কৃষকদের গোয়াল ঘর ফাঁকা করছে লাম্পি স্কিন
আজাদুল ইসলাম আজাদ, পীরগঞ্জ রংপুর:
অধিকাংশ কৃষকদের সংসারের একমাত্র সম্বল গরু। পল্লী অঞ্চলের কৃষক সারাবছর ধরে চাষাবাদ করে। আর এই চাষাবাদের অর্থ যোগান দেয় গবাদিপশু গরু। অধিকাংশ চাষিরা চাষাবাদে লোকসান করে থাকে। বছর শেষে লোকসানের বোঝা হালকা করে এই গরু। গ্রামগঞ্জের অনেক কৃষক চাষাবাদের দিনশেষে গরুর উপর নির্ভর করতে হয়। সেই গরু ভাইরাস লাম্পি স্কিনে গোয়াল ঘর খালি করছে।
রংপুরের পীরগঞ্জে একটি পৌরসভাসহ ১৫ টি ইউনিয়নে গরুর লাম্পি স্কিন ছড়িয়ে পরেছে। প্রতিদিন নতুন নতুন করে গরু আক্রান্ত হয়ে পড়ছে লাম্পি স্কিন নামের ভাইরাসএ রোগের চিকিৎসা না পেয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এলাকার ভুক্তভোগী কৃষক।
উপজেলার গ্রাম পল্লী ঘুরে কথা হয় গরু মালিকদের সাথে ভুক্তভোগীরা বলছেন, এ রোগ এতোটাই ভয়াবহ কোনো ঔষধ তোয়াক্কা করে না। ভালো গরু সন্ধ্যায় গোয়াল ঘরে উঠানো হয় সকালে গিয়ে দেখে যায় সমস্ত শরীরে ফুলা এবং খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটে। ফুলে যাওয়া স্থানগুলো কয়েকদিন পরে চামরা উঠিয়ে যায় এবং ক্ষতস্থান থেকে পুঁজ বেড় হয়। পল্লী চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী মলম, তেল, পাউডার জাতীয় কেন্ডুলা ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসার পরে-ও অনেক গরু মারা যায়। বিশেষ করে বিদেশি জাতের ছোট বাছুর গুলোকে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে আর বাছুরের মৃত্যুর সংখ্যাই বেশি।
এলাকার লোকজন বলছেন, লাম্পি স্কিনের হাতুড়ি মার্কা কিছু চিকিৎসক রয়েছে তারা সাধারণ মানুষ কে বোকা বানিয়ে ভেছভেছ করে ইঞ্জেকশন করে টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও এলাকায় কিছু হুমিও চিকিৎসক রয়েছে তারাও এক হাতে টাকা আরেক হাতে পানি পড়া দিয়ে টাকা কামাচ্ছে। এ-সব চিকিৎসার করনীয়র ব্যপারে উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের পক্ষ থেকে ব্যপক প্রাচারের প্রয়োজন অথচ তাদের দেখা মেলে না গ্রামপর্যায়ে।
জামালপুর গ্রামের ইউনুছ আলী জানান, আমার দেশি জাতের ৩ মাসের বাছুর এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। পুরো শরী ফুলে গেছে। গত একমাস থেকে বাছুটি দাড়াতে পারে না। কোলে করে গোয়াল ঘর থেকে বেড় করতে হয়। এটির সারা শরীরের ফুলা স্থানগুলো চামড়া উঠে গেছে। কিছু খেতেও পারে না আমি বোতলের মাধ্যমে দুধ খাওয়াই। মশা মাছির এড়াতে সবসময়ই মশারীর ভিতরে রাখি। মলম এবং পাউডার জাতীয় ঔষধ ৩ বার ব্যবহার করছি। শরীরের প্রতিটি ক্ষতস্থানে পোকা রয়েছে। আমার সংসারে আশা ভরসা এই গরু মানুষের জমিতে কাজ করে আমার সংসার চলে। বাছুরটির পাশে সারাদিন আমাকে বসে থাকতে হয় এটি নিয়ে বড় বিপদে রয়েছি বাবা। গত এক মাস হয়ে গেল আল্লাহ ভালো জানেন আমার কপালে কি রয়েছে।
একই এলাকায় গত ১ মাসের মধ্যে জামালপুর গ্রামের একই পাড়ায় শামসুল আলম, সাইফুল ইসলাম, বাদশা মিয়ার, দেলবার রহমান এবং মমিন মিয়ার একটি করে গরু লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।
একই গ্রামের শামসুল ইসলামের ছেলে মশিউর রহমান জানান, ৮০ হাজার টাকার বিদেশি বাছুর মারা গেছে তার। গরুটির স্বাস্থ্য খুবই ভালো ছিল এবং আগামী ঈদে এটি কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা বিক্রি হতো। গরুটি দিয়ে গোয়াল ঘর ভারা ছিল। গরুটি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এখন তার গোয়াল ঘর ফাকা হয়ে গেছে।
বড় আলমপুর এলাকার রুহুল আমিন, আব্দুর রশিদ মিয়া এবং বাশপুকুরিয়া গ্রামের রেজাউল করিম জানান, কিছুদিন আগে তাদের এলাকার ছোট ছোট বাছুর গুলো ভাইরাস রোগে শেষ হয়ে গেছে। বন্যার সময় করতোয়া নদীতে প্রতিদিন অহরহ মারা যাওয়া গরু ভেসে দিয়েছে এলাকার লোকজন।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণিস্পদ কর্মকর্তা মো. ফজলুল করিম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, লাম্পি স্কিন রোগটি এখন কমেছে আর এ রোগের চিকিৎসা শুধু মাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ। চামড়া উঠে যাওয়া ক্ষতস্থানগুলো শুকাতে একটু সময় লাগে। কোনো গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হলে গরুটিকে সবসময় মশারীর ভিতর রাখতে হবে এবং গোয়াল ঘর পরিস্কার পরিছন্নতা রাখতে হবে। তবে এই রোগটি মশা-মাছি থেকে ছড়ায়। উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসারের লোকজন সবসময়ই গরুর মালিকদের কে মশারী বা গোয়াল ঘর পরিস্কার রাখার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন বলে তিনি জানান।