রংপুরে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি

দাবি আদায় না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আল্টিমেটাম
নিজস্ব প্রতিবেদক:
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার হুমকি, পেশাগত সমস্যার সমাধানে গঠিত অসম কমিটি প্রত্যাখ্যান এবং ডিগ্রি প্রকৌশলীদের অযৌক্তিক তিন দফা দাবি বাতিলের দাবিতে রংপুরে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখা।
মঙ্গলবার সকাল ১১টায় রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শাপলা চত্বরে এসে অবস্থান নেয়। এ সময় পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হয়, ফলে সাধারণ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, বিএসসি প্রকৌশলীরা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের হত্যার হুমকি দিয়েছে এবং নবম গ্রেড ধরে রাখার পাশাপাশি অন্যায়ভাবে দশম গ্রেডেও হস্তক্ষেপ করছে। তারা বলেন, বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের তিন দফা দাবি বাতিল করতে হবে এবং ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে।
রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী আঞ্জুমানয়ারা চাঁদনী বলেন, “বিএসসি ইঞ্জিনিয়াররা আমাদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। তারা নবম গ্রেড ধরে রেখেও এখন দশম গ্রেডে হস্তক্ষেপ করছে। দশম গ্রেড আমাদের অধিকার, আমরা কোনোভাবেই এটি ছেড়ে দেব না।”
একই বিভাগের শিক্ষার্থী সানজিদা জাহিম বলেন, “অন্যায়ভাবে দশম গ্রেড দখল ও হত্যার হুমকির প্রতিবাদে আমরা মাঠে নেমেছি। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ময়নুল ইসলাম মিল্লাত বলেন, “বিএসসি ও ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে গঠিত কমিটিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের ৮০% এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাত্র ২০% রাখা হয়েছে, যা বড় ধরনের বৈষম্য। এ বৈষম্যের প্রতিবাদেই আমাদের এই কর্মসূচি। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে কেউ সন্ত্রাসী আন্দোলন আখ্যা দিলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি তিনি বলেন, আমরা যে দাবিগুলো নিয়ে আজকে অবস্থান নিয়েছি, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার একটি সুস্থ সমাধান না দেয়া হলে, আমরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকবো।”
এদিকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারদের দাবির মধ্যে রয়েছে— নবম গ্রেডে (অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বা সমমান) পদে কেবল বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারীদের যোগ্য ঘোষণা ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে দশম গ্রেডের (সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার বা সমমান) পদে নিয়োগ পরীক্ষায় বিএসসি ও ডিপ্লোমা উভয় প্রকৌশলীর অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত করা। এছাড়া “ইঞ্জিনিয়ার” শব্দ ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং বিএসসি প্রোগ্রামসমূহকে আইইবি-ব্যাতে (IEB-BAETE) অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা বিদ্যমান দশম গ্রেডে তাদের নিয়োগ অব্যাহত রাখা এবং পদোন্নতিতে নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার দাবি তুলেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও মাঠপর্যায়ের কাজে তাদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করা এবং পেশাগত মর্যাদা রক্ষায় আইনগত সুরক্ষা প্রদানের কথাও তারা উল্লেখ করেন। পাশাপাশি “সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার” পদবী বহাল রাখা, সরকারি চাকরিতে ডিপ্লোমাধারীদের সুযোগ বৃদ্ধি এবং পদোন্নতি ও পদায়নে বৈষম্য দূর করে সমান সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
আন্দোলন চলাকালে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের বিষয়টি লিখিত আকারে তাদের কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিলে দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেন।