৪ পৌষ, ১৪৩২ - ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 19 December, 2025

অতিমুনাফার আশায় তামাক চাষ করছেন ডিমলার কৃষকরা

9 hours ago
31


মোঃ হাবিবুল হাসান হাবিব, ডিমলা (নীলফামারী):

নীলফামারীর ডিমলায় অতিমুনাফার আশায়  কৃষকেরা আবারও নিষিদ্ধ তামাক চাষ করছেন। এতে ফলে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপজেলায় তামাক চাষে কমে যাচ্ছে খাদ্যশস্য উৎপাদন । সরকার তামাক ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন ও ব্যবহার কমাতে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপরও উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে তামাক চাষ দিন দিন বাড়ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তামাক চাষ বৃদ্ধির পেছনে তামাক কোম্পানিগুলোর আর্থিক সহায়তা ও নানা প্রলোভন বড় ভূমিকা রাখছে। কোম্পানিগুলো কৃষকদের নগদ অর্থ সহায়তা, সহজ শর্তে ঋণ, বিনা মূল্যে বীজ ও সার, চাষকালীন খরচ বহন এবং আগাম চুক্তিতে নির্দিষ্ট দামে তামাক কেনার নিশ্চয়তা দিচ্ছে। এতে অনেক কৃষক তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অন্যান্য ফসলের তুলনায় তামাকের ফলন বেশি এবং স্থানীয় বাজারে সহজেই বিক্রি করা যায়। নিশ্চিত ক্রেতা থাকায় লোকসানের আশঙ্কা কম বলে মনে করছেন তারা। তবে এর ফলে তামাক চাষপ্রবণ এলাকার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বাড়তি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন।

কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন তামাক চাষ করলে জমির উর্বরতা কমে যায়। অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের কারণে মাটি ও পানিদূষণ বাড়ে। তামাক পাতা সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতের সময় নারী ও শিশুশ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ডিমলার কিছু এলাকায় গত দুই বছর আগে প্রশাসনিক উদ্যোগে তামাক চাষ কমে এসেছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তামাক কোম্পানির সক্রিয় তৎপরতা এবং সার সংকটের কারণে আবারও এই চাষ বাড়তে শুরু করেছে। অনেক কৃষকের অভিযোগ, তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে তাদের পর্যাপ্ত ধারণা নেই। পাশাপাশি তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে কৃষি বিভাগের কার্যকর উদ্যোগও সীমিত।

তামাক চাষে জড়িত কৃষকরা জানান,  এখন পর্যন্ত বড় কোনো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েননি। কৃষি অফিস থেকে সরাসরি কঠোর নির্দেশনা না পাওয়ায় তারা স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও জীবিকার তাগিদে তামাক চাষ চালিয়ে যাচ্ছেন।

বন্দর খড়িবাড়ি গ্রামের কৃষক শাজাহান আলী বলেন, বাপ-দাদার আমল থেকেই তারা তামাক চাষ করে আসছেন। তার মতে, তামাক চাষে তাদের কোনো ক্ষতি হয় না। কৃষি অফিসের লোকজন গত দুবছর আগে তামাক চাষ করতে নিষেধ করছেন । এখন কেউ বলে না।  তিনি বলেন, গত বছর  জমিতে তামাক চাষ করেছিলেন। এ বছর আরও বেশি জমিতে চাষ করেছেন। খরচ কম এবং বাজারে তামাক পাতার চাহিদা ভালো থাকায় অন্য ফসলের তুলনায় এতে লাভ বেশি।

টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চর খড়িবাড়ি এলাকার কৃষক ওমর আলী মুন্সি বলেন, “সরকারি সহায়তা ও নিশ্চিত বাজার পেলে আমরা সহজেই তামাক ছেড়ে লাভজনক বিকল্প ফসল চাষে যেতে পারব।

নাউতারা ইউনিয়নের গোদার বাজার এলাকার কৃষক আব্দুল মজিদ বলেন, “তামাক চাষে মাটির ক্ষতি হয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। সরকার যদি বিকল্প ফসল চাষে সহায়তা দেয়, তাহলে তামাক কমিয়ে অন্য ফসল চাষে আগ্রহী হব।”

তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করে সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, “তামাক চাষে জমি নষ্ট হয় এবং পরিবারের স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ প্রভাব পড়ে। সরকার বিকল্প লাভজনক ফসলের সহায়তা দিলে কৃষকেরা তামাক ছেড়ে অন্য ফসল চাষে যেতে পারবেন।”

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছর উপজেলায় মাত্র ১৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাস্তবে সরকারি হিসাবের দ্বিগুণ জমিতে তামাক চাষ হয়েছে।

ডিমলা উপজেলা কৃষি অফিসার মীর হাসান আল বান্না বলেন, “তামাক চাষ মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, খাদ্যশস্য উৎপাদন কমায় এবং পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। আমরা কৃষকদের তামাকের পরিবর্তে ধান, ভুট্টা, সবজি ও ফলজাত ফসল চাষে উৎসাহিত করছি।”

ডিমলা উপজেলা পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুজ্জামান বলেন, “তামাক চাষের এলাকায় বসবাসকারী মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা নানা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। জনস্বার্থে তামাক চাষ বন্ধ করা জরুরি।”

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth