানান। এরপর শুরু হয় তার কর্ম পরিকল্পনা।আস্তে আস্তে সরকারি বরাদ্দের যথাযথ ব‍্যবহার করে পরিকল্পনামাফিক কাজ করে বতর্মানে তার শিক্ষক সংখ্যা ৭ জন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জন নিয়মিত। এর বাহিরেও কিছু অনিয়মিত রয়েছে। বতর্মান তার স্কুলের একটি বিল্ডিং ও শহীদ মিনার ছাড়া আর কোন জিনিসের অভাব নেই।

শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম জানান,আমার বতর্মান সহকারী শিক্ষকেরা খুবই আন্তরিক।তারা ক্লাশে নিয়মিত থাকেন। স্কুল টাইমের আগে তারা স্কুলে এসে উপস্থিত হন। আমার এস,এম,সি কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আজিজার রহমান তিনিও অত‍্যান্ত ভালো মনের মানুষ। তিনিই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও জমিদাতা এবং প্রধান শিক্ষক ছিলেন। মাঝে মাঝে এসে সভাপতি সাহেব স্কুলে ক্লাশ নেন। বরাদ্দকৃত অর্থের প্রতি তার কোন লোভ নেই। আমার ক্লাষ্টারের উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা  দোলন স‍্যারসহ সভাপতির সহযোগিতা নিয়ে আমি স্কুলটির অবকাঠামোগত ব‍্যাপক উন্নয়ন করেছি। বতর্মান আমার স্কুল তিনতলা বিশিষ্ট ভবন ও শহীদ মিনার প্রয়োজন। পাশাপাশি জমি কমের কারণে বাচ্চাদের খেলার মাঠের অভাব।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আজিজার রহমান বলেন,স্কুলটি বতর্মান একটি ভালো মানের স্কুলে পরিণত করেছি। এটি করতে গিয়ে আমাদের অনেক কাঠ-খড় পোড়াতে হয়েছে। আমাদের প্রধান শিক্ষক খুব ভালো মানুষ। ওনার চেষ্টাতেই স্কুলটি এতোদূর এগিয়ে নিতে পেরেছি।

এ ব‍্যাপারে ওই ক্লাষ্টারের দায়িত্বে থাকা  উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান দোলন বলেন, শিমুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ‍্যালয়টি উপজেলার অন‍্যতম একটি দৃষ্টিনন্দন স্কুল। আমি ওই স্কুলে নিজেই ক্লাশ নিয়েছি। এ স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীরা অত‍্যন্ত মেধাবী। স্কুলটির শিক্ষক -শিক্ষিকারাও শিশুদের প্রতি অত‍্যন্ত আন্তরিক। উপজেলার বিভিন্ন স্কুল এ স্কুলটি দেখে তারাও উদ্বুদ্ধ হবে বলে আমি মনে করি। বিদ‍্যালয়টির প্রতি আমাদের বিশেষ সুদৃষ্টি আছে। ধাপে ধাপে অবশ্যই বাকী কাজ করার চেষ্টা করব।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়