কুড়িগ্রামে লাইসেন্স বিহীন এবং লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলছে ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিক
আহসান হাবীব নীলু,কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামে লাইসেন্স বিহীন এবং বছরের পর বছর লাইসেন্স নবায়ন ছাড়াই চলছে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা বহু ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার। স্বাস্থ্য বিভাগের নাকের ডগায় পরিচালিত হওয়া এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দিনের পর দিন কার্যক্রম চালালেও নিরব কর্তৃপক্ষ। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সুত্রে জেলার ৯টি উপজেলায় ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার আছে ৯৩টি।
সরেজমিনে দেখাযায়,কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ভূরুঙ্গামারী পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দীর্ঘদিন ধরে চালাচ্ছেন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম। এখানে পরীক্ষা নিরিক্ষা করা হয় নানা রোগের। ব্যবস্থাপত্র দেয়ার জন্য বসানোও হয় ডাক্তার। রোগীর ব্যবস্থাপত্রে দেখাযায় আল্ট্রসনোগ্রাম,রক্ত—প্রসাব পরীক্ষা হচ্ছে অনায়সে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠান চালুর কয়েক বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। তবে এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নেই কোন বৈধ লাইসেন্স। অপর দিকে, একই উপজেলার আপডেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার,জনসেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ জেলার ৯টি উপজেলার অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কয়েক বছর যাবত নবায়ন করা নেই। অথচ দিব্যি চলছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো। এছাড়াও জেলা জুড়ে গড়ে ওঠা এসব অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে নেই দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট,ল্যাব এসিসেটেন্ট,কম্পিউটার অপারেটরসহ পরিছন্ন কমীর্।
ভূরুঙ্গামারী পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালক হুমায়ুন কবির,লাইসেন্স না পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম নেই দাবী করেন তিনি। পরিচালকের দাবী যে অসত্য তার প্রমান মেলে একজন রোগীর দেয়া কাগজ পত্র দেখালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে তার ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে বেরিয়ে যান।
কয়েকজন ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভূরুঙ্গামারী পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠা হবার আগে সেখানে জুতার দোকান ছিল। ডায়াগনস্টিক সেন্টার চালু হবার পূর্বে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বীরমুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম বেশ কয়েক বছর আগে মারা যান। কিন্ত নিয়ম বর্হিভূত ভাবে মৃত ব্যক্তিকে প্রতিষ্ঠাতা দেখানো হয়েছে।
রোগী শ্রী ওমল বলেন,আমি পেট ব্যথার জন্য গত ৩০জানুয়ারি ভূরুঙ্গামারী পুপলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডা: এজডএম মোতাখখারুল ইসলাম হৃদয়কে দেখিয়েছিলাম। সে আমার আল্ট্রাসনোগ্রাম,রক্ত,প্রসাব পরীক্ষা দেয়। সেখানেই আমি পরীক্ষা গুলো করি। এসময় আমার বিল আসে দু’হাজার ১০০টাকা। পরে তারা কমিশন দিয়ে দেড় হাজার টাকা নেয়। এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স আছে কিনা আমি জানি না?
রাজারহাট উপজেলার ডক্টরস ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালক হায়দার আলী বলেন,নতুন লাইসেন্স কিংবা নবায়ন প্রাপ্তির আবেদন করে বা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শণ শেষে কার্যক্রম পরিচালনা করা যায় বলে জানান তিনি।
মমতা মেডিকেল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক আলাউদ্দিন বলেন,কচাকাটা এলাকা থেকে কুড়িগ্রাম গিয়ে লাইসন্সে নবায়ন করতে সময় এবং অর্থ দুটোই ব্যয় হয়। সেজন্য সিভিল সার্জন অফিসের স্টাফ সিরাজুলকে চা খাওয়ার জন্য লাইসেন্স নবায়ন করার টাকা পাঠায় দিলে তিনি সব করে দেন। এছাড়াও এসব প্রক্রিয়ার পেছনে রয়েছে বড় দাদাদের খুশি করার ব্যাপারও থাকে।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: মনজুর—এ মুর্শেদ বলেন,লাইসেন্স এবং নবায়ন না থাকলে কোন ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টার তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। ইতিমধ্যে ১০টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ৩৫হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা এবং চারটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।