২৪ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ - ০৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 09 December, 2025

গঙ্গাচড়ায় হিন্দু পল্লীতে ঘর মেরামত করে দিচ্ছে প্রশাসন-স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে গ্রামের পরিবেশ

4 months ago
381


নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বেতগাড়ি ইউনিয়নের আলদাদপুর গ্রামের পরিবেশ। হামলার শিকার হিন্দুপল্লীতে প্রশাসনের আশ্বাসে নিজ বাড়িতে ফিরেছে পরিবারগুলো। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) ফিরে এসেছেন বাড়ি ছাড়া ১৯ পরিবার। তবে অভিযুক্ত রঞ্জন রায়ের পরিবার এখনও বাড়ি ফিরেনি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ১৪টি ঘর মেরামত করে দেয়া হয়েছে। তবে পরিবারগুলোর মাঝে এখনও আতংঙ্ক বিরাজ করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্বাভাবিক গতি ফিরতে শুরু করেছে  আলদাদপুর গ্রামে। ২৮ জুলাই ভয়-আতংঙ্কে যারা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন, তারা আবারও বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ গ্রামের মানুষের সাথে কথা বলেন। সেই সাথে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারী ঢেউটিন ও মিস্ত্রি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরগুলো মেরামতের কাজ করান। পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন রয়েছে। মঙ্গলবার জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিছুর রহমান লাকু ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের মাঝে শাড়ি-লুঙ্গিসহ খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেই সাথে জামায়াতের পক্ষ থেকেও খাদ্য সহায়তা প্রদানসহ এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এদিকে হামলার শিকার ২২ পরিবারের মধ্যে ১৯ পরিবার নিজ বাড়িতে ফিরেছে। অভিযুক্ত রঞ্জন রায়, তার কাকা ও দাদীর পরিবার এখনও বাড়ি ফিরেনি। গ্রামে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

কেশব চন্দ্র রায়, রবীন্দ্র চন্দ্র রায়সহ অন্যান্যরা বলেন, যেভাবে অতর্কিত হামলা চালিয়ে হিন্দু পল্লীকে ক্ষতিগ্রস্থ করা হলো। আমরা এখন গৃহহীন, অন্নহীন হয়ে পড়েছি। সরকার আমাদেরকে ঢেউ টিন, শুকনা খাবারের ব্যবস্থা করেছে। আমরা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ চাই। আমরা আতংঙ্কে দিন-রাত কাটাচ্ছি। রাতে আমরা ঘুমাতে পারি না।

বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সংগঠক অনিন্দ কুমার নাথ বলেন, রঞ্জনের জন্য পুরো গ্রামবাসী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রঞ্জন দোষী কি না সেটি আইন দেখবে। কিন্তু যেভাবে দুস্কৃতিকারীরা হামলা চালালো তা কখনো একটি রাষ্ট্রের জন্য শুভ বার্তা নয়। সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। আমরা চাই এ বিষয়ে সরকার তৎপর থেকে দোষীদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুক। সেই সাথে হিন্দু পল্লীর অধিবাসীকে যথাযথ নিরাপত্তাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, জেলা-উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরগুলো মেরামত করে দেয়া হচ্ছে। গ্রামের সকল পরিবারই নিজ বাড়িতে অবস্থান করছে। আমরা হামলার শিকার পরিবারগুলোর ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা করছি এবং তাদের সহযোগিতায় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পরিবারগুলো এখন নিজ বাড়িতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। তাদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।   

গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল-এমরান বলেন, হিন্দু পল্লীতে হামলার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

উল্লেখ্য, ছয়আনি গ্রামের সুজন চন্দ্রের ছেলে রঞ্জন রায়ের নামে ফেসবুকে মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র তৈরী ও অশালীন মন্তব্য লিখে একাধিকবার পোস্ট করা হয়। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়। ২৬ জুলাই রঞ্জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ২৭ জুলাই কিশোরগঞ্জ সিঙ্গেরগাড়ি থেকে একটি মিছিল আলদাদপুর গ্রামে এসে হিন্দুপরিবারের বাড়ি ভাংচুর, লুটপাট করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। ২৮ জুলাই হামলার আতংঙ্কে মালামাল নিয়ে বাড়ি ছাড়েন হামলার শিকার পরিবারগুলো ।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth