১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

চিলমারীতে কৃষকের নামের তালিকা নিয়ে নয়ছয়, প্রকৃত কৃষকেরা পাচ্ছে না কোন সুবিধা

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
83


হাবিবুর রহমান, চিলমারী (কুড়িগ্রাম):

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে সরকারি ভাবে খাদ্যগুদামে, কৃষককের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করতে গিয়ে কৃষকের নামের তালিকা ভেজাল হওয়ায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ধান দিচ্ছেন তাদের ইচ্ছে মত। ধান ক্রয়ের পদ্ধতি  ডিজিটালাইজড (আধুনিক) করা হলেও তালিকায় অনিয়ম ও ভুয়া কৃষকের নাম অনেক যুক্ত করা হয়েছে, এ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের মাঝে নানা ধরনের প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর দায় এড়াতে চেষ্টা ও তদবির চালাচ্ছেন বলেও অনেক মাঝে অভিযোগ উঠছে। জানাগেছে, চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৫হাজার কৃষকের মধ্যে লটারির মাধ্যমে মোট ২২৯ জন কৃষককে বেচে নেওয়া হয়। তাদের নিকট থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে ৬৮৮ মেট্রিক টন ধান, ৪৫ টাকা কেজি দরে উপজেলার ৪০ জন মিলারের (চাতাল ব্যবসায়ীর) মাধ্যমে ১হাজার ৯৬ মে. টন চাল ও ৩৪ টাকা কেজি দরে ৯০ মে.টন গম ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে। চিলমারী এলএসডি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোট ৬টি ইউনিয়নে মধ্যে ২২৯ জন কৃষকের মধ্যে এ পর্যন্ত (৪ জুন) মোট  ২০জন কৃষক ৬০ মেট্রিক টন ধান গুদাম জাত করেছেন বলে জানা যায়। তবে ওই ২০জন কৃষকের তালিকা দেখতে চাইলেও অপরাগতা প্রকাশ করেন দায়িত্বরত অফিস স্টাফ মাইদুল ইসলাম নামে ব্যক্তি। তিনি বলেন, তালিকা নিতে হলে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের প্রত্যয়ন পত্র দেখাতে হবে বলে জানান। অভিযোগ উঠেছে, সিন্ডিকেট চক্রের মাধ্যমে কৃষকের ভুয়া তালিকা দেখিয়ে গুদামে ধান দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পরে তালিকার সূত্র ধরে উপজেলার থানাহাট, রমনা, রাণীগঞ্জ, নয়ারহাট, অষ্টমীর ও চিলমারী ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষকদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে বেশির ভাগ মানুষ জানান, তারা চিলমারীর বাসিন্দা নন এবং বেশকিছু নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তালিকা ভুক্ত রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ১১জনের সাথে যোগাযোগ করা হলে ৫জনের নামই ভুয়া বলে জানাযায় আর বাকি ৬জনের মধ্যে অনেকেই কল রিসিভ করেনি। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক ১নং লাইলী খাতুন যার (০১৭১৬-৩২৭১৯৬) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নরসিংদীর বাসিন্দা (এডভোকেট) বলে কলকেটে দেন। ২ নং এনামুল হক যার (০১৪০৯-৭৯২৭৮৮) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রংপুরের বাসিন্দা (আলামিন) বলে জানান। ৮নং আছিয়া বেগম যায় (০১৯৪৯-০১৯৯৪৮) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকা, রাজরাড়ির বাসিন্দা (হেলেনা বেগম) বলে জানান। ৩নং উজ্জ্বল চন্দ্র মালাকার যার (০১৭৩৫-৭৭১৩৫৫) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জানাযায়, তিনি উপজেলা বালাবাড়ীহাট এলাকার আবু সাঈদ হোসেন পাখি (বিএনপি) নেতা বলে জানান, তিনি বলেন আমি কখনো ধান দেওয়ার জন্য আবেদন করিনি, আমার নাম কি ভাবে আসল তা আমি জানতে চাই। থানাহাট ইউনিয়নের ৮জনের সাথে কথা হলে ৩জনের নামই ভুয়া বলে জানাযায়। আর বাকি ৪জনের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। থানাহাট ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক ২৯নং দুদু মিয়া যার (০১৭১৯-৭১০৭১৯) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিরাজগঞ্জের বাসিন্দা (সাকিব মিয়া)  বলে জানান। ৩৩নং জিল্লুর রহমান যার (০১৭৪৩৭৪০১৭৯) মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি চিলমারী থানার এসআই দিলীপ কুমার রায় বলে জানাযায়। রমনা ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক ১৯নং যার (০১৭৫২-১৮৬১২৪) মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি উলিপুর উপজেলার, বাকরের হাট এলাকার বাসিন্দা (বিউটি বেগম) বলে জানান। অষ্টমীর চর ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক ৩৯নং আব্দুল মালেক যার (০১৬১৩২৯০৬৫২) মোবাইলে যোগযোগ করা হলে তিনি রং নাম্বার বলে কেটে দেন। নয়ারহাট ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত কৃষক ৪নং সাদেক হোসেন যার (০১৭২৫৫৪৭১৯৮) যোগাগোগ করা হলে তিনি, লালমনির হাট বড়বাড়ী এলাকার বলরাম বলে পরিচয় দেন। তালিকাভুক্ত অনেক কৃষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে প্রায় নাম ও মোবাইল নাম্বার গুলো গরমিল পাওয়া যায়। থানাহাট ইউনিয়নের পূর্বমাচাবান্দা এলাকার আমিনুল ইসলাম বীর বলেন, প্রতিবছরই সরকারী ভাবে ধান ক্রয়ের সময় অভিযোগ ওঠে। ধান ক্রয়ের সময় কৃষকরা ধান গুদামে দিতে না পারলেও ভুয়া তালিকায় কিছু সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী প্রতি বছরে ধান দিয়ে আসছে। এ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন প্রক্রিয়া হলে কিভাবে ভুয়া কৃষক অর্ন্তভুক্ত হয় তা খতিয়ে দেখা খুবই জরুরি বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে  উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কুমার প্রণয় বিষাণ দাস বলেন, কৃষকরা এ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করেছিল। তারা নাম ও নাম্বার পরিবর্তন করে কি না তা আমার জানানাই। নাম ও নাম্বারের যাচাই-বাছাই সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান যে এ্যাপস আছে তা আপডেট নাই, যার কারণে আমরা সঠিক ভাবে যাচাই-বাছাই করতে পারিনি। আমরা ইউএনও স্যারের কাছ থেকে আবেদনকৃত তালিকা সরবরাহ করেছি। তিনি লটারি করেছেন বলে জানান। এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বসুনিয়া বলেন, অনেকের নাম ও মোবাইল নাম্বারের মিল নেই। এখানে আমাদের করার কিছুই নাই। কারণ কৃষকেরা যখন আবেদন করেছেন, তখন তারা এ সব নাম ও মেবাইল নাম্বার ব্যবহার করেছেন বলে জানা তিনি। এ পর্যন্ত ৬০ মেট্রিক টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। ধান সংগ্রহের সময় কৃষকের কৃষি কার্ড ও ভোটার আইডি মিলিয়ে ধান নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে খাদ্য গুদাম কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি, নাম ও মোবাইল নাম্বারে কোন মিল নাই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা তিনি। এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা বলেন, কৃষি অফিসের ব্লক সুপার ভাইজার, মাঠ পরিদর্শন করে যে তালিকা প্রণয়ন করেন, লটারীর মাধ্যমে সে তালিকা ধরে আমরা ধান ক্রয় করি। এখানে আমাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়