চিলমারীতে ইটভাটায় পোড়া হচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল
গোলাম মাহবুব,চিলমারী(কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের চিলমারীতে কৃষকের ফসলি জমির টপ সয়েল(মাটির উপরি অংশ)পোড়া হচ্ছে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ইটভাটায়। ফলে দিন দিন দুই থেকে তিন ফসলি জমিগুলো উর্বরতাশক্তি হারিয়ে ফেলছে।এতে অদূরভবিষ্যতে দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কাসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন সচেতনমহল।উপজেলায় গড়ে ওঠা ৫টি ইট ভাটায় প্রতিনিয়ত আবাদি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে নেয়া হলেও সে বিষয়ে কৃষি বিভাগ কিংবা প্রশাসনের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি।
জানাগেছে,পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুুযায়ী কোনো ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান ইট প্রস্তুুতের উদ্দেশ্যে কৃষিজমি,উচুঁ পাহাড় কিংবা পাহাড়ের টিলা হতে মাটি কেটে বা সংগ্রহ করে ইটের তৈরীর কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করতে পারবেন না।'অথচ উপজেলার আনাচে-কানাচে প্রতিনিয়ত ফসলি জমির টপ সয়েল(উপরিভাগের উর্বর মাটি)কেটে এনে ইটভাটাগুলোতে বর্তমানে ব্যবহারসহ ভবিষ্যতের জন্য মজুত করা হচ্ছে।
বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি অবকাঠামোগত কাজসহ ব্যাক্তি মালিকানাধীন বিভিন্ন কাজকর্মে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ইটের ব্যবহার। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার জোগান দিতে গিয়ে কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নিয়ম বর্হিভুতভাবে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে ইটভাটা।এদের বেশিরভাগই ফসলি জমি ও জনবসতিপূর্ন এলাকায় অবস্থিত। আর এ ভাটাগুলোতে ইট তৈরির প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে ফসলি জমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি।
নিজেদের ব্যবসার প্রয়োজনে ইটভাটার মালিকরা কৃষকদের বেশি টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ভেকু মেশিন কিংবা শ্রমিক দিয়ে আবাদি জমির টপ সয়েল(মাটির উপরি অংশ) উত্তোলন করে ভটভটি(ট্রাক্টর) দিয়ে ভাটায় নিয়ে যাচ্ছে।পুড়ে ফেলা হচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন দেখার একমাত্র অবলম্বনকে।ফলে দুই/তিন ফসলী জমিগুলো হারিয়ে ফেলছে তাদের উর্বরাশক্তি।এতে অদূরভবিষ্যতে দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কাসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন কৃষিবিদ ও সচেতন মহল। অপরদিকে ইট ভাটার মাটি বহনের কাজে অধিক পরিমাণে ট্রাক্টর ব্যবহার করায় ওইসব এলাকার রাস্তাগুলি হয়ে উঠছে মানুষ চলাচলের অনুপযোগী এবং রাস্তায় ধুলোয় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।হরহামেশায় আবাদি জমি থেকে টপ সয়েল উত্তোলন করে নেওয়া হলেও কৃষি বিভাগ কিংবা উপজেলা প্রশাসনের কোন তৎপরতা চোখে পড়েনি।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়,ফসলি জমির মাঠের ভিতর থেকে ভেকু মেশিন এবং শ্রমিক লাগিয়ে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে ট্রাক্টরে করে ভাটায় নেওয়া হচ্ছে। উপজেলার মাটিকাটামোড় এলাকায় বাসষ্ট্যান্ডের পূর্ব পাশ্বে পেদিখাওয়ার বিলে ফসলী জমির মাঝ থেকে কয়েক একর আবাদী জমিতে শ্রমিক লাগিয়ে ট্রাক্টরে করে মাটি নেয়া হচ্ছে। ব্যাপারীর বাজার ও মাচাবান্দা ফকিরপাড়া এলাকায় একই চিত্র চোখে পড়ে। সেখানে ফসলী জমির বিল থেকে প্রায় ফসলি জমিতে শ্রমিক লাগিয়ে মাটি গভীর করে কেটে নেয়া হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে উপজেলার ভিতরে ৫টি ও উপজেলার সীমানা ঘেঁষে পাশ্ববর্তী উলিপুর উপজেলায় ৮টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে।সবগুলো ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে আবাদী জমি ও জনবহুল এলাকায়।নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে এসব ইটভাটার মালিকরা একের পর এক ফসলী জমির প্রাণ ধ্বংস করে টপ সয়েল এবং গাছ-পালা কেটে নিয়ে পরিবেশকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে।সরকারী কোন নিয়ম-নীতিকে তোয়াক্কা না করে জনবসতিপূর্ন এবং আবাদী জমি সংলগ্ন এলাকায় উপজেলার শরিফেরহাট এলাকায় একটি,মাচাবান্দা এলাকায় একটি,শামসপাড়া এলাকায় একটি, ডম্পোরমোড় এলাকায় একটি ও বালাবাড়ীহাট এলাকায় একটি ইট ভাটা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।এর মধ্যে ১টি ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি থাকলেও বাকী ভাটা গুলোর কোন অনুমতি নেই বলে জানা গেছে।বর্তমানে কাক ডাকা ভোর হতে শুরু করে অনেক রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলী জমি থেকে এসব ইটভাটার জন্য মাটি সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কুড়িগ্রাম সহকারী পরিচালক মোঃরেজাউল করিম বলেন,চিলমারীতে ৫টি ইট ভাটা চলমান রয়েছে এর মধ্যে এইচ আর ব্রিক্স নামে ইট ভাটার পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ডিসি অফিসের লাইসেন্স আছে।ওসমান সাফ্ফাত(ওএসবি) ভাটার মেয়াদ শেষ হয়েছে,লাইসেন্স রেনুর জন্য আবেদন করেছে। অপর ওআরএস,এস এন এবং এইচটি নামক ইট ভাটা ৩টি কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই অবৈধভাবে ইট প্রস্তুত করছে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রনয় বিষান দাস বলেন,ফসলি জমির উপরের ৬ইঞ্চি পর্যন্ত মাটিকে টপ সয়েল বলা হয়। এটি কেটে নিলে কৃষি জমিতে আর কিছু থাকে না। কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়া একটি অশনির সংকেত। আমরা সব সময় এটি না কাটার জন্য প্রচার পচারনা চালিয়ে আসছি। মাঝে মধ্যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে অভিযান চালানো হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সবুজ কুমার বসাক জানান,ফসলি জমি থেকে টপ সয়েল কেটে নেয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না।এ বিষয়ে খোজঁ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।