নিজ সন্তানকে “জারজ সন্তান”বলে গালি দেয়ায় স্ত্রী ও কন্যাকে পিটিয়ে হত্যা
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
নিজ সন্তানকে “জারজ সন্তান” বলে গালি দেয়ায় স্ত্রী মর্জিনা বেগম (৩০) ও ৬ বছর বয়সের কন্যা সন্তান আফরিন জান্নাতকে পিটিয়ে হত্যা করেছে শহীদুল ইসলাম নামে এক কাঠুরিয়া। এই ঘটনায় পুলিশ কাঠুরিয়া শহীদুল ইসলাম (৩৭) কে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার হেয়াতপুর চিনিরচড়া গ্রামে। রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ এক প্রেস ব্রিফিং—এ এমন তথ্য জানান।
নিহত মর্জিনা বেগম (৩০) নবাবগঞ্জ উপজেলার হেয়াতপুর চিনিরচড়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের স্ত্রী এবং আফরিন জান্নাত (৬) শহীদুল—মর্জিনা দম্পত্তির সন্তান। এই ঘটনায় আহত অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের আরেক সন্তান মোঃ আল আমিন (১৩)।
জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিং—এ পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ জানান, পেশায় কাঠুরিয়া শহীদুল ইসলাম । গত শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শহীদুল ইসলাম প্রতিদিনের মত কাজ থেকে বাড়িতে আসে। এসময় সন্তানদের তাদের দুই সন্তান আলআমিন (১৩) ও আফরিন জান্নাত (৬) মোবাইলে গান শোনা নিয়ে বিরক্ত হয় স্ত্রী মর্জিনা বেগম। বিরক্ত হয়ে মর্জিনা বেগম তাদের সন্তানদের “জারজ সন্তান” বলে গালি দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে স্বামী শহীদুল ইসলাম। এক পর্যায়ের রান্নার কাজে ব্যবহৃত বাঁশের মোটা খাটিয়া দিয়ে স্ত্রী মর্জিনা বেগমের মাথায় আঘাত করলে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এসময় তাদের সন্তানরা এগিয়ে আসলে কন্যা আফরিন জান্নাত ও পুত্র আল আমিনকেও বাঁশের ওই খাটিয়া দিয়ে আঘাত করে। এতে তারা গুরুতর জখম হয়।
নিজের অপরাধ ঢাকতে শহীদুল বাইসাইকেল নিয়ে বাজারে যায় এবং পরে সে আবার বাড়ি ফিরে এসে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে। পরে প্রতিবেশিরা এসে তাদের উদ্ধার করে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। এসময় গৃহবধু মর্জিনা বেগমকে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য দুই সন্তানকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কন্যা শিশু আফরিন জান্নাত রোববার সকাল ৬টায় মারা যায়। অপর সন্তান আল আমিন এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং তারও অবস্থাও আশঙ্কাজনক। পুলিশ শহীদুলের আচরনে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার কথা স্বীকার করেছে জানিয়েছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত শহীদুল দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার হেয়াতপুর চিনিরচড়া গ্রামের সোহরাব আলীর ছেলে। রোববার বিকেলে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
এদিকে এই ঘটনায় নিহত মর্জিনা বেগমের মা গোলাপী খাতুন রোববার নবাবগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।