২ ফাল্গুন, ১৪৩১ - ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ - 14 February, 2025

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় :আয়োজকদের দাবী লক্ষাধীক কৃষকের মহাসমাবেশ  হবে ব্রম্মপুত্র পাড়ে

আমাদের প্রতিদিন
3 weeks ago
129


অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের কাছে ৬৫ লাখ টাকার আবেদন আলোচনা সমালোচনা

আহসান হাবীব নীলু, কুড়িগ্রামঃ

দেশ ব্যাপী চলমান হাট-ঘাটে ইজারা প্রথা বাতিল, নদী ভাঙনরোধ, কৃষকের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণসহ ১২ দফা দাবিতে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ। কুড়িগ্রাম জেলার ব্রম্মপুত্র নদ ঘেষা চিলমারী উপজেলায় এই কৃষক সমাবেশের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে।‘ কৃষক বাচলে দেশ বাচবে’ সেই কৃষকের কল্যাণে এবং দাবি আদায়ে এ সমাবেশ।

কৃষক মহাসমাবেশের আহ্বায়ক নাহিদ হাসান নলেজ বলেন, গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র ও শ্রমিকদের উত্থান আপনারা দেখেছেন। সংস্কার কমিশন তাদের বিষয়ে হয়েছে। কৃষক শক্তির উপস্থিতি দেখেননি বলে ভূমি সংস্কারের কথা আপনারা ভুলে গেছেন। বাংলাদেশ থেকে যেন কৃষকরা নাই হয়ে গেছে। এই মহাসমাবেশে কৃষকরা জানান দেবে তাদের শক্তির। তাদের দাবী রাষ্ট্র আর উপেক্ষা করতে পারবে না। উত্তরবঙ্গ কৃষক সমাবেশ হলেও এ সমাবেশে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এমনকি লবন চাষীরাও আসবে। সমাবেশে লক্ষাধীক কৃষকের উপস্থিতি হবে বলে আশা করছি।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই প্রথম কৃষকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে মহাসমাবেশে সামিল হচ্ছেন। এতে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গের সবগুলো জেলা থেকে কৃষকরা আসছেন। ইতিমধ্যে শত শত নৌকা প্রস্তুত হচ্ছে। চরাঞ্চলগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিন কুড়িগ্রাম জেলার হাটগুলোতে সভা হচ্ছে। লক্ষাধীক লিফলেট বিতরণ হয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে পোস্টার ও দেয়াল লিখন। ব্যানার ও তোড়ণ ছেয়েগেছে। চলছে ঐতিহাসিক জোড়গাছ হাট সংলগ্ন ভাওয়াইয়া শিল্পী সফিউল আলম রাজা স্টেডিয়াম মাঠের প্রস্তুতি কাজ।

কৃষকদের আনন্দ দিতে উলিপুর ভাওয়াইয়া একাডেমি পরিবেশন করবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এছাড়া গাইবান্ধার সাঁওতাল শিল্পীরাও অংশ নেবেন। ঢাকা থেকে আসবেন অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদ ও অভিনেতা দীপক সুমনের তীরন্দাজ নাট্য দল।

 

আগামি ২৬ জানুয়ারি রোববার চিলমারীতে অনুষ্ঠিতব্য কৃষক মহাসমাবেশে উদ্বোধন করবেন মৎস্য ও প্রাণী  বিষয়ক উপদেষ্টা ও লেখক ফরিদা আখতার এবং প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এতে প্রধান আলোচক থাকবেন এডভোকেট হাসনাত কাইয়ূম। এছাড়া জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতৃবৃন্দসহ দেশবরেণ্য লেখক-বুদ্ধিজীবীরা। কিন্তু ইতি মধ্যে উপদেষ্টা ফরিদা আখতার কুড়িগ্রাম সফরের প্রোগ্রাম সিডিউল স্থগিত করেছেন। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম বীর।

 

কৃষক সমাবেশে ৬৫ লাখ টাকা চেয়ে সরকারের

কাছে আবেদ আলোচনা সমালোচনার ঝড়

মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে করা আবেদনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।‘উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশ বাস্তবায়ন গণকমিটি’র পক্ষে আহ্বায়ক নাহিদ হাসান নলেজ মঙ্গলবার মোট সাড়ে ৬৫ লাখ টাকা চেয়ে এ আবেদন করেন। একদিন পর বুধবার বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে।নাহিদ হাসান নলেজ কুড়িগ্রামের একজন সংগঠক, যিনি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জাতীয় দৈনিকে লেখালেখি করেন। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় তাকে শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি হিসেবে নিয়োগ দেয়।বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আরেক ভিডিওতে নলেজ বলেন, “যারা হইচই করছেন তারা কৃষকের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে কৃষক সমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছেন।”কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ২৬ জানুয়ারি হতে যাওয়া ওই সমাবেশের জন্য বরাদ্দ চাওয়ার বিষয়ে বলেন, “আমরা কৃষকদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করে আসছি। কোনো অসৎ উদ্দেশ্যে বরাদ্দ চাওয়া হয়নি। সমাবেশকে বিতর্কিত করতে একটি মহল এমনটি করেছে।”তার ভাষ্য, সরকার এ আবেদন ন্যায়সঙ্গত ও আইনানুগ মনে করলে বরাদ্দ দেবে। রাষ্ট্রের নাগরিক ও সংগঠন হিসেবে ন্যায়সঙ্গত দাবি করা নিশ্চয়ই কোনো অন্যায় নয়।”চিলমারীর জোড়গাছে সফিউল আলম রাজা স্টেডিয়ামে এ কৃষক মহাসমাবেশে রংপুর, রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের লক্ষাধিক কৃষক উপস্থিত থাকবেন বলে চিঠিতে বলা হয়েছে।আয়োজকরা বলছেন, সরকারের দুই উপদেষ্টা সমাবেশে উপস্থিত থাকবেন।তাদের দাবি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার সমাবেশের উদ্বোধন এবং ফারুক-ই- আজমের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার সম্মতি পেয়েছেন তারা।কৃষক সমাবেশকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রামসহ উপজেলা পর্যায়েও প্রচার চালানো হচ্ছে। বিতরণ করা হচ্ছে প্রচারপত্র। কর্মীরা গণচাঁদাও সংগ্রহ করছেন।ভাইরাল হওয়া চিঠিতে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসককে মাধ্যম করে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে সাড়ে ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়। মহাসমাবেশের ৩০ হাজার কৃষকের এক বেলা খাবার বাবদ ৬০ লাখ, ১০০ ভিআইপি অতিথির জন্য ৫০ হাজার এবং স্টেজ-লাইটিংসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৫ লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয়েছে।

নলেজ বলেন, “আমরা স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা মাধ্যমে ব্যয়িত অর্থের হিসাব সরকারকে দেব।”

 

উত্তরবঙ্গ কৃষক মহাসমাবেশের দাবিসমূহ

 

১. হাট ও ঘাট থেকে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদ কর। ইজারা প্রথা বাতিল করে সরাসরি খাজনা তোল।

২.  বীজ ও কৃষি উপকরণের দাম কমাও। কৃষকের সাথে আলোচনা করে কৃষি পণ্যের দাম নির্ধারণ কর। কৃষিকে কর্পোরেশনের থাবা থেকে বাঁচাও।

৩. তুলা ও রেশমের আবাদ বাড়াও। রেশম ও এণ্ডিপোকার লার্ভা খোলা বাজারে বিক্রির ব্যবস্থা কর। সুতা, কাপড় ও রং তৈরির জন্য গ্রামে গ্রামে তাঁতীদের ট্রেনিং সেন্টার খোল।

৪. শুধু ইলিশ নয়, সকল মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ কর। কর্মহীন সময়ে জেলেদের রেশনের ব্যবস্থা করো। 

৫. চরাঞ্চলে ভুয়া ভূমিহীনদের হাত থেকে খাস জমি দখলমুক্ত কর। প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বিতরণ কর।

৬. দেশের সকল বন, নদী, নালা, বিল, পাহাড় দখল, বেচাকেনা এবং ইজারা প্রদান বন্ধ কর। কৃষি জমিতে পুকুর কেটে নয়, প্রাকৃতিক জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বাড়াও।

৭. ভাঙন ঠেকাতে নদীর পাড় ও চর এলাকায় বিন্না ঘাস লাগাও। নদী থেকে অপরিকল্পিত বালু তোলা নিষিদ্ধ কর। নদী ভাঙলেই খাস নয়, এই আইন চালু কর। 

৮. আন্তঃনগর ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনের জন্য ৩টি সুলভ বগি সংযুক্ত কর। পচনশীল কৃষিপণ্য বহনকারী যানবাহনকে রাস্তায় ও ফেরীতে আগে যেতে দাও।

৯. আখ ও বিট চিনির আবাদ বাড়াও। সকল চিনিকল সংস্কার করে চালু কর। কৃষকের গুড় উৎপাদনের স্বাধীনতা দাও। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলের আখ মাড়াই আইন বাতিল কর।

১০. মহাজনি প্রথা থেকে লবণচাষীদের রক্ষা কর। মিল মালিকদের পক্ষে সরাসরি ক্রয় কেন্দ্র খোলো। চাষীদের মতামতের ভিত্তিতে সরকারিভাবে লবণের দাম নির্ধারণ করো।

১১. গোবিন্দগঞ্জ ও ফুলবাড়ির কৃষকের নামে করা মিথ্যা মামলা বাতিল কর। শুধু ব্যক্তি-মালিকানা নয়, জমিতে সামাজিক মালিকানার সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও।

১২. অনাদায়ী কৃষিঋণ আদায়ে মামলা ও গ্রেফতারের আইন বাতিল কর। সকল ধরনের ক্ষুদ্র কৃষিঋণ মওকুফ কর। 

 

 

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth