প্রকৃত জমির মালিকদের মারধর করে তাদের নামেই মামলা
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন বিএনপি নেতা কালামের জমি দখল বাণিজ্য
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
অব্যাহত নানা অনিয়ম-দুর্নীতির মধ্যে আবারও জমি দখল করালেন কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার। দখলের পর প্রকৃত মালিক পক্ষের লোকজনের নামে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের। বিষয়টি নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিসহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুদৃষ্টি কামনা করছেন ভুক্তভোগী পরিবারটি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মন্ডল ১৯৭৬ সালে ২টি দলিলমূলে ১৪৫শতক জমি ক্রয় করে ভোগদখল করে আসছেন। তার মৃত্যুর পর ওয়ারিশগণ সে জমি ভোগদখল করে আসছেন। কিন্তু ৫ আগস্ট’২০২৫ এর পর ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে উক্ত জমি ভুয়া মালিক সাজিয়ে জনৈক ভোলা শেখের পরিবারকে দখল করে দেন। এই জমির দখলের পর প্রকৃত মালিকরা ভূরুঙ্গামারী উপজেলা ও জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে অভিযোগ করলে জেলা বিএনপি উপজেলা বিএনপিকে সালিশ বৈঠকের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু ভূরুঙ্গামারী উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির কয়েকজন সদস্য একাধিকবার সালিশ বৈঠক করে। সালিশে মালিকানা স্বত্ব প্রমাণিত না হওয়ায় দখলদার কালাম ও ভোলা শেখকে জমি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলে সালিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ। কিন্তু তারা আবারও প্রমাণ দেখানোর সময় চেয়ে কালক্ষেপণ করেন এবং জমিতে ঘর তোলাসহ গাছপালা লাগানোর মাধ্যমে দখল অব্যাহত রাখে। এ অবস্থায় ১৭ নভেম্বর’২৫ প্রকৃত মালিক পরিবারের লোকজন ভুয়া দখলকারীদের বাধা দিতে গেলে প্রকৃত মালিক পক্ষকে মারপিট করে তাড়িয়ে দেয়। এসময় মালিকপক্ষের একজনের মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয় ও অন্যান্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন। অন্যদিকে ভুয়া মালিক ও দখলদার ভোলা শেখের লোকজন প্রকৃত মালিক পক্ষের লোকজনকে ফাঁসাতে জমি দখল করতে তোলা ঘরে নিজেরা আগুন লাগিয়ে দিয়ে প্রকৃত জমির মালিকদের নামে বিএনপি সভাপতি আবুল কালামের নির্দেশে ভূরুঙ্গামারী থানায় তারা মামলা করতে যায়। পুলিশ অধিকতর তদন্ত ছাড়া মামলা না নিতে চাইলে কালাম বর্তমান নাগেশ^রী উপজেলা বিএনপির এক প্রভাবশালী নেতার মাধ্যমে থানায় মোবাইল করে সোমবার দিবাগত রাত ২.১৫টায় মামলাটি রেকর্ড করতে বাধ্য করান।
এলাকাবাসীর অভিযোগ আবুল কালাম আজাদ সরকার ছিলেন এলাকার দুষ্টু প্রকৃতির ব্যক্তি। নিজের পরিবারের লোকজনকে নিগৃহীত করার পাশাপাশি জমি দখল করে নেয়। পরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হবার পর থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে কালাম। ওয়াজ মাহফিলের প্রধান অতিথি না করাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় সেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক বাদল ইসলামকে ও যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক আজাহারুলকে পিটিয়ে দাঁত ভেঙ্গে ফেলেন। নদীর বালু উত্তোলনে চাঁদা গ্রহণ, দোকানপাঠ থেকে চাঁদা উত্তোলন, টিসিবি ও ভিজিডি কার্ড দাবী করে ইউনিয়ন পরিষদে চাপ প্রয়োগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে ব্যবহৃত ভেকু আটকে চাঁদা উত্তোলন, গাছ কর্তন, জলমহাল দখল, অন্যের জমি দখলে নেতৃত্ব দেওয়াসহ বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
ভুয়া মালিক ও জমি দখলকারী ভোলা শেখের সাথে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায় নি।
টাকার বিনিময়ে জমি দখলে নেতৃত্ব দিয়েছেন ও থানায় মামলা করতে নিজে এবং দলীয় প্রভাবশালী নেতাকে ব্যবহার করেছেন যা বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত নিষিদ্ধ কাজ। এমন কাজগুলো হরহামেশাই করছেন প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে আন্ধারীঝাড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ সরকার বলেন, নেতা একটু পর মিটিং এ আসবেন। তার মিটিং নিয়ে আমি ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলতে পারবো।
জমির প্রকৃত মালিক পক্ষের আশা বেগম জানান, আমাদের পরিবারে ৩জন বিধবা নারী বাড়িতে বসবাস করি ও এক দেবরসহ ছেলেরা বিভিন্ন কর্মে কুড়িগ্রামের বাইরে থাকেন। এই সুযোগে এলাকার বিএনপির প্রভাবশালী নেতা কালাম ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে আমাদের জমি অন্যদের দখল করে দিয়েছে। উল্টো তাদের দিয়ে রাতারাতি আমাদের পরিবারের লোকজনের নামে থানায় মিথ্যা মামলা করেছে। কালামের কাছে অসহায় ও জিম্মি হয়ে পড়েছে আমাদের পরিবার। জমি দখল ও মিথ্যা মামলার বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপিসহ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আল হেলাল মাহমুদ জানান, ভোলা শেখ নামীয় ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।