৮ পৌষ, ১৪৩২ - ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 22 December, 2025

রংপুরে গ্রাম আদালত সচেতনতা সভা অনুষ্ঠিত

2 hours ago
34


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) গ্রাম আদালত কার্যক্রম সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্থানীয় অংশীজনদের নিয়ে সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসান। সভার সভাপতি ছিলেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক খৃষ্টফার হিমেল রিছিল।

সভায় জেলার প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সমাজ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করেন।

অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপপরিচালক, স্থানীয় সরকার, রংপুর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপ-পরিচালক (সমাজসেবা, মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর), ইসলামিক ফাউন্ডেশন, জেলা তথ্য কর্মকর্তা, আনসার-ভিডিপি প্রতিনিধি, বিটিভি প্রতিনিধি, কেবল অপারেটর, সাংবাদিক, যুব সংগঠনের প্রতিনিধি, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন এনজিও-আরডিআরএস, ইএসডিও, ইউএনডিপি, গ্রামীণ ব্যাংকসহ অন্যান্য সদস্যরা।

সভায় বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালত হলো প্রান্তিক পর্যায়ের নাগরিকদের ন্যায়বিচারের সহজ ও দ্রুত সেবা পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। গ্রামের মানুষের সামান্য বিরোধ, ছোটখাটো ঝামেলা এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক সংঘাতগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির মাধ্যমে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখাই গ্রাম আদালতের লক্ষ্য।

বাংলাদেশের গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬ অনুসারে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম আদালত গঠিত হয়। এখানে তিন লাখ টাকা মূল্যমান পর্যন্ত ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায় এবং এতে মামলা মোকদ্দমার ব্যয় অত্যন্ত কম। অভিযোগ দাখিল করতে মাত্র ১০ টাকা ও দেওয়ানি মামলায় ২০ টাকা ফি জমা দিলেই মামলা নেওয়া হয়। দ্রুত বিচার, কম খরচ, সময় বাঁচানো এবং উভয় পক্ষের সমঝোতার মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি হওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি প্ল্যাটফর্ম।

সভায় উল্লেখ করা হয়, গ্রাম আদালত চুরি, প্রতারণা, চাঁদাবাজি, আঘাত, জমি দখল, জোরপূর্বক প্রবেশসহ আরও বিভিন্ন ক্ষুদ্র অপরাধ নিষ্পত্তি করতে পারে। একইভাবে পারিবারিক বিরোধ, দেনা-পাওনা, জমিজমা সংক্রান্ত মতবিরোধ, ক্ষুদ্র আর্থিক লেনদেন, সম্পত্তি বিতর্ক, ক্ষতি পূরণ দাবি ইত্যাদিও গ্রাম আদালতের মাধ্যমে সমাধান হয়। এর ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী থানামুখী মামলা বা ব্যয়সাপেক্ষ আদালতের ঝামেলা এড়িয়ে দ্রুত সমাধান পান।

সভায় বক্তারা বলেন, গ্রাম আদালত নাগরিকদের ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকর ভূমিকা রাখছে। বিশেষ করে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী এর সুবিধা পাচ্ছে বেশি। এতে বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা বাড়ছে এবং সামাজিক সম্প্রীতি সুদৃঢ় হচ্ছে।

প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “গ্রাম আদালত কার্যকর হলে গ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে, সামাজিক সমস্যার দ্রুত সমাধান হবে এবং জনগণ ন্যায়বিচার পেতে আরও উৎসাহিত হবে। আমরা চাই, প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বিচার প্রাপ্তিতে সক্ষম হোক।” তিনি সংশ্লিষ্টদের গ্রাম আদালত কার্যক্রম আরও গতিশীল ও শক্তিশালী করার নির্দেশনা দেন।

সভায় স্থানীয় সরকার বিভাগ বাস্তবায়িত “বাংলাদেশে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প”-এর অধীনে সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা জোরদার করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বক্তারা গ্রাম আদালত সম্পর্কে জনগণের মধ্যে তথ্য প্রচার, প্রশিক্ষণ, গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও মিডিয়া সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। প্রোগ্রামের আয়োজনে ছিল জেলা প্রশাসন, রংপুর। সভা শেষে অংশগ্রহণকারীরা গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রসপেক্টাস, তথ্যচিত্র ও প্রচার উপকরণ পরিদর্শন করেন।

সভায় বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গ্রাম আদালত সমন্বিত উদ্যোগ, জনসম্পৃক্ততা এবং প্রশাসনিক সহায়তায় আরও কার্যকর ও জনবান্ধব হয়ে উঠবে। এতে গ্রামাঞ্চলে শান্তি, ন্যায়, নৈতিকতা ও সামাজিক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠিত হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth