মিঠাপুকুরে ভারপ্রাপ্ত মাদ্রাসা সুপারের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ
![](https://www.amader-protidin.com/storage/postpic/1712401018.webp)
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুরে অনিয়ম দূর্নীতিতে ভরে গেছে মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদ্রাসা। ভারপ্রাপ্ত সুপার একের পর এক দুর্নীতির কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষা ব্যবস্থা। একক আধিপত্য বিস্তার করে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষকদের বরখাস্ত, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি বরাদ্দ লুটপাট, প্রতিষ্ঠানের চাষের জমি থেকে আয়, প্রতিবছর মাদরাসার মাঠে গরুর হাট বসা থেকে প্রাপ্ত আয় লুটপাট এবং গোপনে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত সুপারের বিরুদ্ধে।
উপজেলার রানীপুকুর ইউনিয়নের মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদরাসা অনিয়ম-দূর্নীতিতে ভরপুর হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে আরবী শিক্ষক প্রধানের দায়িত্বে থাকার নিয়ম থাকলেও মাদরাসাটিতে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে রয়েছেন এক বিএসসি শিক্ষক। প্রতিষ্ঠানটিতে সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হওয়ায় উর্ধতন এই কর্মকর্তাকে কৌশলে ভুল বুঝিয়ে একক আধিপত্য বিস্তার করে অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষকদের বরখাস্ত, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি বরাদ্দ লুটপাট, প্রতিষ্ঠানের চাষের জমি থেকে আয়, প্রতিবছর মাদরাসার মাঠে গরুর হাট বসা থেকে প্রাপ্ত আয় লুটপাট এবং গোপনে কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে থাকা মোহসীনের বিরুদ্ধে। এদিকে স্থানীয়দের ত্যাগ ও অর্থায়নে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হলেও এখন কমিটিতে জায়গা হচ্ছেনা ত্যাগীদের। এমনকি মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠাতার জায়গা দখলে নিয়েছেন ফজলুল করিম বেগ। তিনি তৎকালীন ইউএনওর দায়িত্বে থাকায় নিজে প্রতিষ্ঠাতা হয়ে তার দুই ছেলে সিহাব এবং সায়রাজকে মাদরাসার নামের সাথে সংযুক্ত করে দিয়ে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেন মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদরাসা। অথচ মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠায় জমি দাতাসহ অর্থ এবং শ্রম দিয়েছেন স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা। এখন স্থানীয়দের বাদ দিয়েই মনগড়া কমিটি দিয়ে চলছে এই প্রতিষ্ঠান।
একদিকে উপজেলার শীর্ষ কর্মকর্তা ইউএনও ব্যস্ততম এই কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি অপরদিকে প্রতিষ্ঠাতা বহিরাগত হওয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে বাঁধার সৃষ্টি হয়েছে।আর এর প্রভাব গিয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীদের উপর। এবতেদায়ী প্রথম শ্রেণি থেকে দাখিল ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মাদরাসাটিতে আশেপাশের চার গ্রামের কমপক্ষে ৩'শ থেকে ৪'শ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করার সম্ভাবনা থাকলেও এখন নানা অনিয়ম-দূর্নীতির কারণে প্রতিষ্ঠানটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। ফলে কোনরকম খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। একসময়ে উপজেলার স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির করুণ দশায় এবার ফুঁসে উঠেছে স্থানীয় সুশীল সমাজ। প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন করা হয়েছে।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) এলাকাবাসীর আয়োজনে মাদরাসা মাঠে মুক্ত আলোচনা শেষে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন শতশত এলাকাবাসী। তারা মাদরাসাটি রক্ষায় কমিটিতে স্থানীয়দের সম্পৃক্ততার পাশাপাশি বরখাস্ত করে রাখা সহকারী সুপারকে স্বপদে বহাল করার দাবি জানান। সেইসাথে বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্বে থাকা মোহসীন মিয়ার বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, অর্থ আত্মসাৎ এবং আধিপত্য বিস্তারের বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবি জানান মানববন্ধনে অংশ নেয়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।
মাদরাসাটির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নাছরুল ইসলাম বলেন, সম্প্রতি মাদরাসায় নিরাপত্তাকর্মী ও আয়া পদে দুজন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের কথা বলে তাদের কাছ থেকে ২১ লাখ টাকাও নেন সুপার। তাদের নিয়োগ সম্পূর্ণ হলে টাকার কি হবে জানতে চাইলে সুপার হুমকি দিয়ে বলেন আমি যা করবো তাই হবে রেজুলেশনে তোমার মতো সদস্যের স্বাক্ষর না হলেও সমস্যা নাই। এভাবেই অভিভাবক সদস্যদের অপমান করা হয়। বর্তমান কমিটিতে সভাপতি ইউএনও, প্রতিষ্ঠাতা সাবেক ইউএনও, সদস্য সচিব ভারপ্রাপ্ত সুপার, শিক্ষক প্রতিনিধি ২ জন সুপারের লোক। আমরা ২ জন অভিভাবক অনিয়ম দূর্নীতির প্রতিবাদ করেও কিছু হয়না। এমনকি রেজুলেশনে আমাদের স্বাক্ষর নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনা সুপার।
ম্যানেজিং কমিটির আরেক সদস্য সোহেল মিয়া বলেন, সম্প্রতি নিয়োগ দেয়া আয়া রিফা মনি চাকুরিতে যোগদানের ৩ মাস পর পরকীয়ার কারণে নিরুদ্দেশ হয়। দীর্ঘ ১৮ মাস পর সে আবার ফিরে আসলে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহসীন কমিটির লোকজনকে কোনকিছু না জানিয়ে সেই আয়াকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে পূর্ণবহাল করেন। অথচ একই মাদরাসার সহকারী সুপারকে ৬ বছর ধরে বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। কারণ সহকারী সুপার বহাল হলে তাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের পদ ছাড়তে হবে। আয়াকে কিভাবে পূর্ণবহাল করা হলো আমরা জানিনা। এতো অন্যায় আর অনিয়ম মানা যায়না।
বরখাস্তে থাকা সহকারী সুপার মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, মাদরাসার সুপারিনটেডেন্ড মৃত্যুবরণ করার পর আমাকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে সকল নিয়মকানুন মেনে সুপারিন্টেন্ডেন্ট নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া হলে ১০ জন প্রার্থী আবেদন করেন। সেই সময় দায়িত্বে থাকা সভাপতি তার পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগের পায়তারা শুরু করলে বিষয়টি প্রকাশ পায়। পরে স্থানীয় অভিভাবক ও গ্রামবাসীরা নিয়োগ পরীক্ষার দিন আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়। সেই প্রতিশোধ নিতে তৎকালীন সভাপতি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলেও আমার বরখাস্ত তুলে নেওয়া হয়নি। সেই থেকে আজ অবধি আমি মানবেতর জীবনযাপন করছি। আমার কি অপরাধ? আমিতো প্রতিষ্ঠানের অমঙ্গল চাইনি।
মাদরাসাটি থেকে সদ্য অব্যাহতি দিয়ে অন্যত্র চাকরি নেওয়া শিক্ষক আব্দুর রউফ বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সুপার শিক্ষকদের সাথে এতটাই অমানবিক আচরণ করেন যে, কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। যদি কোন শিক্ষক ন্যায়সংগত কথাও বলে তাকে বরখাস্ত করার হুমকি দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানকে ভারপ্রাপ্ত সুপার নিজের পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে সবসময় নিজের দাপট খাটান।
প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা গ্রামে গ্রামে চাঁদা কালেকশন করে এই মাদরাসা গড়ে তুলেছি। এখানে চার গ্রামের মানুষের অবদান আছে। অথচ যারা জমি দান করেছেন এখন তারাও বঞ্চিত। গোপনে বর্তমান সুপারের মনোনীত লোকজন দিয়ে কমিটি করা হয়। প্রশাসনের লোক জড়িত থাকায় কেউ মুখ খোলার সাহস পায়না। কিন্তু আর কত? প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একটা ক্লাসে একজন ছাত্র ক্লাস করে! এমন পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায়না।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত সুপার মোহসীন মিয়া অভিযোগ অস্বীকার করেন।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার জাহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মোলং শিহাব সায়রাজ দাখিল মাদরাসার সভাপতি বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, অভিযোগ তদন্ত করে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।