৩১ ভাদ্র, ১৪৩১ - ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ - 15 September, 2024
amader protidin

প্রায় পৌনে ৩’শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য অনুযায়ী নৌপথে কান্তজীউ বিগ্রহ নিয়ে আসা হলো দিনাজপুরের রাজবাড়ীতে

আমাদের প্রতিদিন
3 weeks ago
45


নদীর দুধারে ভক্ত-পূণ্যার্থীর ভীড়:বিরাজমান পরিস্থিতির জন্য এবার উপস্থিতি কিছুটা কম

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

প্রায় পৌনে তিন’শ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য ও রাজ পরিবারের প্রথা অনুযায়ী দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দির হতে শ্রী শ্রী কান্তজিউ বিগ্রহ নৌপথে নিয়ে আসা হলো দিনাজপুর শহরের রাজবাটী মন্দিরে। সনাতন ধর্মালম্বীদের ভগবান শ্রী কৃষ্ণের আরেক রূপ কান্তজীউ বিগ্রহ নিয়ে আসাকে কেন্দ্র করে ঢেপা নদীর দু’তীরে প্রতিবছর ভক্ত—পূণ্যার্থীর ভীড়ে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উৎসবের আমেজে পরিণত হয়। তবে দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারনে এবার উপস্থিতি কিছুটা কম। প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবার মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনীসহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

রাজবংশের প্রথা অনুযায়ী জন্মাষ্ঠমীর একদিন আগে কান্তজীউ বিগ্রহ ধমীর্য় উৎসব—উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দিনাজপুরে নিয়ে আসা হয়। সেই রীতি অনুযায়ী শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল ৭ টায় ঐতিহ্যবাহী কান্তনগর মন্দিরে পূজা অর্চনা শেষে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ মন্দির থেকে পদব্রজে ঢেপা নদীর কান্তনগর ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে বিশাল নৌবহর নিয়ে যাত্রা শুরু হয় দিনাজপুর শহরের সাধুঘাটের উদ্দেশ্যে। দীর্ঘ প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদীপথে কান্তনগর ঘাট থেকে শতাধিক ঘাটে কান্তজীউ বিগ্রহ বহনকারী নৌকা ভিড়ানোর পর সন্ধ্যায় এসে  পৌছে দিনাজপুর শহরের উপকন্ঠে পুণর্ভবা নদীর সাধুরঘাটে। নৌকাযোগে দিনাজপুর আসার সময় হিন্দু ধর্মালম্বী ভক্ত, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা নদীর দু’কুলে কান্তজীউ বিগ্রহকে দর্শন এবং বাড়ীর বিভিন্ন ফল, দুধ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদী নিয়ে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহকে উৎসর্গ করার জন্য নিয়ে আসে। এসময় সনাতন ধর্মাবলম্বীসহ অন্যান্যরা নদীর দু’কুলে ভীড় করে।

বাড়ীর গরুর দুধ নিয়ে ঢেপা নদীর আজিমপুর ঘাটে আসেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার আজিমপুর গ্রামের পূর্ণিমা রানী রায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর এই দিনে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ আমাদের বাড়ীর সামনে দিয়ে যায়। এই দিনটির জন্য আমরা অপেক্ষা করি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ আমাদের মনোবাসনা পুরণ করে থাকেন। তাই পরিবার ও দেশের শান্তি কামনায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণকে দর্শন করতে এসেছি।

একই গ্রামের নারায়ন চন্দ্র রায় বলেন, এবার দেশের বিরাজমান পরিস্থিতির কারনে নদীর কাছাকাছির মানুষগুলো আসলেও দুরদুরান্ত থেকে এবার তেমন মানুষ আসেনি। তাই এবার নদীর ঘাটে ভক্ত ও পুণ্যার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম।

এদিকে এবার শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহের নৌ ভ্রমন উপলক্ষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সদস্য ছাড়াও মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।

দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সোহাগ চন্দ্র সাহা বলেন, নৌ পথে কান্তজীউ বিগ্রহের ২৭১ তম যাত্রা উপলক্ষে এবার ব্যাপক নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয় তৈরী করা হয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও গ্রাম পুলিশকেও সংযুক্ত করা হয় যাতে সুষ্ঠুভাবে এই যাত্রাটি সম্পন্ন হয়।

দিনাজপুর রাজ দেবোত্তর এস্টেট এর এজেন্ট রনজিৎ সিংহ বলেন, মহারাজার প্রথা অনুযায়ী ২৭০ বছর আগ থেকে প্রতিবছর জন্মাষ্টমীর দুই দিন আগে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কান্তনগর মন্দির থেকে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ নদীপথে দিনাজপুর শহরের রাজবাটী মন্দিরে আনা হয়। রাজবাটী মন্দিরে ৩ মাস থাকার পর রাস পুর্নিমায় আবার কান্তনগর মন্দিরে ফিরে যাবে শ্রী শ্রী কান্তজীউ বিগ্রহ। 

 

 

 

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়