২২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ - ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৪ - 06 December, 2024

কুড়িগ্রামে বাড়ছে আঙ্গুর চাষের সম্ভাবনা

আমাদের প্রতিদিন
6 months ago
270


সফল উদ্যোক্তা আবু রায়হান ফারুক ও রুহুল আমিন

আহসান হাবীব নীলু,কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রাম জেলায় দেশী বিদেশি ফলের চাষ ক্রমে বাড়ছে। পরিমাণে কম হলেও এবার সেই তালিকায় নাম লিখিয়েছে আঙুর। জেলায় চাষ হওয়া আঙুরের স্বাদ ও বৈশিষ্ট্য খুব ভালো মানের। সুস্বাদু এই ফলের ফলন দেখে বাইরের জেলার কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার উদ্যোক্তা আবু রায়হান ফারুক তার বাড়ির পাশে ২৩বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন সম্বনিত ফলের বাগান। এই বাগানে রয়েছে বিভিন্ন জাতের আঙ্গুর,পাল্টা,কমলা,আপেল,আমসহ দেশি—বিদেশী বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ। বাগানের ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে রেডরোজ, হ্যালোইন, বৈকানুর, গ্রিন লং, আইসবার্গ, সুপারনোভাসহ উন্নত জাতের বাহারি রঙের আঙুরের থোকা লতায় লতায় ঝুলছে। তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ২০২২সালে এক বিঘা জমিতে আঙুরের চাষ শুরু করেন। পরে ফলন ভালো হওয়ায় এ বছর দু’বিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ করেন তিনি। ইতিমধ্যে আঙুরের ৪০টিরও বেশি জাত থেকে ফলন পেতে শুরু করেছেন তিনি। ফলনও বেশ ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে আঙ্গুর বিক্রি করছেন ৪০০ হতে ৫০০টাকা কেজি। আর আঙ্গুরের চারা বিক্রি করেছেন প্রায় লক্ষাধিক টাকার। ফারুকের বাগান দেখতে প্রতিদিনই জেলা ও জেলার বাইরে বেড়াতে আসে অনেক কৃষক ও দর্শনার্থী। অপরদিকে জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার গঙ্গারহাট গ্রামের কৃষক রুহুল আমিনও রাশিয়া,ইউক্রেন এবং তুরস্কের আঙ্গুর চাষ করেছেন দু’বিঘা জমিতে। তার বাগানে শোভা পাচ্ছে প্রায় ৪০জাতের আঙ্গুর।

উদ্যোক্তা আবু রায়হান ফারুক বলেন,চাকরির পিছনে না ছুটে নিজেই কিছু করার মানসিকতা থেকে মিশ্র বাগান তৈরি সিদ্ধান্ত নেই। আমার বাগানে দেশি—বিদেশি জাতের বিভিন্ন জাতের ফল রয়েছে। প্রায় দু’বছর আগে একবিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ শুরু করি। ভালো ফলন পাওয়ায় এবার দুবিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ করেছি। ফলনও বেশ ভালো ও সুস্বাদু। এবার ৮/১০লাখ টাকার আঙ্গুর এবং আঙ্গুরের চারা বিক্রি করার লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে।

লালমনিরহাটে বেসরকারী একটি এনজিওর উদ্যোগে ৩৩জন কৃষকের একটি দল সম্প্রতি ফারুকের বাগান পরিদর্শন আসেন।

ফুলবাড়ি উপজেলার গঙ্গারহাট এলাকার আঙ্গুর চাষী রুহুল আমিন বলেন,আমি এক বিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ করি।ফলন ভালো হওয়ায় এবার দুবিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষ করেছি। আগামীতে চার বিঘা জমিতে আঙ্গুর চাষের পরিকল্পনা রয়েছে আমার।

কৃষক আফজাল বলেন,তামাক চাষের জন্য পরিচিত লালমনিরহাট জেলা। ফারুকের সম্বনিত ফলের বাগান দেখে আশ্চার্য হয়েছি। আমরা কি ভুল করছি তামাক চাষ করে। ফলের বাগান করে সোনা না ফলিয়ে আমরা তামাকের পিছনেই ছুটেছি। আমরা যদি সরকারি—বেসরকারি ভাবে সহায়তা পাই তাহলে তামাক চাষ বন্ধ করে ফলের বাগান তৈরি করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

কৃষক বেলাল বলেন,এসব আঙ্গুরের রং ও স্বাদ বিদেশ থেকে আমদানি করা আঙ্গুরের মতো হওয়ায় মিলেছে সফলতাও। লাভজনক এ ফল চাষ ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে দেয়া গেলে আমদানি নির্ভরতা কমার পাশাপাশি লাভবান হতে পারবেন দারিদ্রপীড়িত এই জনপদের কৃষকরা। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ফলের চাহিদাও মিটবে। বাঁচবে আমদানিতে ব্যয় হওয়া বৈদেশিক মুদ্রা। 

শুধু কৃষক নয় পাশ^বর্তি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও আসছেন ফলের বাগান দেখতে। এখান থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফল চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

শিক্ষার্থী বুলবুলি আক্তার বলেন,এই বাগান দেখে আমি অবাক হয়েছি। এখান থেকে চারা নিয়ে গিয়ে বাড়িতে লাগাবো। বাড়িতেই অল্প জায়গায় ছোট পরিসরে বাগান করার চিন্তা করেছি।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অতিরক্তি উপপরিচালক আসাদুজ্জামান বলেন,কুড়িগ্রামের মাটি ও জলবায়ুতে আঙ্গুরের ফলন কেমন হয় তা বুঝতে নজরের রেখেছে কৃষি বিভাগ। ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে জেলায় আঙ্গুর চাষ সম্প্রসারণের প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেবার আশ^াস দেন তিনি।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth