মারুফার সুইং যাদুতে কপোকাত পাকিস্তান ; বিশ্বকাপে জয় দিয়ে মিশন শুরু

নীলফামারী প্রতিনিধিঃ
‘মারুফা যখন বোলিং করছিল, উইকেট নিচ্ছিল। একদিকে আনন্দে চিৎকার করছিলাম, অন্যদিকে মনের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মারুফার সাফল্যে এভাবেই নিজের মিশ্র অনুভূতির কথা জানাচ্ছিলেন বড় ভাই আল আমিন ইসলাম।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দল। এ ম্যাচে টাইগারদের জয় নিয়ে যতটা না আলোচনা, তার চেয়ে বেশি চর্চায় মারুফা আক্তারের সুইং জাদু। তার সুইংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানের টপ অর্ডার ব্যাটাররা। আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই পরপর দুই বলে দুই উইকেট নিয়েছিলেন তিনি।
এরপর আর উইকেটের দেখা না পেলেও পাওয়ার প্লেতে তার বলে চোখে সর্ষেফুলই যেন দেখছিল পাকিস্তানের ব্যাটাররা। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপে মারুফার বিধ্বংসী বোলিংয়ের প্রশংসায় মুখর গোটা দেশ। এমনকি শ্রীলঙ্কান পেসার মালিঙ্গা সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘পিওর স্কিল, এক্সিলেন্ট কন্ট্রোল। এখন পর্যন্ত এই টুর্নামেন্টের সেরা ডেলিভারি।
এমন সব প্রশংসা বাক্যে যখন মারুফা ভাসছিলেন তখন নীলফামারীর সৈয়দপুরের অজপাড়াগাঁয়ে মিশ্র অনুভূতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল তার পরিবার-পরিজন। টাইগ্রেস পেসারের সাফল্যে সবচেয়ে বেশি উচ্ছ্বাস দেখা যায় তার বড় আল আমিনের মধ্যে। বোনকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে কম সংগ্রাম করতে হয়নি তাকেও।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের অভিষেকে মারুফার ম্যাচসেরা পারফরম্যান্স ও মনোমুগ্ধকর বোলিং নিয়ে সাংবাদিকদরা কথা বলেছে তার ভাই আল আমিনের সঙ্গে। যেখানে তিনি মারুফা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানিয়েছেন।
এমন সাফল্যমণ্ডিত মুহূর্তে অতীত মনে পড়ে কি না—এমন প্রশ্নে মারুফার ভাই আল আমিন বলেন, ‘একটা সময় ছিল সাইকেলে করে মারুফাকে অনুশীলনে নিয়ে যেতাম।
অন্যের বগা নেওয়া জমিতে কৃষি কাজে গরুর বদলে বাবাকে সাহায্য করতো মারুফা ৷ এ নিয়ে অনেকে তিরিষ্কার করতেন ৷
অনেকে নিরুৎসাহিত করতেন। সেসব কথা তো মনে পড়েই। অনেক দুঃসময়ের পর এমন একটা দিন এসেছে, মারুফা পারফর্ম করছে, তাও বিশ্বকাপে। ভাই হিসেবে গর্ব হয়।
ম্যাচের আগে মারুফাকে কীভাবে উৎসাহিত করেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপে যাওয়ার আগেই তাকে সাহস দিয়েছি। তবে ম্যাচের আগেই মারুফাই আমাদের কাছে দোয়া চেয়েছে। আমাদের পারিবারিক গ্রুপ আছে, সেখানে দোয়া চেয়েছে। মা-ও তার সঙ্গে কথা বলেছে। আমি তাকে বলেছি, ঠাণ্ডা মাথায় খেলতে। শুধু বোলিং নয়, ব্যাটিং পেলেও যেন মনোযোগী হয়ে ভালো করতে পারে—সেই পরামর্শও দিয়েছি।
মারুফাকে পরামর্শ দেওয়া এই ভাই অবশ্য অবাক হয়েছেন মারুফার সাহস দেখে। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলন ও পুরস্কার নেয়ার সময় ইংরেজি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মারুফা—যা ইতোপূর্বে কখনো হয়নি।
মারুফার ভাই বলেন, ‘বাসায় আসলে আমাদের সঙ্গে মজা করে টুকটাক ইংরেজি বলে, ভুলও হয়। সে এইভাবে সাহস দেখিয়ে ইংরেজিতে উত্তর দিয়ে দিচ্ছে—এটা দেখে বেশ অবাক হয়েছি।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ঝলক দেখানো মারুফার সামনে পড়ে আছে পুরো টুর্নামেন্ট। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে এ তরুণ পেসার হতে পারেন আসরের সেরা বোলারও৷