ডিমলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিম্নমানের খাবার সরবরাহ-রোগীদের দূর্ভোগ

মোঃ হাবিবুল হাসান হাবিব, ডিমলা (নীলফামারী):
নীলফামারী ডিমলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে মের্সাস শিরিন ট্রের্ডাস নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি হাসপাতালের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব নেয়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অভিযোগ “খাবারের মান অত্যন্ত খারাপ নিম্নমানের ও পরিমানেও কম”। অভিযোগ উঠেছে, মের্সাস শিরিন ট্রের্ডাস নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি নীলফামারীর ডিমলায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটির কাগজে কলমে দায়িত্ব ভার গ্রহন করলেও নেপথ্যের পিছনে রয়েছে মুলত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদুজ্জামান। স্থানীয়দের অভিযোগ, ইজিপি টেন্ডারে চার নম্বরে থাকা সত্বেও শুধুমাত্র স্বাস্থ্য কর্মকর্তার যোগসাজসে টেন্ডার নিয়েছেন মের্সাস শিরিন ট্রের্ডাস নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। এতে সরকারের আর্থিক গচ্ছা যাচ্ছে বলে মনে করে অনেকে।
সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালটির প্রবেশ মুখইে ময়লা আর্বজনার স্তুপ। হাসপাতালের মেঝে ও দেয়ালে লেগে আছে পানের পিক এমনকি রোগীদের ব্যবহারের টয়লেটগুলো ব্যবহারে অনুপযুক্ত। সব মিলিয়ে হাসপাতালটির পরিবেশ রোগীদের চিকিৎসা গ্রহনের জন্য একেবারেই অনুপযুক্ত।'
সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক রোগীর প্রতিদিনের খাবারের জন্য ১৭৫ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সে হিসেবে সকালে দুইটি পাউরুটি, দুইটি সিদ্ধ ডিম, একটি কলা ও ২০ গ্রাম চিনি, দুপুরে ও রাতে ১০০ গ্রাম মাছ, ২০০ গ্রাম ভাত, ২০ গ্রাম ডাল এবং পরমিাণ মতো সবজি দেওয়ার কথা। কিন্তু ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রতিদিন সকালে ভর্তিকৃত রোগীদের দুইটি পাউরুটি একটি সিদ্ধ ডিম ও এক চামচ চিনি দেয়। দুপুরে ৭.৫০ গ্রাম ওজনের মাছ, ১০০ গ্রাম মোটা চালের ভাত সাথে ডাল ও ভাজি। রাতে প্রায় দুপুরের অবশষ্টি খাবার সরবরাহরে অভিযোগ রয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। অথচ টেন্ডারের শর্তে উল্লেখ আছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটিকে সপ্তাহে চার দিন মাছ এবং দুই দিন মাংস রোগীদের নিকট সরবরাহের কথা। তবে ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, সরবরাহ করা হচ্ছে সিলভারকার্প, বার্মিজ রুই, তেলাপিয়া মাছ এবং মোটা চালের ভাত। অনেক সময় পচা ও বাসি তরকারি । পরমিানে কম খাবার পরবিশেন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অঙ্কের টাকা। এ বিষয়ে একাধিকবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কোনো ফল হয়নি বলে অভিযোগ করছেনে রোগী ও রোগীর পরিবারের সদস্যরা।
উপজলোর বালাপাড়া ইউনয়িনরে ডাঙ্গারহাট এলাকার বকুল নামের এক রোগী জানান, চার দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি, মোটা চালের ভাত, পাতলা ডাল আর মাছ-মাংসের তরকারীতে ঝাল বা মসলার কোনো স্বাদ নেই। খগাখড়িবাড়ী ইউনয়িনরে টুনরিহাট এলাকার মহিলা ওয়ার্ডের ১১ নম্বর বেডে চিকিৎসাধীন নুরজাহান বেগম জানান, খাবারে কোনো স্বাদ বা ঘ্রাণ নেই। দুপুররে খাবার কোনোমতে খাওয়া গেলেও রাতরে খাবারের মান খুবই খারাপ। মসলা তরকারীতে দেয় কিনা জানি না। বালাপাড়া ইউনিয়নের সুন্দরখাতা গ্রাম থেকে আসা মুনতাহানা বেগম মহলিা ওয়ার্ডের ১৩ নম্বর বেডে বলনে, “বাবা যে ভাত দেয়, তা দিয়ে পেট ভরে না। চাইলেও আর দেয় না। ক্ষুধা নিয়ে থাকতে হয়। টাকা না থাকায় সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে এসেছি । খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বাইশ পুকুর গ্রামের আব্দুল জললি মন্ডল জানান, তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি সকালে দুইটা পাউরুটি আর একটু চিনি দিয়েছিল। দুপুরে অল্প ভাত আর আধা পিছ মাছ, সাথে তরকারী চিল। মাছ অপরিস্কার থাকায় খেতে পারিনি ফেলে দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একাধিক রোগী অভিযোগ করে বলনে, খাবার খাওয়ার অযোগ্য হওয়ায় বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে খাবার কিনতে হচ্ছে। এছাড়াও, খাবার সরবরাহ দেরিতে হয়। প্রায় সকাল ৮টার পরর্বিতে ১০টা বা ১০:৩০ টার মধ্যে খাবার আসে। নাম প্রকাশ না করার র্শতে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারীরা জানান, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি প্রভাবশালী হওয়ায় খাবারের মান নিয়ে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারনে না ।
এ বিষয়ে খাদ্য সরবরাহকারী শাহিনুর ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মো. রাশেদুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। এ বিষয়ে নীলফামারী সিভিল সাজৃন ডাঃ মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, খাবার সরবরাহের বিষযটি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হবে এবং সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।