পলাশবাড়ীতে তাপদাহে কষ্টে নিম্ন আয়ের মানুষেরা
বায়েজিদ, পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা):
তীব্র গরমে সারা দেশের মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। গতকাল রবিবাবের চেয়ে আজ গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বেড়েছে। পলাশবাড়ীতে আজ (সোমবার) তাপমাত্রা ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গতকালের ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে বেশি।
চলমান এ তাপদাহে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষরা। প্রখর তাপমাত্রা উপেক্ষা করেও রাস্তায় বের হচ্ছেন। বিশেষ করে রিক্সা চালকরা পড়েছেন মহা বিপদে কারণ ইট পাথরের নগরী যাত্রী বহুল মোড়গুলোতে নেই গাছপালা। দীঘ অপেক্ষা করে যাত্রী ধরতে খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের। তারপরেও থেমে নেই নিম্ন আয়ের এসব মানুষের রিক্সারপ্যাটেল।
রবিবার (২০এপ্রিল) গাইবান্ধার পলাশবাড়ী কালীবাড়ি,চৌমাথা,জনতা ব্যাংক মোড়, শিল্পী হোটেলে,তিনমাথা, ঈদগাহ মাঠ, রাব্বীর মোড়, উপজেলা গেট,এসএমবি স্কুল,ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এই স্থানগুলো জনবহুল হাওয়ায় রিক্সা চালকদের ভিড় লেগেই থাকে।
বেশ কয়েকদিন ধরে চলা প্রচন্ড তাপদাহের মধ্যেও এইসব স্থানে রিক্সা চালকদের রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কারণ গরমের আগের তুলনায় সড়কের যাত্রী সংখ্যা তুলনামূলক কম। তাই যাত্রী ধরতে কাঠফাটা রোদের মাঝে চালকরা দাঁড়িয়ে থাকছেন। কেউ আবার রোদ থেকে বাঁচতে ছাতা নিয়ে দাঁড়াতে দেখা গেছে।
একাধিক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে কয়েকদিন ধরে আয় বাড়ানো সঙ্গে সঙ্গে রোদের তাপ বাড়তে থাকে এর আগের মত ইনকাম হচ্ছে না আগে তুলনায় যাত্রী সংখ্যা কম বিশেষ করে একবার যাত্রী বের হওয়ার পর শরীর ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছে তাই কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে শরবত বা ঠান্ডা পানি খেয়ে রাস্তায় বের হতে হয় এতে ইনকাম কমে যাচ্ছে।
রাব্বির মোড়ে যাত্রির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সা চালক মিলনের (৩৬) সাথে কথা হলে তিনি জানা, ১৫ মিনিট ধরে যাত্রির জন্য এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রোদে গা পুরে যাওয়ার উপক্রম। তবুও জীবন বাঁচানোর জন্য রোদকে সহ্য করতেই হয় আমাদের। নয় তো সংসার চলে না। শহরের সবগুলো মোরের কোন মোড়েই গাছপালা খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রাম হলে কাজের ফাঁকে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেওয়া যায়। কিন্তু শহরে এগুলো সম্ভব নয়।
এদিকে শিল্পী হোটেলের কাছ থেকে যাত্রী নিয়ে উপজেলা গেটে আসেন দুদুমিয়া (৪৮) তাকে দেখা গেলো পুরো শরীর ঘামে ভেজা। নিজের কাছে থাকা গামছা দিয়ে ঘাম মুছছেন আরেক হাতে টাকা নিচ্ছেন। টাকা নেয়ার পর রাস্তার পাশে আখের রস বিক্রি করা লোকের কাছে, সেখানে গিয়ে ১০ টাকা দিয়ে এক গ্লাস আখের রস খেলেন। এভাবে চলছে আমাদের জীবন।
রিক্সাচালক বিদ্যুৎ বলেন, মহা সড়কের দু'পাশে বিল্ডিং গুলো ভাঙ্গার আগে গরমের সময় বিভিন্ন পরিচিত দোকানে দারিয়ে থাকা যেতো। কিন্ত ফোর লেনের কাজ শুরু হওয়ার কারণে সকল দোকান, বিল্ডিং ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে, তাতে করে কোন পরিচিত দোকান আর নাই, তাই খুব কষ্ট হয়েছে। গরমের সাথে সাথে প্রচুর ধুলা হয়েছে সকল বিল্ডিং ভাঙ্গার কারণে। যা আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়েছে।
পথচারী নিক্সন বলেন, একদিকে যেমন প্রচন্ড গরম অন্য দিকে শিল্পী হোটেল থেকে সিএমবি পর্যন্ত রাস্তার চারপাশে বিল্ডিং ভাঙ্গার কারণে এবং মাটি খুড়ার কারনে প্রচুর ধুলা উড়ে। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও পৌর সভা থেকে যদি দিনে সকল ও বিকালে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা যায় তাহলে যেমন ধূলা কমবে, তেমনি রাস্তাও ঠান্ডা থাকবে।
আলহামরা কাউন্টার মাস্টার আশরাফুল বলেন, রাস্তায় ভাঙার আগে আমাদের নিজস্ব রুম ছিল যেখানে রোদ বৃষ্টির মধ্যে যাত্রীরা আমাদের রুমে বসে রেস্ট নিতে পারত। কিন্তু এখন রাস্তা কাজের জন্য সকল কাউন্টার ভেঙ্গার কারণে আমরা নিজেরাই ছাতা দিয়ে বসে আছি। যাত্রীদের কিভাবে সেবা দিব। এখনও ঈদের যাত্রীরা কর্মস্থলে ফিরছেন ভোর থেকে অনেক রাত পর্যন্ত। পাশাপাশি একটা গাড়ি চলে গেলে যে পরিমাণ ধুলা উড়ে এতে করে আমাদের অনেকের বিভিন্ন ধরনের কষ্ট হচ্ছে।