ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজ গভর্ণিং বডির নির্বাচন মনোনয়ন পত্রের মূল্য ১০ হাজার টাকা!!

আরমান আলী,ভূরুঙ্গামারী(কুড়িগ্রাম):
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের গভর্ণিং বডির অভিভাবক সদস্য নির্বাচনে সরকারি নীতিমালা লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্রের মূল্য নির্ধারণ করার অভিযোগ উঠেছে কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সরকারি গ্যাজেটে মনোনয়ন পত্রের মূল্য নির্ধারণের সূস্পষ্ট নীতিমালা দেয়া থাকলেও কোন নিয়ম না মেনে এর মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি করে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। অথচ গত ২০২৩ সালে ওই কলেজের গভর্ণিং বডির নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের মূল্য ১ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা গত বছরের তুলনায় এবার ১০ গুণ করা হয়েছে। যা বাস্তবসম্মত নয় বলে অভিভাবকমহলের দাবী। মনোনয়নপত্রের এ রকম অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী অভিভাবকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এর প্রতিকার চেয়ে দু’জন অভিভাবক সদস্য প্রার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
জানা গেছে, বর্তমান কলেজটিতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট এডহক কমিটি রয়েছে। সরকারি নির্দশনা মোতাবেক নিয়মিত কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অভিভাবক সদস্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী তফশীল ঘোষণা করেন। নির্বাচনী তফশীল অনুযায়ী অভিভাবক এসএম মোশারফ হোসেন ও আজিজুল হক জীবন মনোনয়ন পত্র ক্রয় করতে গেলে তারা এর মূল্য ১০ হাজার টাকা জানতে পারেন। বিষয়টির প্রতিবাদ করেও কোন কাজ হয়নি। পরে তারা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কলেজ পরিদর্শক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। সংশ্লিষ্ট কলেজের অধ্যক্ষের দাবী মনোনয়নপত্র ক্রয়ের মূল্য নির্ধারণের কোন সরকারী নীতিমালা নেই। তাই কলেজের এডহক কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে। অপরদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সূত্র বলছেন নীতিমালায় মনোনয়নপত্রের মূল্য নির্ধারণ করা না থাকলেও এত টাকা নির্ধারণ করা কলেজ কর্তৃপক্ষের এখতিয়ার বহি:র্ভূত। গত ২০২৪ সালের ১৬ মে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ বেসরকারি মাধ্যমিক -১ শাখা এসআরও নং- ৮০ -আইন/২০২৪ সেকশন -৩৯ এর ক্ষমতাবলে সরকারের পূর্ব অনুমোদনক্রমে দিনাজপুর শিক্ষাবোডের এক প্রজ্ঞাপন জারী করেন। ওই প্রজ্ঞাপনে নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যাবস্থাপনা কমিটির নির্বাচনে মনোনয়নপত্র মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে দেখা গেছে মনোনয়নপত্রের মূল্য সিটি কর্পোরেশন এলাকার ক্ষেত্রে ৩০০০ জেলা ও পৌর এলাকার ক্ষেত্রে ২০০০ ও অন্যান্য এলাকার ক্ষেত্রে ১০০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ কলেজ কতৃপক্ষ এই প্রজ্ঞাপনটি না মেনে মনোনয়ন পত্রের অস্বাভাবিক মূল্য নির্ধারণ করেছেন। অভিযোগকারী এসএম মোশারফ হোসেন বলেন, বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে এবং অধ্যক্ষের পছন্দের ব্যাক্তিরাই যেন শুধু মনোনয়নপত্র ক্রয় করতে পারেন এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্যই মনোনয়ন পত্রের উচ্চ মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রমজানুল হক বলেন, কমিটির সিন্ধান্ত মোতাবেক মনোনয়ন পত্রের মূল্য নির্ধারন করা হয়েছে। আমরা দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালা অনুসরন করিনা। যেহেতু কলেজটি ডিগ্রী এবং অনার্স কোর্স চালু আছে তাই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুসরন করি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় কত টাকা নির্ধারন করা হবে এ রকম কোন নির্দেশনা নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোলাম ফেরদৌস জানান, অভিযোগ পেয়ে অবগত হয়েছি। কিন্তুু আমি ওই কলেজের অথরিটি নই।
এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিকী সরকার বলেন,মনোনয়নপত্রের মূল্য ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করার এখতিয়ার কলেজ কর্তৃপক্ষের নেই। তবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। উল্লেখ্য আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি এই কলেজের গভর্ণিং বডির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে কলেজ কতৃপক্ষ।