১৭ পৌষ, ১৪৩২ - ৩১ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 31 December, 2025

গোবিন্দগঞ্জে কাদের স্বার্থে চলছে অবৈধ ইটের ভাটা॥ পরিবেশ,কৃষি ও জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে

2 hours ago
14


প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন উঠেছে

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা ) প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় চলতি বছর প্রায় ৩৫ থেকে ৪০টি ইট ভাটা ছলামান রয়েছে। সরকারি আইন বিধি অমান্য করে কাদের স্বার্থে চলছে অবৈধ ইটের ভাটা। অনেক স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন আবার কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠছে  ইটভাটা। যত্রতত্র  ইটভাটার কারণে তিন ফসলি আবাদী জমির সফল ও গাছের ফল নষ্ট হচ্ছে। সেই সাথে কয়লার পাশপাশি জ্বালানী কাঠ পোড়ানোয় হুমকির মুখে পরেছে এলাকার পরিবেশ প্রকৃতি। এসব ইটভাটা স্থাপনে স্থানীয়দের অভিযোগ থাকলেও  আইন অমান্যকরে  চলছে ইটভাটার ইট পড়ানোর কার্যক্রম। দিনরাত প্রকাশ্যে ইটভাটা গুলো আবাদী জমির টপ সয়েল বা উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরী ও পড়ানোর কার্যক্রম চালালেও স্থানীয়দের অভিযোগ। অবৈধ ইট ভাটার কার্যকর ব্যাবস্থা না নেওয়ায় প্রশাসনের  ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তদারকি না থাকায়  প্রতিবছরই অবৈধ ইট ভাটা চরম ক্ষতির শিকার হচ্ছেন স্থানীয়রা। ইটভাটা গুলো ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের পূর্ব অনুমতি নেওয়ার বিধান থকলেও তা মানা হচ্ছেনা।

সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলায় মাত্র ৬টি ইটভাটার লাইসেন্স থাকলেও তা মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা এলাকাসহ উপজেলার ভাটার সংখ্যা প্রায় ৩৬টি। উপজেলা কাটাবাড়ী,সাপমারা, কামারদহ, নাকাই, দরবস্ত, মহিমাগঞ্জ, কোচাশহর, শিবপুর রাখালবুরুজ ইউনিয়নে এই ইট ভাটা গুলির অবস্থান।  এর মধ্যে মাত্র ৬টি ইটভাটা তাদের কার্যক্রম পরিচালনাার সরকারি অনুমোদন জানালেও বাকি প্রায় ৩০টি ইটিভাটার কোন লাইসেন্স না নেই তবে তারা সরকারি আইন বিধি অমান্য করে প্রশাসনের নাকের ডগায় ইট পড়ানোর কার্যক্রম চালাচ্ছে। এসব হটভাটার নেই কোন পরিবেশের ছাড়পত্র। ভাটা গুলির ইট তৈরীতে ব্যবহার করা হচ্ছে আবাদী জমির উর্বর অংশের মাটি (টপসয়েল)। বিভিন্ন প্রলোভনে সামান্য অর্থের  বিনিময়ে কৃষকদের কাছ থেকে এই কৃষি জমির মাটি কিনে নিচ্ছেন ভাটার মালিকরা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আবাদী জমি। এছাড়াও ভাটায় অবাধে ছোট বড় গাছ গাছড়া পোড়ানোর ফলে কালো ধোঁয়া পার্শ¦বর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়ায় অহরহ পরিবেশ দুষণসহ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বাস্থ্য ও কৃষি,পরিবেশ এবং প্রকৃতি। পুনতাইড়, ফাঁসিতলা সহ বেশ কয়েকটি স্থানে স্কুল ও শিক্ষাপ্রষ্ঠিানের পাশেই ইটভাটা গড়ে তোলায় ভাটা এলাকা শিক্ষার্থী ও  এলাকার মানুষের  সারা  বছর শ্¦াসকষ্টসহ নানা ধরণের অসুখে ভুগে থাকেন।  ইটভাটা কালো ও বিষাক্ত ধোঁয়ায়  নারিকেল, সুপারী, আম, কাঠাল সহ মৌসুমী ফল ফসলের ফলন নষ্ট হচ্ছে। প্রতি বছর ভাটা এলাকায় ফল ফসল নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

পৌর শহরের পূর্ব পান্তা পাড়ার দুই কৃষক জনান ইটভাটা চলার কারনে তাদের ফল ফসল উৎপাদনে ক্ষতিকর প্রভাব পরছে। এতেকরে ফসলে প্রভাব পড়ায় উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ফলন কমে যাচ্ছে। গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিলাস কুমার ভট্টাচার্য্য মুঠো ফোনে জানান বোয়ালিয়া এলাকার তার এক কৃষকের প্রনোদনা দেওয়া ফসলের জমি মাটি ইটভাটা কেটে নিয়ে গেছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ এসব ইটভাটা নাকি চলছে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরকে ম্যানেজ করে। 

এ বিষয়ে সাংবাদিকরা মুঠো ফোনে বার চেষ্ঠা করেও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাaদক জাহিদুল ইসলাম সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে গোবিন্দগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহিদ এর কাছে উপজেলায় অবৈধ ইট ভাটার সঠিক সংখ্যা সহ এসব বিষয়ের জানতে চাইলে তিনি কোন তথ্য না জানিয়ে এরিয়ে যান।

গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মেহেদী হাসান জানান তিনি যোগদানের পর ইটভাটা স্থাপনের নতুন করে প্রত্যায়ন দেওয়া হয়নি। ইটভাটার করনে কোন ফসলের ক্ষতিহলে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

চলতি বছরের ১০ ডিসেম্বর গাইবান্ধা পরিবেশ অধিদপ্তর ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামশিদ ইরাম খানের নেতৃত্বে উপজেলার কামারদহ ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন মেসার্স উৎস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মাত্র ইটভাটায় অভিযান চালায়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধভাবে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ (সংশোধিত ২০১৯) মোতাবেক মেসার্স উৎস এন্টারপ্রাইজ ইটভাটার সত্ত¦বাধিকারী আবু তালেব মন্ডলকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে। গাইবান্ধা পরিবেশ অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালক উত্তম কুমার মুঠো ফোনে অবৈধ ইট ভাটার বিরুদ্ধে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানের বিষয়ে না জানিয়ে অফিসে যাওয়ার আহবান জানান।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার  সৈয়দা ইয়াসমিন সুলতানা মুঠোফোনে জনতে চাওয়া হলে অবৈধ পরিবেশ দুষণকারী সকল ইট ভাটার ব্যাপারে ফোনে কোন কথা না বলে তার অফিসে ডাকেন। দায়িত্বশীল কর্মকতাদের তথ্য না দিয়ে এমন রহস্য জনক ভূমিকায় হতাশ গণমাধ্যম কর্মীরা। বেসরকারি সংস্থা নিপো’এর নির্বাহী পরিচারক পরিবেশকর্মী আহম্মাদুল্লা বলেন অবৈধ ইট ভাটার ব্যাপরে প্রশাসনকে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করার আহবান জানান। সেই সাথে ইটভাটা মালিকদের সচেতন হতে হবে প্রকৃতি,পরিবেশ যাতে ক্ষতি না হয় এমন ফাকা অকৃষি জমিতে ভাটা স্থাপন করা এবং মানুষ ও জমির ফসল,প্রাণিকুলের যাতে কোন প্রকার ক্ষতি সেদিকে লক্ষ রাখা। এছাড়াও স্কুল আবাদী জমি অথবা জনবহুল লোকালয়ে যেসব ভাটা স্থাপন করা হয়েছে তা সরিয়ে নেওয়া আহবান জানান এ পরিবেশ প্রেমী।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth