৪ চৈত্র, ১৪৩১ - ১৮ মার্চ, ২০২৫ - 18 March, 2025

কুড়িগ্রামের জুঁই জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের কোচ মনোনিত হওয়ায় স্থানীয় ক্রীয়াঙ্গনে আনন্দের বন্যা

আমাদের প্রতিদিন
1 week ago
42


আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রাম:

বাংলাদেশের দুইবারের দ্রুততম মানবী ফৌজিয়া হুদা জুঁই জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের কোচ হিসাবে মনোনিত হয়েছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেটে বোর্ড (বিসিবি) তাঁকে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের স্ট্রেনথ ও কন্ডিশনিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। তাঁর এ নিয়োগ প্রাপ্তির খবরে গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামের ক্রিয়াঙ্গনে আনন্দের বন্যা বইছে। সবাই আনন্দে উদ্বেলিত এবং অনুপ্রাণিত। সাবেক এই দ্রুততম মানবী গত ২১ বছর ধরে নারী লং জাম্পে দেশের রেকর্ডধারী। দক্ষিণ এশিয়ান গেমস লং জাম্পে দুটি রুপা জিতেছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতীক পরিমন্ডলে সাফল্যের ঝুলিতে অর্জন অনেক। বর্তমানে সাভার বিকেএসপিতে অ্যাথলেটিকস কোচ হিসেবে কাজ করছেন। সারা জীবন অ্যাথলেটিকস নিয়েই ছিলেন ব্যস্ত। অ্যাফলেটিকস এ সম্প্রতি তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন। যা বাংলাদেশের প্রথম কোন নারী খেলোয়ারের অর্জন। তার সাফল্যের ধারাবাহিকতায় জুঁইয়ের নামের পাশে আরেকটি পরিচয় যোগ হলো জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের কোচ হিসাবে। বৃহস্পতিবার বিসিবির বোর্ড সভায় জুঁইকে নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

ফৌজিয়া হুদা জুঁই বিসিবি’র নতুন দায়িত্ব প্রাপ্তিতে খুবই খুশি এবং রোমাঞ্চিত । স্বপ্নের সমান এ দায়িত্ব পেয়ে তিনি নিজেকে তৈরী করছেন। অ্যাথলেটিকস মাঠ থেকে এখন নারী ক্রিকেট দলের দায়িত্ব অনেক বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন জুঁই।

জুঁই বলেন, রাস্ট্রের একটি পবিত্র দায়িত্ব এটি। রাস্ট্রের প্রয়োজনে আমি আমার জীবনের অর্জিত অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান দিয়ে জাতীয় নারী ক্রিকেট দলেকে তৈরী করবো। আমার এ স্বপ্ন পুরনে সহায়তা করেছেন-বিসিবির পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিম স্যার । ফাহিম স্যার অনেক দিন ধরে এ নিয়ে ভাবছিলেন। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ এসেছে। আমার জীবন ব্যাপী সোধনা এবং খেলাটাই (অ্যাথলেটিকস) স্ট্রেনথ অ্যান্ড কন্ডিশনিংভিত্তিক। আমি সর্বোচ্চ পর্যায়ে এটা করেছি। একটা কোর্সও করেছি। ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়েই মূলত কাজ করতে হবে আমাকে। স্ট্রেনথ ওন্ড কন্ডিশনিং যেহেতু, কাজটা করতে আমি উন্মুখ হয়ে আছি। নতুন দায়িত্বে নারী ক্রিকেটের ফিটনেস এর কাজটিতে আমি সর্বোচ্চ ঢেলেদিবো।

তিনি আরো বলেন, এত দিন পর নিজেকে অন্য জায়গায় মেলে ধরতে সুযোগ পেয়েছি। নিজেকে চেনাতে চাই। কোয়ালিটি কাজ দেখাতে চাই। এটা আমার জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ধরনের কাজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারলেই সফলতা আসবে বলে আমার বিশ্বাস।

আপাতত তাঁর সঙ্গে বিসিবির ছয় মাসের চুক্তি বলে জানান। বিসিবি থেকে বিকেএসপিকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা করছি দু একদিনের মধ্যে বিকেএসপি অফিসিয়ালী অনুমতি দিবে। অনুমোতি হাতে পেয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে নারী ক্রিকেট দলের সঙ্গে কাজ শুরু করবো।

সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে খেলা পাগল জুঁই আজ জাতীয় পর‌্যায়ে আলোকিত মানুষ। পশ্চাদপদ জেলা থেকে উঠেআসা মেয়ে । দেখেছেন দেশের নারী খেলার অনেক চড়াই–উতরাই। সেই অভিজ্ঞতায় জুঁই বলেন, আমাদের দেশে এখন ক্রীড়া পরিবেশ গড়ে উঠছে। আগে এ রকম ছিল না। এখন মেয়েরা সকল বাঁধা পেরিয়ে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। আমি অভিভুত আমাদের মেয়েরা অনেক ভালো করছে।  আমি চাই, মেয়েরা এগিয়ে আসুক, ভালো জায়গায় যাক। মেয়েরা যাতে ভালো কিছু করতে পারে, তার জন্য নিজেকে উজাড় করেদেবো।

কুড়িগ্রামে আনন্দ জুঁইয়ের জন্ম কুড়িগ্রাম জেলা শহরের খলিলগন্জ বাজার সংলগ্ন ডাক্তার পাড়ায়। বাবা নুরুল হুদা ছিলেন ব্যবসায়ী এবং সমাজ সেবক। প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগেই। ৫ ভাই ও ৭ বোনের মধ্যে জুঁই সবার ছোট এবং আদরের।

জুঁইয়ের বড় ভাই সহকারী অধ্যাপক জিয়াউল হুদা বলেন, জুঁই নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছে খেলার জন্য। তার ধারা বাহিক সাফল্যে আমরা অহংকার করি। বিসিবি জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের কোচ হিসাবে নিয়োগ দেয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত এবং গর্বিত। আমাদের আদরের এ বোনটি সংসার বিত্তবৈভবের দিকে না তাকিয়ে খেলাকে নিজের জীবনের ধ্যান এবং জ্ঞান হিসাবে নিয়েছে। নিজের ক্যারিয়ার গড়েছে। তার এই অর্জন জাতিকে দিতে পারবে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে জাতীয় নারী টিমকে এগিয়েনিক জুঁই এ শুভকামনা আমাদের । জুঁইয়ের পাশে পরিবারের সবাই আছি। আমরা সবার দোয়া, আশীর্বাদ ও শুভাশিষ কামনা করছি।

কুড়িগ্রামের গ্রামীণ ফুটবল বিপ্লবী জালাল হোসেন লাইজু বলেন,কুড়িগ্রাম জেলার একমাত্র খেলোয়ার যে, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছে। কঠোর অধ্যাবসায়ের মধ্য দিয়ে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট হয়েছেন।ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের ডিভলোপের কাজ করছেন। তার এ অর্জনের জন্য কুড়িগ্রামের খেলোয়াররা উৎসাহী বোধ করছে। অনুপ্রেরণা পাচ্ছে সামনের পথে এগিয়ে যেতে। যে কোচ বিদেশ থেকে আনতে হয়। সে দায়িত্ব নিচ্ছে আমাদের এলাকার মেয়ে জুঁই এটা যে কত গর্বের এবং মর্জাদার তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।

জুঁইয়ের অর্জন

অনুসন্ধানে জানাযায়,বাংলাদেশের নারী অ্যাথলেটদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি সফল জুঁই। দেশের দ্রুততম মানবী হয়েছেন দুবার-২০০০ সালে প্রথম, ২০০২ সালে বাংলাদেশ গেমসে দ্বিতীয়বার। এর মধ্য দিয়ে দেশ ব্যাপী ব্যাপক পরিচিতি পায় জুঁই। এরপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি জুঁইকে। একর পর এক সফলতা ধরাদেয় জুঁইয়ের হাতে। ২০০৪ ও ২০০৬ দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে লং জাম্পে রুপা জিতেছেন। ২০০৪ সালে মালয়েশিয়া ১১তম এশিয়ান জুনিয়র অ্যাথলেটিকসে (অনূর্ধ্ব–২১) লং জাম্পে জেতেন ব্রোঞ্জ। এই অর্জন বাংলাদেশের আর কারও নেই। তেহরানে তৃতীয় ইসলামিক গেমসে ৬০ মিটার স্প্রিন্টে জেতেন ব্রোঞ্জ। করাচিতে ৭ দেশের আমন্ত্রণমূলক অ্যাথলেটিকসে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে জেতেন সোনা। ঘরোয়া অ্যাথলেটিকসে লং জাম্পে তাঁর সোনার সংখ্যা ১৩-১৪টি।

ইউনিভার্সিটি সায়েন্স মালয়েশিয়া থেকে কোচিংয়ের ওপর পিএইচডি করেছেন। চাইলে এখন নামের পাশে ডক্টর লিখতে পারেন। তবে জুঁই চান বিকেএসপির অনুমতি নিয়ে লিখতে, যেহেতু বিকেএসপির অনুমতি নিয়েই পিএইচডি করেছেন। ২০০৬ সালে পেয়েছেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। ২০১০ সালে তিনি খেলোযার জীবনের ক্যারিয়ারের ইতি টেনে শুরু করেন নতুন ক্যারিয়ার। বিকেএসপির অ্যাথলেট কোচ হিসাবে যোগদেন। হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অ্যাথলেট তৈরীর কারিগর। এই বিকেএসপিতে এক সময় পড়েছেন জুঁই। জুঁই নৈরাজ্যবাদী নন বরং আশাবাদী মানুষ। তারহাত ধরেই আগামীতে বাংলাদেশের জাতীয় নারী ক্রিকেট দল সাফল্য নিয়ে আসবে এমনটা প্রত্যাশা সবার।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth