১০ আশ্বিন, ১৪৩২ - ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ - 25 September, 2025

রাবিতে পোষ্য কোটা ইস্যুতে রণক্ষেত্র: উপ-উপাচার্যকে সিঁড়িতে ফেলে দেওয়া, উপ-রেজিস্ট্রারের দাঁড়ি ধরে টান

3 days ago
100


রাবি প্রতিবেদক:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা পুনর্বহালকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। দিনভর অনশন, বিক্ষোভ, ধস্তাধস্তি আর ভাঙচুরের মধ্যেই শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জুবেরী ভবনের সামনে চরম উত্তেজনার ঘটনা ঘটে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনে উঠতে গেলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে হাত টেনে সিঁড়িতে ফেলে দেন এবং উপ-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামের দাঁড়ি ধরে টান ও গলা ধরে ফেলে দেবার ঘটনাও ঘটেছে।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জুবেরী ভবনের ফটকে এ ঘটনা ঘটে। ধস্তাধস্তিতে সাবেক সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মারসহ কয়েকজন আহত হন।

শনিবার পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করতে থাকেন৷ বেলা তিনটার দিকে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে  তার গাড়ি আটকে 'ভিক্ষাস্বরূপ টাকা-পয়সা' গাড়ির উপরে দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। উপ-উপাচার্যকে ভিক্ষা দেওয়ার জন্য সবাইকে আহ্বান করলে পাশে থাকা রিকশাচালক গাড়ির উপরে ভিক্ষাস্বরূপ ৫ টাকা ও ক্যাম্পাসের এক ভিক্ষুক ১০ টাকা দেন।

এক পর্যায়ে গাড়ির চাবি কেড়ে নেন বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। ফলে তিনি পায়ে হেঁটে বাসভবনের দিকে রওনা দিলে তাঁর বাসভবনে ঢুকতে না দিয়ে গেটে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তিনি প্রক্টর মাহবুবর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে জুবেরী ভবনের দিকে যান। শিক্ষার্থীরাও পিছু পিছু হাঁটতে শুরু করে। উপ-উপাচার্যকে জুবেরী ভবনে উঠতে না দিয়ে তাকে জাপটে ধরে আটকে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

ভিডিও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এক পর্যায়ে সেখানে শিক্ষক-কর্মকর্তা ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে তুমুল ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। উপ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ কয়েকজনকে সামনে থেকে বাধা দেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় পাশে থাকা প্রক্টর ও শিক্ষকরা উপ-উপাচার্যকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। উভয়পক্ষের ভিতরে টানহেঁচড়া হয়। ওই সময় উপ-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামের দাঁড়ি ধরে টান দেবার ঘটনাও ঘটে। বেশ কিছুক্ষণ এই পরিস্থিতি বিরাজ করে।

কিছুক্ষণ পর অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন সিঁড়ি বেয়ে জুবেরী ভবনে উঠতে গেলে একজন শিক্ষার্থী পিছন হাত টেনে ধরে সিঁড়িতে ফেলে দেয়। তিনি উঠে আবার উপরে যেতে উদ্যত হলে সামনে থাকা আরেক শিক্ষার্থী আবার জাপটে ধরে। দুজন শিক্ষকের সহায়তায় ছাড়া পেয়ে জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় উঠে পড়েন। ওই সময় আবারও উপ-রেজিস্ট্রারের দাঁড়ি ধরে টান দেন এক শিক্ষার্থী। তার পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। সালাহউদ্দিন আম্মারকেও দেওয়ালের সাথে চেপে ধরেন কয়েকজন কর্মকর্তা।

কয়েক ঘণ্টা জুবেরী ভবনের দ্বিতীয় তলায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ অনেকে। অবশেষে রাত সোয়া ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা জুবেরী ভবনের সামনে থেকে তাঁদের অবস্থান তুলে নেন। এতে সহ-উপাচার্য মাঈন উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষক প্রায় সাত ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর মুক্তি পান।

এদিকে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলায় কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এক প্রতিবাদলিপিতে তারা বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই- আমরা নিজেরাও পোষ্য কোটারবিরোধী। কিন্তু কোনো যুক্তি, মতভেদ বা আন্দোলনের নামে শিক্ষকের গায়ে হাত তোলা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি আমাদের শিক্ষাঙ্গনের সামগ্রিক মর্যাদা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্কের জন্য কলঙ্কজনক।

আমরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি, যেন অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়।

আমাদের দাবিগুলো হলো— ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সাবেক সমন্বয়ক ও রাকসু নির্বাচনে 'আধিপত্যবিরোধী ঐক্য' জোটের জিএস পদপ্রার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার। তাকে মুঠোফোনে কল করলে বারবার কেটে দেন। তবে তিনি তার ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে জানান, স্যাররা আমাদের পিতৃতুল্য। স্যারদের সাথে আমাদের ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। তাই কাউকে ব্যক্তিগতভাবে অ্যাটাক বা অশালীন ভাষা ব্যবহার করিনি আমরা। আমাদের ভাইদের অনশনের ২৪ ঘণ্টা অতিক্রান্ত হলেও নোটিশ প্রত্যাহারে প্রশাসনের কোনো ইচ্ছা না দেখে আমাদের এ জায়গায় আসতে হয়েছে।

স্যাররা ডিসিশন ছাড়া যেন না যায় তার জন্য প্রশাসন ভবন, বাসভবনের গেট, জুবেরী ভবনের সামনে আমরা হিউম্যান চেন করে দাঁড়িয়ে যাই। ওনারা জোরপূর্বক আমাদের হাত সরিয়ে ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তারপর ছত্রভঙ্গ হয়ে সবাই স্যারদের আটকাতে চেষ্টা করেন; কারো গায়ে হাত তোলার চেষ্টা করিনি। এক সময় স্যার, কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে দুয়েকজন অনেক মারমুখী আচরণ করে আমাদের হিউম্যান চেন থেকে স্যারকে ছিনিয়ে নিতে চান। তখন আবারও স্টাফরা আমাকে গলাচিপে ধরে। বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে কনুই এবং হাত দিয়ে আঘাত করে। তারপর উনারা ২ তলায় উঠে যান।

 

এ বিষয়ে জানতে উপ-রেজিস্ট্রার রবিউল ইসলামকে কল করলে তার বড় মেয়ে কল রিসিভ করেন। তিনি বলেন, গতকাল রাতে আব্বুকে ইসলামিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। বুকে ও পায়েসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লেগেছে। আব্বুর পুরো শরীর ব্যথা। তাকে ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, আব্বুকে কয়েকবার দাঁড়ি ধরে টান দেওয়া হয় ও গলা জাপটে ধরে ফেলে দেওয়া হয়। এতে আব্বু প্রচন্ড আঘাতপ্রাপ্ত হোন।

উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাঈন উদ্দীনকে কল করলে তাকে পাওয়া যায়নি।  

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth