২১০০ সালে কমবে সব দেশের জন্মহার, সতর্কবার্তা গবেষকদের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
২০০০ শতাব্দীর শেষ দিকে প্রায় সব দেশের জন্মহার কমে যাবে বলে এক গবেষণায় সতর্ক করা হয়েছে। ফলে দেশগুলোর জনসংখ্যার ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হবে। ২১০০ সালের মধ্যে ২২৪টি দেশের ১৯৮টিতে জনসংখ্যা কমে আসবে। একই সময়ে দরিদ্র্য দেশগুলোতে জন্মহার বাড়বে। খবর আলজাজিরা।
বেষণাটি পরিচালনা করে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভালুয়েশন (আইএইচএমই)। যা গত সোমবার (১৮ মার্চ) স্বাস্থ্য বিষয়ক সাপ্তাহিক জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত হয়।
গবেষণা প্রতিবেদেন বলা হয়, ২১০০ সালে জন্ম নেওয়া প্রতি দুইজন শিশুর মধ্যে একজন আফ্রিকার সাব—সাহারা অঞ্চলে জন্মাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর শুধুমাত্র সোমালিয়া, টোঙ্গা, নাইজার, চাদ, সামোয়া ও তাজিকিস্তানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সঠিক মাত্রায় থাকবে।
আইএইচএমই’র প্রধান গবেষণা বিজ্ঞানী এবং গবেষণাপত্রটির সহকারী লেখক নাটালিয়া ভি ভট্টাচার্য বলেন, ‘এর প্রভাব বিশাল। প্রজনন হার ও জীবিত শিশু জন্মের এই প্রবণতাগুলো ভবিষ্যতে বিশ্ব অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে পুনর্বিন্যাস করবে। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্ষমতার ভারসাম্যকে পুরোপুরি বদলে দেবে এবং সমাজ পুনর্গঠনের প্রয়োজন হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অভিবাসন ও বৈশ্বিক সহায়তা সংস্থাগুলোর চ্যালেঞ্জ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি এবং আরও জটিল হতে চলেছে। যখন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে অভিবাসীদের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা চলছে। ঠিক তখন আফ্রিকার সাব—সাহারা অঞ্চলে জন্মহার দ্রুত গতিতে বাড়ছে।’
এই লেখক আরও বলেন, ‘জন্মহার বৃদ্ধি’ ও ‘জন্মহার হ্রাস’ পাওয়ার কারণে জনসংখ্যাগত পরিবর্তন হবে, যা বিভাজনের দিকে নিয়ে যাবে। তখন ধনী দেশগুলো তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে লড়াই করবে। বিপরীতে দরিদ্র দেশগুলো কীভাবে তাদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে কাজে লাগাবে তা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে।’
উচ্চ জন্মহারের কারণে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা সম্ভাব্য মানবিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ঝুঁকিগুলো মোকাবিলা করা আফ্রিকার সাব—সাহারা দেশগুলো জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে বলেও উল্লেখ করেন গবেষক নাটালিয়া ভি ভট্টাচার্য।
তিনি আরও বলেন, ‘জন্মহারের এই বিশাল পরিবর্তন মূলত এই অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমানো ও স্বাস্থ্যসেবা পরিকাঠামো উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়ার ওপর জোর দেয়। একইসঙ্গে শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস করা পাশাপাশি চরম দারিদ্র্য দূর করা, নারীদের প্রজনন অধিকার, পরিবার পরিকল্পনা এবং নারী শিক্ষা নিশ্চিত করা প্রতিটি সরকারের অগ্রাধিকারমূলক পদক্ষেপ হওয়া উচিত।’
গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ, ইনজুরি অ্যান্ড রিস্ক ফ্যাক্টরস স্টাডির অংশ হিসেবে ১৯৫০ থেকে ২০২১ সালের বিভিন্ন সমীক্ষা ও আদমশুমারিসহ নানা তথ্যের উপর ভিত্তি করে গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়েছে। এক দশক ধরে চলা এই গবেষণায় ১৫০টির অধিক দেশের আট হাজারের বেশি বিজ্ঞানী জড়িত ছিলেন।