বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি :

‘ধর, ধর’ চিৎকারে গ্রামের অলিগলিতে হঠাৎ মুঠোফোন আর টর্চলাইটে আলোর ঝলকানি। মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকজন গ্রামবাসী ছুটছেন সুমন হোসেনের বাড়িতে। তাঁদের কারও হাতে লাঠিসোঁটা; আবার কেউ কেউ সঙ্গে এনেছেন দা-বঁটি।

মারধর ও হামলার ঘটনার পর পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখানে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামে

মারধর ও হামলার ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তাঁরা সেখানে উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মুকুন্দপুর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামেএই ঘটনা ঘটে।

এমন চিৎকারে সুমনের বাড়িতে গিয়ে গ্রামবাসীরা দেখেন, ভাঙচুরের কারণে ঘরের টেলিভিশন, রান্নার প্রেশার কুকারসহ আসবাবপত্রের তছনছ অবস্থা। সুমনসহ তাঁর পরিবারের অন্তত পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন। গ্রামবাসীর এবার জানতে পারেন, ডাকাত নয়; সুমনের শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হামলায় বাড়িটিতে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সুমনের বাড়িতে আকিকার অনুষ্ঠানে শ্বশুরপক্ষের কম লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ার জেরে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন সুমন হোসেন ও তাঁর বাবা সোলায়মান হোসেন, মা আকতারা বেগম, ছোট বোন উম্মে হাবিবা, মামা রাশেদুল ইসলাম ও আবু সাঈদ। গ্রামবাসীর পাল্টা হামলায় সুমনের শ্বশুরপক্ষের অন্তত চার জন আহত হয়েছে। তারা হলেন সুমনের শ্যালিকা ইয়াসমিন আক্তার ও তাঁর বন্ধু হাবিবুর রহমান, আরিফুল ইসলাম ও আলয়ামিন রিমন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দার সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকালে সুমন হোসেনের ছেলের আকিকার অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। এ উপলক্ষে তিনি বাড়িতে আত্মীয়স্বজনকে দাওয়াত দেন। কিন্তু তাঁর শ্বশুরপক্ষের কম লোকজনকে দাওয়াত দেওয়ায় সুমনের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের ঝগড়া ও এক পযায়ে মারধর করেন স্ত্রীকে সুমন।

এমন সময় জেসমিনের বোন ইয়াসমিন আক্তার তাঁর পরিবারের লোকজনকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান। পরে সুমনের শ্বশুর অছিম উদ্দিন প্রায় অর্ধশত মানুষ নিয়ে গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ওই বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে সুমন, তাঁর বাবা, মা, ছোট বোন ও দুই মামাকে বেধর মারপিট করে । এ ছাড়া বাড়ির আসবাবও ভাঙচুর করেন তাঁরা। এ দিকে প্রতিবেশীরা গ্রামের মসজিদের মাইকে ডাকাত পড়ার ঘোষণা দেন।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মাহফুজুর রহমান বলেন, ডাকাত পড়ার খবরে গ্রামের লোকজন সুমনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর শ্বশুরপক্ষের লোকজনকে ধাওয়া দেন। পরে ছয়-সাতজন যুবককে আটক ও মারধর করে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করেন প্রতিবেশী। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের সমঝোতায় আটক যুবকদের মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

এ বিষয়ে বিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, ‘পুলিশ দুই পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। গ্রামবাসীর হাতে আটক যুবকেরা এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পরে তাঁদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ করেনি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।’