চাকুরিজীবি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতার নেতৃত্বে চলছে ছাত্রদলের কার্যক্রম: ত্যাগী ও নতুন কর্মীদের ক্ষোভ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির দাবি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি চাকুরিজীবি,স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ও অছাত্রদের নেতৃত্বে চলছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের দলীয় কার্যক্রম। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংগঠনটির ত্যাগী ও নতুন কর্মীরা। তারা বলছেন, আমরা আর কোনো আদু ভাইয়ের নেতৃত্বে দেখতে চাই না। যারা সক্রিয় নেতাকর্মী তারা যেন নতুন দায়িত্বে আসেন। এতে করে সামনে তরুণ নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বির্তকিত এই কমিটি বাতিল করে নতুন কমিটির দাবি করছি। অন্যথায় আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারিও দেন ছাত্রদলের তরুণ প্রজন্মের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, ২০২১ সালে এগারো সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন পায় রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। এতে ইংরেজি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আল-আমিন ইসলাম আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের রাশেদ মন্ডলকে সদস্য সচিব করে নরবরে কার্যক্রম চালাতে থাকে আওয়ামী সরকার পতনের আগ পর্যন্ত। ৫ আগস্ট পরবর্তীতে সামনে আসতে শুরু করেন সেই আহ্বায়ক কমিটির নেতাকর্মীরা। এরই মধ্যে এই কমিটির আহবায়ক আল আমিন ইসলাম জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক পদ লাভ করেন। আর সদস্য সচিব রাশেদ মন্ডল বর্তমান রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ক্রাফট ইনস্ট্রাক্টর (সিভিল) পদে কর্মরত। এছাড়াও ওই কমিটি বাকি ৯জনের কেউ আর ক্যাম্পাসে নেই। তাদের পড়ালেখা শেষ হয়েছে।
এদিকে বেশকয়েক দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ও বিভিন্ন মহলে আলোচনা সমালোচনা দেখা যাচ্ছে। সেখানে অছাত্র, চাকরিজীবী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করেছে। অনেকে এই বিতর্কিত কমিটির বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।
এবিষয়ে ছাত্রদলের কর্মী গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন জানিয়েছেন, বর্তমানে যাদের সামনের সারিতে দেখা যাচ্ছে তারা ৫ আগষ্টের আগে কই ছিল। এখন সুবিধা নিতে সামনে আসছে। তারা ফেসবুক মার্কা নেতা। শেখ হাসিনার পতনের পর আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব নামমাত্র কিছু কর্মসূচি পালন করছে। এই কমিটির আহ্বায়ক বর্তমানে স্বেচ্ছাসেবক দলে যুক্ত এবং সদস্য সচিব সরকারি চাকরিজীবী, যা সাংগঠনিক ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ছাত্রদল নেতা বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক কর্মীদের ছাত্রদলের নেতাদের পাশে আসা এবং তাদের নিয়ে প্রোগ্রাম করায় ছাত্রদলের সাংগঠনিক দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে। ছাত্রদলের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে দ্রুত নতুন, আদর্শিক ও ত্যাগী নেতৃত্ব গঠন করা প্রয়োজন, অন্যথায় সংগঠনটি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে বলে তারা মনে করেন।
এদিকে একসঙ্গে দুই সংগঠনের দায়িত্ব পালনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আল আমিন ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি দুই পদে দায়িত্বে আছি। বিভিন্ন আইডি ও ফেইসবুক পেজে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। আপনার ছাত্রত্ব নেই তারপরও কেন ছাত্রদলের নেতৃত্বে রয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এবিষয় সদস্য সচিব রাশেদ মন্ডল প্রথমেই অস্বীকার করে বলেন, আমি আগে চাকরি করতাম এখন করিনা। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে এখনো তার সকল তথ্য আছে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওয়েবসাইট আপডেট করা হয়নি তাই হয়তো আমার তথ্য রয়েছে।
তবে রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, রাশেদ মন্ডল স্থায়ীভাবে চাকরী করছেন এবং নিয়মিত অফিস করছেন। তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত কিনা তা আমার জানা নেই।
সার্বিক বিষয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিবের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে মিডিয়ার সামনে আপাতত কিছু বলতে চাচ্ছি না। ইতিমধ্যে আমরা রানিং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটা বৈঠক করেছি এবং এ বিষয়ে দ্রুত একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।