২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ - ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ - 06 December, 2024

অব্যাহত তীব্র দাবদাহে চরম ক্ষতির মুখে টমেটো চাষী ও ব্যবসায়ীরা

আমাদের প্রতিদিন
7 months ago
338


দিনাজপুরে তীব্র গরমে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টমেটো :পঁচা টমেটো ফেলে দিচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা

দিনাজপুর প্রতিনিধি :

অব্যাহত তীব্র তাপপ্রবাহ আর প্রখর রোদের কারনে এবার চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে দিনাজপুরের গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষী ও ব্যবসায়ীরা। টমেটো আবাদ করে লাভ তো দুরের কথা উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না চাষীরা। আর কম দামে টমোটো কিনেও তীব্র গরমে বেশীরভাগ টমেটো পঁচে যাওয়ায় কেনা দামেই টমেটো বিক্রি করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

প্রতবছরেই আবাদ করে বেশ লাভবান হওয়ায় দিনাজপুরসহ এই অঞ্চলে দিনে দিনে বাড়ছে গ্রীস্মকালীন টমেটোর আবাদ। গতবছরও বেশ লাভ পাওয়ায় এবারও টমেটো চাষে বেশ লাভের স্বপ্ন দেখছিলো তারা। কিন্তু এ যাবতকালের দীর্ঘস্থায়ী অব্যাহত তাপদাহ টমেটো চাষীদের সেই লাভের ভেঙ্গে স্বপ্ন চুরমার করে দিয়েছে। লাভ তো দুরের কথা এখন উৎপাদন খরচও তুলতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন টমেটো চাষীরা।

দিনাজপুর সদর উপজেলার বলতৈড় গ্রামের টমেটো চাষী মোঃ কামরুজ্জামান। গত বছর এক বিঘা জমিতে গ্রীস্মকালীন টমেটো চাষ করে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ৬৫ হাজার টাকা লাভ করেছিলেন। কিন্তু এবার তার উল্টো অবস্থা। মোঃ কামরুজ্জামান জানান, এবার এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করতে গিয়ে তার খরচ হয়েছে ৭০ হাজার টাকা। টমেটো পেয়েছেন ১৫০ মন। গত কয়েক দিনে এই টমেটো বাজারে বিক্রি করেছেন প্রতিমন ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে। এতে তিনি টমেটো বিক্রি করেছেন ৫৫ হাজার টাকা। লাভ তো দুরের কথা এক বিঘা জমিতে টমেটো আবাদ করে তার ক্ষতি ১৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, অব্যাহত তীব্র গরম ও প্রখর রোদের কারনে এবার অনেক টমেটো নষ্ট হয়ে গেছে।

একই গ্রামের টমেটো চাষী শামীম পারভেজ জানান, দেড় বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করেছেন তিনি। যে দামে টমেটো বিক্রি করছেন, তাতে উৎপাদন খরচই উঠবে না। তিনি বলেন, টমেে্টা সাধারনত একবারে বড় হয়না। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে পাকা টমেে্টাগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করেন, আর ক্রমান্বয়ে একই গাছের ছোট টমোগুলো বড় হয়। এভাবে একটি জমির টমেটো একমাস ধরে সংগ্রহ করে ক্রমান্বয়ে বাজারে বিক্রি কেও থাকেন। কিন্তু এবার তীব্র গরম আর প্রখর রোদের কারনে গাছে বেশীদিন টমেটো রাখা যাচ্ছে না। রাখলে গাছেই প্রখর রোদ ও আর তীব্র গরমে গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে টমেটো। তাই একমাসের স্থলে সাত দিনেই টমেটো বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিরূপ আবহাওয়ার কারনে সব কৃষকের একই অবস্থা হওয়ায় বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ছে অস্বাভাবিক। আর সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম পাচ্ছেন না তারা।

বলতৈড় গ্রামের টমেটো চাষী নুর ইসলাম জানান, অতিরিক্ত গরমের কারনে পাকা টমোগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, আর ছোট টমেটোগুলো বড় হতে পারছে না। এ কারনে ফলনও কম হচ্ছে। একদিকে ফলন কম, অন্যদিকে দাম কম। এতে উভয় সংকটে পড়ে এবার টমেটো আবাদ করে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দিনাজপুরের প্রধান টমেটোর বাজার সদর উপজেলার গাবুড়ার হাটে টমেটো বিক্রি করতে এসে টমেটো চাষী জিকরুল হক জানান, গতবছর এই সময়ে যে টমেটো বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা মন দরে। সেই টমেটো এবার বিক্রি করতে হচ্ছে ৩৫০ টাকা মন দরে। টমেে্টা বিক্রি করে হতাশ হয়ে তিনি বলেন, এই ক্ষতি পোষাবো কি করে?

উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বড় টমেটোর বাজার দিনাজপুর সদর উপজেলার গাবুড়ার হাটে শুক্রবার গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর আমদানী হয়েছে টমেে্টার। গোটা হাটে যেনো তিল ধারনের জায়গা নেই। হাটে চাহিদার তুলনায় প্রচুর সরবরাহ হওয়ায় দাম নেমে এসে অর্ধেকেরও কমে। যে টমেটো গতবছর বিক্রি হয় প্রতি মন ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা দরে, সেই টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা দরে।

তবে গতবছরের তুলনায় এবার দাম অর্ধেকেরও কম দামে টমেটো কিনেও লোকসানের মুখে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজবাড়ী জেলা থেকে আসা টমেটো ব্যবসায়ী মোঃ শফিউদ্দীন জানান, এই বাজারে প্রতিদিন টমেটোর চাহিদা ১৫০ ট্রাক (২১০০ টন)। কিন্তু বাজারে উঠেছে ৩০০ ট্রাক অর্থ্যাৎ ৪২০০ টনেরও বেশী। ক্রেতা কম থাকায় দাম কমে এসেছে। তিনি বলেন, তীব্র গরমের কারনে কেনা টমেটো পঁচে যাচ্ছে। কেনার পরও অনেক টমেটো পচে যাওয়ায় ফেলে দিতে হচ্ছে। এতে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।

ঢাকা থেকে আসা টমেটো ব্যবসায়ী নাসিরউদ্দীন জানান, টমেটো কিনে ঢাকায় আড়তে পৌছতে পৌছতেই গরমের কারনে বেশীরভাগ টমেটো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তীব্র এই গরমের কারনে এবার টমেটোর ব্যবসা করতে এসে চরম লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানালেন তিনি।

শুক্রবার গাবুড়ার হাটের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, যেখানে—সেখানে পঁচা টমেটো ফেলে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। আবার কোন কোন কৃষক টমেটো বিক্রি করতে না পেরে বাজারের পাশে ফেলে দিয়ে গেছে। হাটের চারিদিকে পঁচা টমেটোর স্তুপ জমে গেছে।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান বিরূপ এই আবহাওয়ায় টমেটো চাষীদের ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, প্রকৃতির উপর তো কারও হাত নেই। আর ঈদের পর সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এবং গরমের কারনে টমেটো চাষীরা দাম কিছুটা কম পাচ্ছে। তবে বি্রূপ এই আবহাওয়া কেটে গেলে চাষীরা ভালো দাম পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। উপ—পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান জানান, দিনাজপুরে এবার ৯৬০ হেক্টর জমিতে নাবী জাতীয় গ্রাস্মকালীন টমেটোর আবাদ হয়েছে। 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth