পলাশবাড়ীতে মার্কেট ভেঙে জমি বেখল, ব্যক্তিগত মার্কেটের রাস্তা তৈরি ! জনমনে ক্ষোভ
বায়েজিদ পলাশবাড়ী (গাইবান্ধা):
গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে সরকারি সম্পত্তি দখল ও বিদ্যালয়ের দোকানঘর ভাঙা ও জমি বেখল দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক কলেজ শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তিন মাস পার হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পলাশবাড়ী এসএম মডেল পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন মার্কেটের একটি দোকানঘর ভেঙে স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক শ্যামল চৌধুরী তার ব্যক্তিমালিকানাধীন ‘রাজিয়া চৌধুরী শপিং মল’-এর প্রবেশপথ তৈরি করেছেন।
এ ঘটনায় জনস্বার্থে পলাশবাড়ী প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহ আলম সরকার গত ১৬ জুন ২০২৫ তারিখে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারের দাবিতে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার প্রায় তিন মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের মার্কেটটি বহু বছর ধরে ভাড়াটিয়াদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে আসছিল। ২০২৩ সালে বিদ্যালয় মার্কেটের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে গড়ে ওঠে ‘রাজিয়া চৌধুরী শপিং মল’ নামের একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন মার্কেট । মার্কেটটির পশ্চিম পাশে কোনো প্রবেশপথ না থাকায় মালিকপক্ষ শ্যামল চৌধুরী ব্যবসায়িক সমস্যায় পড়েন। পরে সুবিধার স্বার্থে তিনি কতিপয় প্রভাবশালীর সহায়তায় বিদ্যালয় মার্কেটের “সরকার অটোজ” নামের দোকানটি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ভেঙে সেখানে শপিং মলের প্রবেশপথ তৈরি করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ১ মার্চ বিদ্যালয়ের তৎকালীন সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান এবং প্রধান শিক্ষক সুশীল চন্দ্র সরকার ভাড়াটিয়াদের উদ্দেশ্যে এক নোটিশে সতর্ক করে জানিয়েছিলেন— বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কেউ দোকান ভাড়া, সাবলেট বা হস্তান্তর করতে পারবে না; শর্ত ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে একজন কর্মকর্তার বদলি ও অন্যজনের অবসরের সুযোগে দোকানঘর ভাঙার ঘটনাটি ঘটে বলে স্থানীয়দের দাবি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ‘রাজিয়া চৌধুরী শপিং মল’-এর স্বত্বাধিকারী শ্যামল চৌধুরী বলেন, “আমি বিষয়টি বিস্তারিত জানি না। তদারকির দায়িত্বে থাকা মিজান চৌধুরী বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।”
এ বিষয়ে মিজান চৌধুরী জানান, “বিদ্যালয় মার্কেট ভেঙে রাস্তা তৈরির কোনো অনুমতিপত্র আমাদের কাছে নেই।”
অভিযোগকারী ও পলাশবাড়ী প্রেসক্লাব সভাপতি শাহ আলম সরকার বলেন, “প্রায় তিন মাস আগে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। তাই প্রশাসনের উচিত দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।”
নবাগত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জাবের আহম্মেদ বলেন, “আমি যোগদানের পর বিষয়টি শুনেছি। ফাইলপত্র পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছেন, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখল করে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের রাস্তা নির্মাণের মতো গুরুতর অপরাধ ঘটনায় প্রশাসনের নীরবতা রহস্যজনক। তারা অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।