তিস্তায় হাটু পানি পায়ে হেঁটে তিস্তা পার হচ্ছে লোকজন

নির্মল রায় গঙ্গাচড়া (রংপুর):
“আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে। পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই “আমাদের ছোট নদী” কবিতার সাথে মিলে গেছে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার করুন চিত্র। তবে তা বৈশাখে নয়, মাঘ মাসেই
তিস্তায় এখন হাটু পানি। পায়ে হেঁটে পার হওয়া যায় তিস্তা নদী।
তিস্তা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। একেবারে ক্ষীন হয়ে এসেছে তিস্তা । তিস্তা নদীর প্রস্থ এখন ২০ থেকে ২৫ ফুট। নৌপথ প্রায় বন্ধ। তিস্তার চরে কাজ শেষে পায়ে হেটে নদী পার হয়ে আসছিলেন গজঘন্টা ইউনিয়নের ছালাপাক গ্রামের মকতুবুল, মনির । এ সময় তারা
জানান, তিস্তায় এখন হাঁটু পানি। পায়ে হেঁটে পার হাওয়া যায় সহজেই। প্রমত্তা তিস্তা ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। কমে এসেছে পানি প্রবাহ। ক্ষীন হয়ে এসেছে নদী। হ্রাস পেয়েছে নাব্যতা। শুষ্ক মৌসুমে জেগে ওঠেছে অসংখ্য চর-ডুবু চর।
তিস্তার বুক জুড়ে প্রতি বছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের সাথে নেমে আসে বালু। ফলে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে প্রতিবছর। শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় নদীর নাব্যতা হ্রাস পাওয়ায় নৌ পরিবহনে দূর্ভোগ বেড়ে যায়। তবে এ বছর বৃষ্টিপাত কম ও পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে তিস্তায় পানি গত বছরের চেয়ে অনেক কমে গেছে। প্রতি বছর তিস্তার তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে হারাতে বসেছে তার অতীত ঐতিহ্য। এক সময় দুর-দুরান্ত থেকে নৌকায় ব্যবসায়ীরা আসতো বাণিজ্য করার জন্য। সেই দৃশ্য এখন তেমন চোখে পড়ে না। সেই সাথে তলদেশ ভরাট হওয়ার কারণে বর্ষা মৌসুমে সহজেই দুকুল ছেপে বন্যা আসে। ভাঙ্গে আবাদী জমি, ঘর-বাড়ি। নিঃস্ব হয় শতশত পরিবার। তাছাড়া পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারনে নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো, তারা আজ অসহায়। নদীতে নেই আর আগের মত মাছ। জেলেরা পেশা বদল করে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়।
উজানে ভারত ব্যারেজ নির্মাণ করে তিস্তার প্রাকৃতিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ফলে বাংলাদেশের ১১২ মাইল দীর্ঘ এই নদী শুকিয়ে এখন মৃতপ্রায়। এর প্রভাব পড়েছে পরিবেশগত ও নৌ-যোগাযোগ ক্ষেত্রে। দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়। প্রকৃতি ক্রমাগত ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। ফলে এই তিস্তা নদীর পাশ্ববর্তী এলাকাগুলোতে পানির স্তর নিম্নমুখী হচ্ছে।
গঙ্গাচড়ার মহিপুর গ্রামের বাসিন্দা দুলাল মিয়া, জয়নাল, মজিবর ঘাটিয়াল এরা পেশা সবাই মৎসজীবী। নিজেদের ভিটেমাটি নেই। তাদের ভাষায়, গত ডিসেম্বর মাস থেকে তারা বলতে গেলে বেকার। নদীতে পানি না থাকায় মাছ মিলছে না। তাই তারা এখন পেশা বদল করে জীবিকা চালাচ্ছে। কাজের সন্ধানে ছুটছে দক্ষিণাঞ্চলে ও ঢাকা শহরে। আর যারা কৃষক পরিবার তারা বেজায় খুশি কারণ জেগে ওঠা চরে চাষাবাদ করে তারা ফসল ফলাচ্ছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আখিনুজ্জামান বলেন, শুকনা মৌসুমে পানিতো একটু কম থাকবে এ ব্যাপারে আমাদের করার কিছু নেই।