পীরগঞ্জে পরিবেশ বান্ধব কৌশলে চাষাবাদ
পীরগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে টোটাল কৃষি ব্যবস্থাই পাল্টে গেছে। এ পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সারাদেশের ন্যয় পীরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় কৃষি বিভাগের কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। বিভিন্ন প্রকল্প ও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চাষাবাদ পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষাবাদ প্রযুক্তি কৌশল কৃষি ফসলের চাষ করছে এখান কার চাষিরা।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা কাবিলপুর আইপিএম মডেল ইউনিয়নে কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে ৫ শতাধিক কিষাণ কিষাণি প্রশিক্ষণ নিয়ে পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে ফুল কফি,বাঁধা কফি সিম এবং বেগুন চাষে ঝুঁকছে।এতে চাষিরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছে।
কাবিলপুর আইপিএম মডেল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে রবি ফসল চাষিদের সাথে কথা বলে জানাযায়, পরিবেশ বান্ধব কৌশলে ফসলের চাষাবাদ করলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায় এবং বিষ মুক্ত সুস্থ সফল ফসল পাওয়া যায়।
উপজেলার জামালপুর গ্রামের সিমচাষি আবু তাহের মিয়া বলেন, কৃষি প্রযুক্তি এখন চাষিদের অনেক দূর এগিয়ে দিয়েছে। এতো দিন ফসলের মাঠে রাসায়নিক সার এবং পোকা দমনে কীটনাশক ব্যবহার করে জমি ও নিজেদের ক্ষতি করেছে। আর না এখন থেকে সবজি চাষে পরিবেশ বান্ধব কৌশলে চাষাবাদে মনযোগী হয়েছে তারা।
হলুদ ফাঁদ নিয়ে কথা হয় জামালপুর গ্রামের মোকছেদ আলীর সাথে তিনি বলেন, সিম খেতে হলুদ ফাঁদে এফিড,গ্যাসিড এবং মাদামাছি আটকে পরে। এই ফাঁদে পোকা অতিসহজেই আঁটকে পরে। সিম খেতে এখন পোকার আক্রমণ অনেকটাই কমেছে। সিম গাছে আগের চেয়ে এবার ভালো সিম ধরেছে।
মলাচিং এর মাধ্যমে ফুল কফি চাষ নিয়ে কথা হয় কৃষ্ণপুর গ্রামের ফুল কফিচাষি রিনু মিয়ার সাথে তিনি বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে পরিবেশ বান্ধব কৌশলে ফুল কফির চাষ করেছে তিনি। মালচিং পদ্ধতিতে ফসলের চাষ করলে পলিথিন নিচের মাটিতে পানি ধারণ করে রাখে এবং আগাছা হয় না। এতে করে ফসলের জমিতে রস সবসময় সমানভাবে থাকে। বাড়তি ভাবে পানি সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না। আবাদও ভালো হয়েছে।
ফেরোমন ফাঁদ নিয়ে কথা হয় কৃষ্ণপুর গ্রামের জয়নাল মিয়ার সাথে তিনি বলেন, পরিবেশ বান্ধব প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের ফেরোমন ফাঁদের আওতায় বেগুন,ফুলকফি ও সিম ফল ছিদ্রকারী পুরুষ মদ ফাঁদের ভিতর ভিতর ঢুকে মারা যায়। বিশেষ করে জৈবিক পদ্ধতিতে বালাই দমন ব্যবস্থাপনা যে সব উপাদান পণ্য রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো উপকারী বন্ধু পোকার লালন ও পোকার সেক্স ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার। তবে এই ফাঁদের মাধ্যমে টাংকির ভিতর তাবিজ ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে আর এই তাবিজের গন্ধ পেয়ে পুরুষ পোকা টাংকির পানিতে ডুবিয়ে মারা যায়। এর ফলে বাহিরের কীটনাশক ফসলের জমিতে ব্যবহারের প্রয়োজন পরে না।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছেন, পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ ফসলের জন্য আলাদা ভাবে হাট বাজার হওয়া উচিৎ। কারণ উপজেলার হাট বাজার গুলোতে বিষ যুক্ত ফসলের ছড়াছড়ি। ভালো ফসলের সাথে নষ্ট ফসল মিশাইলে ভালো ফসলের কোনো উপকারিতা আসবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাদেকুজ্জামন সরকার জানান, পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদনের জন্য কাবিলপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক কিষাণ কিষাণিদের ২০ টি আইপিএম মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ সহ বিভিন্ন কৃষি উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ থেকে উপকরণ পেয়ে উক্ত এলাকার মানুষ পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল উৎপাদন কাজে ঝুঁকে পরেছে।
তিনি আরও বলেন, অই এলাকায় পরিবেশ বান্ধব কৌশলে নিরাপদ ফসল চাষের ব্যপক প্রচার ছড়িয়ে পড়েছে এর পর থেকে সব কৃষক নিরাপদ ফসল উৎপাদন চাষাবাদ করবে এবং কৃষি বিভাগের লোকজন সবসময় কৃষকের পাশে রয়েছে।
এছাড়াও উপজেলা কৃষি বিভাগ নিরাপদ ফসল ক্রয়বিক্রয় নিয়ে আলাদা বাজার ব্যস্থার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে।