৩১ আষাঢ়, ১৪৩২ - ১৫ জুলাই, ২০২৫ - 15 July, 2025

ফুলবাড়ীতে ২২০ ফুট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে পড়েছে সাঁতার দিয়ে পাড়াপাড়

3 weeks ago
41


আব্দুল আজিজ মজনু:

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে ২২০ ফিট লম্বা বাঁশের সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বারোমাসিয়া নদীর দুপাড়ের হাজারও মানুষ।  ফলে চরম ভোগান্তি নিয়ে নদী সাঁতরিয়ে পারাপার হচ্ছেন দুপাড়ের হাজারও মানুষ। বিশেষ করে চরম ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে কোমলমতি শিশু, শিক্ষার্থীসহ নারীরা। এটি দ্রুত সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন দুপাড়ের বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে,উপজেলার কিশামত শিমুলবাড়ী নবিউলের /আমিন মেম্বারের ঘাট নামে পরিচিত। সাকোঁটি বারোমাসিয়া নদীতে স্থানীয়দের উদ্যোগে তৈরি করে লোকজন পারাপারের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। এটি ১ মাস হলো ভেঙে পড়ার পর আজও মেরামত বা নতুন করে মেরামত না হওয়ায় সাকোটির দুপাড়ের বাসিন্দারা এক বুক নদীর পানি পাড়ি দিয়ে  হেঁটে পাড় হচ্ছেন। অনেকে আমার নদী সাঁতরিয়েও পারাপার করতেও দেখা গেছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে বারোমাসিয়া নদীটি পারাপার হয়েছেন ছোট ছোট ডিঙি ও মাঝারি নৌকা দিয়ে। সেই সময় থেকে করিমের, নবিউলের সর্বশেষ  আমিন মেম্বারের ঘাট ইজারাদারের মাধ্যমে পারাপার  হতো মানুষজন। এরপর বারোমাসিয়া নদীর আঁকার ছোট হওয়ায় দুপাড়ের বাসিন্দাদের উদ্যোগে বাঁশের সাকো তৈরি করা হয়। সেই সময় থেকে ২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রায় টানা ১০ বছর ধরে বাঁশের সাকো দিয়ে দুই পাড়ের হাজারও মানুষ পাড়াপাড় করে আসছেন।

এরই মধ্যে ২৫ থেকে ২৬ দিন আগে সাঁকোর নিচে কচুরিপানা জমে হঠাৎ নদীর তীব্র স্রোতে নড়েবড়ে বাঁশের সাকোটি ভেঙে যায়। সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় দুপাড়ের বাসিন্দারা নদী সাঁতরিয়ে পারাপার করছে। এখন চরম ভোগান্তিতে রয়েছে নদীর দু’পাড়ের লোকজনসহ কিশামত শিমুলবাড়ী, চরগোরকমন্ডল, ঝাঁউকুটি, পশ্চিম ফুলমতি, নাওডাঙ্গা, হকবাজার এবং পাশ্ববর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাহাট ইউনিয়নের চরখারুয়া ও খারুয়াসহ ৮ গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ নদী পাড়াপাড়ে বিপাকে পড়েছেন।

স্থানীয় মর্জিনা ও জাহানারা জানান, আজ এক মাস ধরে এতো কষ্ট করে নদী পারাপার করছি, কেউয়ে খোঁজ নিতে আসেননি। এখন স্কুল বন্ধ। কয়েকদিন পর স্কুল খুললেই আমাদের ছেলে মেয়েদের অনেক কষ্ট হবে। আমরা স্কুল খোলার আগেই সাঁকোটি মেরামত করার দাবি জানাচ্ছি।

লালমনিরহাটের উপজেলার চর খারুয়া এলাকার বাসিন্দা তসলিম উদ্দিন জানান,আমাদের এলাকার ছেলে মেয়েরা নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড ও বালারহাট আদর্শ স্কুলে পড়েন। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা চরম দুর্ভোগ নিয়ে আসা যাওয়া করছি।

চর খারুয়া এলাকার শিক্ষার্থী জুয়েল রানা, খারুয়ার মাসুদ রানা ও ঝাউকুটি এলাকার শিক্ষার্থী হাসানুর রহমান জানান, এখন স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় মাঝে মধ্যে সাঁতরিয়ে নদী পার হচ্ছি। কয়েকদিন পর স্কুল কলেজ খুলবে তখনতো বই,খাতাপত্রসহ নদী সাঁতরিয়ে স্কুল কলেজে য়যতে হবে। তারা দ্রুত সাঁকোটি মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।

বিশিষ্ট মৎস্য খামারি আতাউর রহমান রতন ও মজিবর রহমান বাবু জানান, নদী ওপারে আমরা মাছ চাষ করছি। সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছি। নদীর ওপারে বিশাল বিশাল মৎস্য খামার রয়েছে। আমরা মাছের খাদ্য সামগ্রী পারাপার করতে পারছি না। মাছের খাদ্য ও মাছ বিক্রি করতে পাড়ছি না।  দিনে যত বারেই পারাপার হয় ততবারেই নদী সাঁতরিয়ে যেতে হয়। এখন পর্যন্ত কেউয়ে সাঁকোটি মেরামতের উদ্যোগ নিচ্ছেন না।  যদি কেউ মেরামতের উদ্যোগ নেয়, আমরাও আর্থিক সহযোগিতা করবো।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: হাছেন আলী জানান, আমাদের ৬ নং ওয়ার্ডে বারোমাসিয়া (বাণিদাহ) নদীতে একটি সাঁকো আছে। সেই সাঁকো দিয়ে দুপাড়ের হাজার হাজার মানুষ পারাপার করতেন। কিন্তু গত এক মাস আগে তীব্র স্রোতে সাঁকোটি ভেঙে যাওয়ায় পারাপারের চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। স্কুলের ছেলে মেয়েরা পাড় হতে পারছেন না। অনেকেই এক বুক পানিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড় হচ্ছেন। সবার যৌথ উদ্যোগে ভেঙে যাওয়া সাঁকোটি দ্রুত পূর্ণ:নির্মাণ করা খুবই জরুরি।  তিনি এলাকাবাসী এগিয়ে আসার আহবান জানান। সেই সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজউদ্দৌলা জানান, সরেজমিন পরিদর্শন করে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এরপর বরাদ্দ আসলে সেখানে একটি বাঁশের সাঁকো পূর্ণ :নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth