১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

রংপুরে নির্বাচনী মাঠে আ.লীগের একাধিক নেতা : দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে নেতাকর্মী

আমাদের প্রতিদিন
2 months ago
130


উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নেয়ার আশঙ্কা

 মাঠ পর্যায়ে উত্তজনা বিরাজ করছে

 বিএনপির ৩জন ও জাপার ৪জন প্রার্থী হয়েছেন

হারুন উর রশিদ সোহেল:

রংপুরের প্রথমধাপে জেলার পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ৮ মে। এই নির্বাচনে দুটি উপজেলায় জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা। তাদের নিকটতম প্রতিন্দন্দ্বী ছিলো একই দলের নেতা। এরকম পরিস্থিতি দ্বিতীয় ধাপের মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায়। তৃতীয় ধাপের রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া ও চুতুর্থ ধাপের তারাগঞ্জ এবং বদরগঞ্জ উপজেলায়। এখানে যারা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও জাতীয় পার্টির দুইজন ও বিএনপি থেকে দুইজন চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। এদিকে ইতিমধ্যেই  প্রার্থী হওয়ায় বিএনপির তিন নেতাকে দলীয়ভাবে শোকজ করা হয়েছে।

এদিকে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর, রংপুর সদর, গঙ্গাচড়া,তারাগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলা জুড়ে  যেন উৎসব বইছে। উপজেলাগুলোর গ্রামগঞ্জ—হাটবাজার, অফিস—আদালত ও পাড়ায় পাড়ায় সর্বত্রই নির্বাচনী আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। প্রার্থীরা যে যার মতো গণসংযোগ, প্রচার—প্রচারণা করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বাহিরে জাতীয় পার্টির ৪জন ও বিএনপির ৩জন প্রার্থী হয়েছেন।

তবে এবারের নির্বাচনের আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা প্রার্থী হওয়ায় দলটির মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন নেতাকর্মীরা। ভোটের মাঠে বিরাজ করছে উত্তেজনা। প্রার্থীরা দলটির নেতা—কর্মী ও সমর্থকদের তাঁদের নিজেদের পক্ষে কাজ করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। এতে করে দলের নেতা—কর্মীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে চরম বিপাকে পড়েছেন ভোটাররাও। অনেকেই ভোট সুষ্ঠু হবে কিনা? তা নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন। এজন্য সুষ্ঠু পরিবেশ ও ভোটের বিষয়ে প্রশাসন সহ নির্বাচন কমিশনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

মাঠ পর্যায়ে খেঁাজ নিয়ে ও দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানাগেছে, দ্বিতীয় ধাপের ২১ মে তারিখের নির্বাচন মিঠাপুকুর ও পীরগঞ্জ উপজেলায় অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে প্রতীকও বরাদ্দ হয়েছে। এর মধ্যে মিঠাপুকুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে তিনজন অংশ নিচ্ছেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ ঘরনার। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোতাহার হোসেন মওলা, উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান কামরু এবং মিঠাপুকুর আসনের সাবেক এমপি শাহ সোলাইমান ফকিরের ছেলে শাহ সাদমান ইশরাক নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

একইভাবে পীরগঞ্জ উপজেলায় ৩জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে দুইজন আওয়ামী লীগের ও ১জন জাতীয় পার্টির। তারা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সদস্য, সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ মন্ডল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোকাররম হোসেন চৌধুরী জাহাঙ্গীর এবং জাতীয় পার্টির উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম যাদু মিয়া প্রার্থী হয়েছেন।

তৃতীয়ধাপে রংপুর সদর ও গঙ্গাচড়ায় নির্বাচন হবে ২৯ মে। এই দুই উপজেলায় যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কিংবা গুরুত্বপুর্ণ পদে রয়েছেন। এর বাহিরে জাতীয় পার্টির দু্ইজন ও বিএনপির তিনজন প্রার্থী হয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মহানগর আওয়ামী লীগের আহবায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. ফিরোজ কবির চৌধুরী গুঞ্জন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জাহাঙ্গীর বকসি, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এসএম সাব্বির হোসেন প্রার্থী হয়েছেন। এর বাহিরে জাতীয় পার্টি  থেকে মাসুদ নবী মুন্না ও বিএনপি থেকে আব্দুল কাইয়ুম যাদু মিয়া প্রার্থী হয়েছেন।

একইভাবে ৪র্থ ধাপের নির্বাচনে বদরগঞ্জ উপজেলায় দুইজন প্রার্থী হয়েছেন। তারা দুইজনই আওয়ামী ঘরনার। এরমধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলে রাব্বী সুইট, উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক হাসান তকিবুর চৌধুরী পলিন। তারাগঞ্জ উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন প্রার্থী হয়েছেন। এছাড়াও জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি শাহিনুর রহমান মার্শাল প্রার্থী হয়েছেন।এছাড়াও পুরুষ ও মহিলা ভাইস—চেয়ারম্যান পদে যারা নির্বাচন করছেন তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা বা সমর্থক।

এরআগে প্রথম ধাপে গত ৮ মে বুধবার রংপুরের পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও দুই উপজেলা ৭ সাতজন চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ ২৭জন অংশ নিয়েছিলো। যার মধ্যে  ৫জনই আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের শীর্ষ নেতা। এর মধ্যে পীরগাছা উপজেলায় বিজয়ী হয় পীরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, তার নিকটতম ছিলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ—সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম মাসুদ। কাউনিয়া উপজেলায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম মায়া। তার নিকটতম ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুর রাজ্জাক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় একসঙ্গে দলীয় কার্যক্রম করলেও এখন আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে এসে দলের মধ্যে নেতা—কর্মীদের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিতে পারে বলে নেতা—কর্মীরা আশঙ্কা করছেন।

এদিকে রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী, চন্দনপাট ইউপি চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, ‘এর আগে দুইবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। দলের হয়ে বিভিন্ন নির্বাচনে কাজ করেছি। মাঠপর্যায়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে।’ অধিকাংশ নেতা—কর্মী ও উপজেলার সাধারণ জনগণ তাঁর পক্ষে কাজ করছেন বলে দাবি করেন তিনি। ’

মিঠাপুকুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী, উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান কামরু বলেন, ‘এবারের উপজেলা নির্বাচনে যেহেতু কোনো দলীয় প্রতীক নেই। সেহেতু ভোট হবে ভালোবাসার ভোট। যিনি জনগণের পাশে ছিলেন কিংবা এখনও আছেন, জনগণ যাকে বেশি ভালোবাসে, তাকেই নির্বাচিত করবেন।

এবিষয়ে রংপুর সদর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মাসুদ নবী মুন্না বলেন, রংপুর অঞ্চল হচ্ছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু ও জাতীয় পার্টির ঘাঁটি। এখানে জাতীয় পার্টির প্রতি এখনো মানুষের ভালোবাসা রয়েছে। জনগণ তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়