আতঙ্কে বিরল উপজেলার সিঙ্গুল হামিদ-হামিদা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের কয়েক হাজার ভোটার
![](https://www.amader-protidin.com/storage/postpic/1716209454.webp)
পুলিশের গুলির ক্ষত না শুকাতেই ২২ দিনের মাথায় মঙ্গলবার আরেকটি নির্বাচন
দিনাজপুর প্রতিনিধি :
পুলিশের গুলির ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারও একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ১নং আজিমপুর ইউনিয়নের সিঙ্গুল ও রুনিয়া গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। এক নির্বাচনের আতঙ্ক না কাটতেই ২২ দিনের মাথায় আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন ওই দুই গ্রামের ৩৩’শ ভোটার।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার সিঙ্গুল ও রুনিয়া গ্রাম। এই দুই গ্রামের ভোটারদের ভোটকেন্দ্র সিঙ্গুল হামিদ—হামিদা উচ্চ বিদ্যালয়। এই ভোটকেন্দ্রেই গত ২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ১নং আজিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহন শেষে সন্ধ্যায় ভোট গণনা নিয়ে সহিংস ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশের গুলিতে নিহন হন সিঙ্গুল গ্রামের অধিবাসী মোহাম্মদ আলী (৬৭) নামে এক বৃদ্ধ। আহত হন অন্তত ১০ জন। সিঙ্গুল হামিদ—হামিদা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুপুরে ভোট দিয়ে বাড়ীতে এসে বিশ্রাম নেয়ার পর সন্ধ্যায় স্ত্রীর জন্য সিঙ্গুল চৌরঙ্গী বাজারে ওষুধ আনতে গিয়েই পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিনি। পুলিশের সেই গুলি ও নিহতের আতঙ্ক এখনও কাটেনি ওই এলাকার মানুষের মধ্যে।
২৮ এপ্রিলের ওই সহিংস ঘটনায় সিঙ্গুল হামিদ—হামিদা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার (ইউপি নির্বাচন) বিরল ইউআরসি’র ইনস্ট্রাক্টর মোঃ মাহবুবুর রহমান এবং ওই কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বোচাগঞ্জ থানার এস.আই মোঃ সেলিম খান বাদী হয়ে ২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ২ থেকে ৩ হাজার আসামী করে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেন।
একদিকে পুলিশের গুলির আতঙ্ক আর অন্যদিকে মামলার আতঙ্কে রয়েছে ওই এলাকার মানুষ। এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ২২ দিনের মাথায় মঙ্গলবার (২১ মে) উপজেলা পরিষদের নির্বাচন হতে যাওয়ায় চরম আতঙ্ক এবং উদ্বেগ—উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে সিঙ্গুল হামিদ—হামিদা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটাররা।
ভোটের আগের দিন সোমবার দুপুরে ভোটকেন্দ্র সংলগ্ন সিঙ্গুল চৌরঙ্গী বাজারে গিয়ে দেখা যায় শুনশান অবস্থা। ভোটের কথা জিজ্ঞাসা করতেই ভয়ে মুখ খুলছেন না কেউ। একদিকে পুলিশের গুলিতে একজন নিহত হওয়ার আতঙ্ক, অন্যদিকে অজ্ঞাত ৩ হাজার মানুষকে আসামী করে মামলা—এই দুটি বিষয় নিয়েই আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চৌরঙ্গী বাজারের এক দোকানদার বলেন, ভাই কালকে ভোট দিতে আসবো কি—না চিন্তায় আছি। ভোটের দিন বাজারে আসার তো প্রশ্নই আসে না। কথা বলতে গেলে ওই বাজারের বেশীরভাগ মানুষই ভোট নিয়ে কিছু বলতে রাজী হননি।
তবে বিরল থানার ওসি গোলাম মওলা জানান, সিঙ্গুল হামিদ—হামিদা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরল উপজেলায় মোট ৮১টি ভোটকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে ভোটগ্রহনের সকল কার্যক্রম সম্পন্নে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রেই ব্যাপক নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। আর যেহেতু ওই কেন্দ্রে একটি ঘটনা ঘটেছে—সেহেতু ওই কেন্দ্র বাড়তি নজরদারী তো থাকবেই।
এদিকে মঙ্গলবারের উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহন অনুষ্ঠানে সোমবার দুপুরের পর পরই ভোটগ্রহনের সামগ্রী নিয়ে সিঙ্গুল হামিদ—হামিদা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহনের সামগ্রী নিয়ে পৌচেছেন ভোটগ্রহনের কর্মকর্তারা। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং কর্মকর্তা বিরল সরকারী ডিগ্রি কলেজের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক জাহিদুল সাজ্জাদ জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৩০২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৬৯৪ জন এবং মহিলা ১ হাজার ৬০৮ জন। এই কেন্দ্রে মোট ৯টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। সুষ্ঠু ও শান্তিপুর্ণভাবে ভোটগ্রহনে সব রকম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। গত ২৮ এপ্রিলের মতো যাতে আর না ঘটে—এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় ধাপে দিনাজপুর জেলার বিরল, বোচাগঞ্জ, বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলা পরিষদের ভোটগ্রহন আজ (মঙ্গলবার) অনুষ্ঠিত হচ্ছে।