১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

তিস্তার ভাঙনরোধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ,কলাগাছ,আর বিন্না লাগিয়ে ভাঙনরোধ

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
113


সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)প্রতিনিধি:

প্রতিবছর বর্ষা এলেই রাক্ষুসে হয়ে ওঠে তিস্তা। গিলে খায় নদীপাড়ের ফসলি জমি, বসতঘরসহ নানা স্থাপনা। তিস্তার এই ভাঙন রোধে নদীপাড় ও বাঁধের ধারে কলাগাছ, বিন্না, ঢোলকলমি আর ঘাস লাগিয়ে রক্ষা পেলেন গাইবান্ধা সুন্দরগঞ্জের চরাঞ্চলের তিন গ্রামের মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নদ-নদী বেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে তিস্তার ভাঙন রোধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে স্থানীয় বাসিন্দারা। বছরখানেক আগে কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকশন গ্রুপের (ক্রাগ) সদস্যরা নদীপাড় আর বাঁধে কলাগাছ, বিন্নার থোপ, ঢোলকলমি ও ঘাস লাগায়। এ কাজের সুফলও মিলেছে বেশ। এবারের বন্যায় ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে ভাটি কাপাসিয়া, ভাটি বুড়াইল ও রাজার চরের ফসলি জমি, নানা স্থাপনা এবং বাড়িঘর। এতে স্বস্তি ফিরে এসেছে এই চরাঞ্চলের কয়েক হাজার মানুষের।

স্থানীয়রা জানান, কাপাসিয়া ইউনিয়নের চরাঞ্চলে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের ফ্লাড রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের সহযোগিতায় টেকসই বন্যা প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটির সদস্যরা স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে ভাটি কাপাসিয়ায় তিস্তার শাখা নদীর ১ কিলোমিটার পাড়ে গত বছর কলাগাছ, বিন্নার থোপ, ঢোলকলমি ও ঘাস লাগায়। ফলে নদীর ভাঙন রোধ হয়েছে। তবে এটি স্থায়ী কোন সমাধান নয়। এই চরাঞ্চলগুলোকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

স্থানীয়দের দাবি, তিস্তা নদীর ভাঙনরোধে জরুরি ভিত্তিতে খনন করলে চরাঞ্চলে স্থায়ীভাবে কৃষি আর মৎস্য ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার সংযোগস্থলের এক কিলোমিটার পূর্ব পর্যন্ত নদী খনন, নদীর দুই তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং করে যে মাটি উত্তোলন করা হবে তা নদীর দু'পাশে ভরাট করলে ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে।

তারা মিয়া নামের চরাঞ্চলের বাসিন্দা বলেন, তিস্তার কারণেই বর্ষা-খরা দুই মৌসুমেই চরম দুর্ভোগের সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হয়। আমরা সরকারের কাছ থেকে এখন আর কোনো রিলিপ চাই না। আমরা এই রাক্ষসী তিস্তা নদীর করাল গ্রাস থেকে স্থায়ীভাবে বাঁচতে চাই। নদীর ভাঙনের কারণে আমরা স্থায়ীভাবে কোথাও মাথা গুঁজে থাকতে পারি না। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে চরাঞ্চলের মানুষ একেবারেই বঞ্চিত। স্থায়ীভাবে তিস্তা নদীর ভাঙনরোধ করতে পারলে চরাঞ্চলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দ্রুত পৌঁছাবে। তাই প্রয়োজন নদীর খনন।

ভাটি কাপাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা শেফালী বেগম বলেন, আমরা এলাকার নারী-পুরুষ সবাই মিলে নদীপাড়ে ১ কিলোমিটার এলালাজুড়ে কলাগাছ, বিন্নার থোপ, ঢোলকলমি লাগিয়েছি। এ বছর কিছুটা হলেও ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছি।

ভাটি বুড়াইল কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স এ্যাকশন গ্রুপের (ক্রাগ) সভাপতি মো. নুর হোসেন বলেন, এভাবে প্রাকৃতিক সম্পদ দিয়ে যে তিস্তার ভাঙন রোধ করা যাবে তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে এ কাজটি করেছিলাম। এর সুফল পাওয়ায় আমরা সবাই খুশি।

ভাটি কাপাসিয়া কমিউনিটি রেজিলিয়েন্স অ্যাকশন গ্রুপের (ক্রাগ) সভাপতি মো. রাজা মিয়া বলেন, গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের সহযোগিতায় ক্রাগের সদস্যরা ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কলাগাছ আর বিন্নার থোপ লাগিয়েছি৷ এটির কারণেই তিন চর এবার ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। এটি কোন স্থায়ী সমাধান নয়, জরুরি ভিত্তিতে নদী খনন করে চরাঞ্চলগুলোকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে হবে। ফ্লাড রেজিলিয়েন্স প্রজেক্টের ফিল্ড অফিসার (এফও) ডলি সুলতানা বলেন, বন্যা সহনশীল প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয়রা তিস্তার ভাঙন থেকে বাঁচতে নদীপাড়ে কলাগাছ, বিন্না, কলমি ও ঘাস লাগিয়েছে। এর সুফল পাওয়ায় এ কমিউনিটির লোকজন রাস্তার ধারেও কলাগাছ লাগিয়েছে। তারাই স্ব-প্রণোদিত হয়েই এসব কাজ করেছে, আমরা শুধু তাদেরকে সাপোর্ট দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এই কমিউনিটির অনুপ্রেরণার অন্য কমিউনিটিগুলোর বাসিন্দারাও এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবে বলে মনে করি। এ বিষয়ে কাপাসিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মঞ্জু মিয়া বলেন, বছর খানেক আগে নদীর ধারে ১কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কলাগাছ আর বিন্না লাগিয়ে এবছর ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে ওই গ্রামের মানুষ। তবে এটি স্থায়ী সমাধান নয়। চরাঞ্চল রক্ষার্থে স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়