ধনিচা চাষে সবুজের সমারোহে ডোমার বিএডিসি খামার
ডোমার নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
ধনিচা চাষে সবুজের সমারোহে পরিনত হয়েছে ডোমার বিএডিসি উৎপাদন খামার।
জমির প্রাণ ফেরানোর পাশাপাশি কৃষকদেরও চাহিদা মেটাতে জৈব এবং সবুজ সার হিসেবে ব্যবহার হয় ধনিচা। কিন্তু কালের বিবর্তনে জমিতে হাইব্রিড ফসল আর রাসায়নিক সারের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ধনিচার চাষ।
তবে জৈব এবং সবুজ সারের চাহিদা পূরণে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ডোমারের খামারটি।
রবিবার ৯ জুন সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারটিতে প্রায় দুইশত একর জমিতে ধনিচা চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করে দিয়েছে।
এলাকাবাসী ও খামারের সূত্র মতে জানাযায়, ১৯৫৭ থেকে ৫৮ সালের দিকে সরকার ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারটি প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি তৎকালীন কৃষি বিভাগের তত্ত্বাবধানে খামারটির কার্যক্রম শুরু হয় এবং বীজ আলু উৎপাদনের ক্ষেত্রে এখানকার মাটি বেশি উপযোগী মনে করে ১৯৮৯ থেকে ৯০ সালের দিকে খামারটি বীজ আলু উৎপাদন বিভাগে অন্তর্ভুক্ত হয়।
খামারটিতে আলু উৎপাদনের পরপরই ধনিচার বীজ রোপণ করা হয়। ধনিচা উৎপাদনে ৪৫ থেকে ৫০ দিন সময়ে হেক্টর প্রতি ২৫ থেকে ৩০ টন সবুজ (জৈব) সার উৎপন্ন হয়। এর ফলে ১শত থেকে ১শত ৫০ কেজি নাইট্রোজেন সরবরাহ করে যাহা ২শত ২০ থেকে ২শত ৬০ কেজি ইউরিয়া সারের সমতুল্য।
আশানুরূপ ফলন পেতে এবং মাটিকে উৎপাদন ক্ষমতা ধরে রাখতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বর্তমানে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরা শক্তির পাশাপাশি মাটির স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। অপরদিকে বিপন্ন হয়ে পড়েছে জীব বৈচিত্র্য। সেজন্য জমির উর্বরা শক্তি অক্ষুণ্ন রাখতেই কৃষি বিভাগকে নিতে হচ্ছে নতুন নতুন পরিকল্পনা। এরই ধারাবাহিকতার আলোকে চাষ করা হচ্ছে ধনিচার।ধনিচা চাষের কারণে মাটির উর্বরতা শক্তি ও ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে। ধনিচার মূল মাটির গভীরে যাওয়ায় পুষ্টি শোষণ করে মাটিতে গাছের পুষ্টি উপাদানকে সংরক্ষণ করে।
খামারের কাজ করতে আসা একাধিক শ্রমিক বলেন আমাদের ‘বাপ-দাদারা এই খামারে কাজ করতেন এবং এই খামারে প্রতি বছর একবার করে ধনিচার চাষ করতেন। কিন্তু বর্তমানে এই খামারে ছাড়া আর কোথাও চোখে পড়ে না তেমন ধনিচার চাষ। এখনো ফার্মে প্রতি বছর ধনিচা চাষ করা হয়।বর্তমানে ধনিচা চাষে সবুজে ছেয়ে গেছে বিএডিসির মাঠ। ধনিচা চাষে জমি উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি, মাটি নরম হয়েছে। তারা আরও বলেন আমরা এই ফার্মে
ধনিচাসহ সব ধরনের আবাদে জমিতে কাজ করে আসছি। এতে করে দেখা গেছে রোপা আমন চাষে সাধারণত যে পরিমাণ রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হতো, শুধু ধনিচা চাষে তার অর্ধেক সার ব্যবহার করা লাগে।
এবিষয়ে ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার বলেন, ধনিচার ব্যবহার এখন কমে গেলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিএডিসির খামারে এটি চাষ হচ্ছে। এই ধনিচা চাষে একদিকে যেমন জমিতে সারের ব্যবহার কমছে অপর দিকে সার কম ব্যবহারে ধনিচা চাষে সরকারের ফার্মে লাভ হচ্ছে।
ধনিচা চাষের বিষয়ে কথা হলে ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আবু তালেব মিঞা বলেন, এবারও বীজ আলু উত্তোলন শেষে উত্তপ্ত খরতাপ উপেক্ষা করে আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে ২শত একর জমিতে ধনিচা চাষ করা হয়েছে। এই ধনিচা চাষে জমির উর্বরতা বাড়বে, ফসলের রোগবালাই কমবে, জমিতে সবুজ সার জৈব পদার্থ যোগ করে মাটিকে উর্বর করে। মাটির ভৌত গুণাবলির উন্নতি সাধন করে।