নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক নির্বাচনী উদ্যোগে রংপুরে আঞ্চলিক পরামর্শ সভা
নিজস্ব প্রতিবেদক:
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-এর সম্মানিত ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন, রাজনীতিক সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, নির্বাচন কমিশনার দৃশ্যমান ব্যবস্থা গ্রহণ গ্রহণ নেয়নি, যথাযথ ভোট গণনা, সরকারের রাজনীতি নিরপেক্ষতা প্রয়োজন, গণভোট নিয়ে অনেক বিভ্রান্তির কথা উঠেছে এসেছে এই প্রাক নির্বাচনী সভায়।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে গিয়ে নিতে হলে সংস্কার অপরিহার্য।
লুটপাটের যে সংস্কারবিরোধী জোট তৈরি হয়েছিল, সেটি ভাঙতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি রাজনীতিবিদরা বিষয়টি উপলব্ধি করবেন এবং নির্বাচনের ইশতেহারে তা প্রতিফলিত করবেন। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার একা সব করতে পারবে না, আগামী দিনের সরকারকেও এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।’
শনিবার দুপুরে রংপুর নগরীর আরডি আর এস
হলরুমে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগ হিসেবে আয়োজিত আঞ্চলিক পরামর্শসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে নাগরিক ইশতেহার প্রণয়নের লক্ষ্যে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন,
‘আমলাতন্ত্রের কারণে শ্বেতপত্র ও বিভিন্ন টাস্কফোর্স রিপোর্ট বেশি দূর এগিয়ে নেওয়া যায়নি—এটি পরিতাপের বিষয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সংস্কারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা তার সহযোগী ও আমলাতন্ত্র এগিয়ে নিতে পারেনি। ফলে প্রধান উপদেষ্টা যে আগ্রহ নিয়ে অর্থনীতির শ্বেতপত্র প্রণয়ন, টাস্কফোর্স গঠনসহ বিভিন্ন সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা আশানুরূপ গতি পায়নি।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘অতীতে দৃশ্যমান উন্নয়নের নামে স্কুল-কলেজে কেবল ভবন হয়েছে, কিন্তু শিক্ষার মান বাড়েনি। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত না খেয়ে থাকে—তাদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেনি সরকার। অথচ আমাদের সেই সক্ষমতা আছে। আগামী নির্বাচনে যে সরকার আসবে, তারা যেন সব শিক্ষার্থীর দুপুরের খাবার নিশ্চিত করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশে চামচা পুঁজিবাদী অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই পুঁজিবাদে চামচারা দেশে লুটপাট ও চোরতন্ত্র কায়েম করেছিল।
রাষ্ট্রের পুরো কাঠামোকে তারা এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছে। এরা সংস্কারবিরোধী জোট। তাদের এই জোট অবশ্যই ভাঙতে হবে।’
ড. দেবপ্রিয় বলেন, ‘সংস্কার প্রণয়ন করা যত সহজ, বাস্তবায়ন তত সহজ নয়। আগামী দিনে যারা দেশ পরিচালনা করবেন, তাদের এ ব্যাপারে আগ্রহী ও আন্তরিক থাকতে হবে। অন্যথায় জনতা এখন জেগে গেছে—তাদের শুধু প্রতিশ্রুতি দিলে হবে না, বাস্তবায়ন করতেই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেক রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে কথা হয়, যারা আগামীতে ক্ষমতায় যাওয়ার অবস্থানে আছেন। তারা বলেন—নির্বাচন তো হবেই, কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে দেশ চালাব কীভাবে? অর্থাৎ নতুন বন্দোবস্তের প্রয়োজনীয়তা তারাও উপলব্ধি করছেন।’
এ সময় উপস্থিত বক্তারা বলেন
অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো অনেক আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন করেনি। তবে এখন আমরা পরিবর্তনের আশায় আছি। আমাদের ভবিষ্যৎ আর অতীতের মতো হবে না। গত বছরের জুলাইয়ে আমরা একটি বড় পরিবর্তনের পথ তৈরি করেছি। আগামীর রাজনীতি ও সরকারকেও সেই পথ ধরে এগোতে হবে।’