১ আষাঢ়, ১৪৩২ - ১৬ জুন, ২০২৫ - 16 June, 2025

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশ ও জনগণকে রক্ষা করার বদলে জনগণের দিকে বন্দুক তাক করে আছে: রংপুরে জিএম কাদের

আমাদের প্রতিদিন
10 months ago
208


দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে

বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে

অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক:

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও  জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা  গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) এমপি বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশ ও জনগণকে রক্ষা করবে অথচ তারা জনগণের দিকে বন্দুক তাক করে আছে এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক। হেলিকপ্টার থেকে, বহুতল ভবন থেকে তাদের নির্বিচারে গুলি বর্ষণে দেশের নিরীহ জনগণ, শিশু, গৃহিণী, পথচারী মারা গেছে।

জিএম কাদের বলেন, সরকার যাদের নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করেছে তাদের কাউকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করার সুযোগ পায়নি। আমার প্রশ্ন হলো তাহলে কেন নির্বিচারে এমন গণহত্যা করা হলো। হেলিকপ্টার থেকে, বাড়ির ছাদ থেকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কিভাবে বুঝল কে সন্ত্রাসী, কে ভাল, কে শিশু।

জিএম কাদের বলেন, আমার জীবনে অনেক আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছি কিন্তু এমন ২০২৪ সালের তো হয়ে সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে এরকম আন্দোলন আগে দেখিনি। দীর্ঘদিন থেকে মানুষ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে, মানুষ নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, সবগুলো একসাথে হয়ে জনগণ মাঠে নেমেছে ছাত্রদের সঙ্গে।

বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টায় রংপুরে দুদিনের সফরে গিয়ে সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, সরকারের এমন কর্মকাণ্ডে আজ দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বর্হিবিশ্বে দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। দেশে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে। আবারও জনগণ মাঠে নামবে, মানুষ মারা যাবে। একসময় বাংলাদেশ বর্হিবিশ্বে সন্ত্রাসী জাতি হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমি মনে করি, এ থেকে উত্তোরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষকে দমন করে ক্ষমতায় থাকা সভ্য সমাজের নীতি হতে পারে না। সবার সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার বুকে সাহস নিয়ে রাজনীতি করা উচিত। জনগণকে বাধ্য করে তাদের ক্রীতদাস করা যাবে না।    

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমান সরকার স্বৈরাচারী সরকার এ কথার সঙ্গে আমি একমত। বিশ্ব গণমাধ্যমও তাই লিখছে। দেশের এমন অবস্থা সৃষ্টির জন্য মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে নাই, সংগ্রাম করে নাই। আমরা গণতান্ত্রিক পরিবেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু দেশে এক নায়কতন্ত্র ও চরমভাবে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু হয়েছে। 

নাশকতার দায় বিএনপি—জামায়াতের ঘাড়ে চাপানো প্রসঙ্গে জিএম কাদের বলেন, সংঘর্ষের শুরু থেকে বিএনপি—জামায়াত বলে বলে যতবার সরকার যেভাবে প্রচার করুক না কেন, আমি ঢাকায় দেখেছি, মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জনগণ সরকারের এ কথা গ্রহণ করেনি। এটি জনগণের সংগ্রাম। বিএনপি—জামায়াত—জাতীয় পার্টির কেউ থাকলে তারা ব্যক্তিগতভাবে আন্দোলনে গিয়েছিল। আন্দোলন নিয়ে বিএনপি—জামায়াত এজেন্ডা দিয়েছিল সরকার এটিকেও প্রমাণ করতে পারেনি। মানুষও গ্রহণযোগভাবে এটিকে গ্রহণ করেনি।

জামায়াত—শিবিরের রাজনীতি বন্ধ নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, জোর করে কিছু করলে তাদের যদি গ্রহণযোগ্যতা ও সাংগঠনিক কাঠামো থাকে, তাহলে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড হবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে করে অস্বাভাবিক রাজনীতির বীজ বপণ হতে পারে। সরকার এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে কেন জামায়াত—শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করল, তাদের কি উদ্দেশ্য রয়েছে এসব প্রশ্ন আমাদের মনে। সেই সঙ্গে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগে সরকার বড় ধরনের নির্যাতনে যাবে কি না এটি নিয়েও আমাদের সংশয় রয়েছে। 

বিরোধীদলীয় নেতা জিএম কাদের আরও বলেন, রাজনৈতিক সমস্যা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে হবে। অস্ত্র দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান হয় না। বরং সমস্যাকে উস্কে দেয়। যাদের কথায় মানুষের আস্থা রয়েছে, যাদের মানুষ বিশ্বাস করে সেই সব রাজনৈতিক দল, রাজনীতিবীদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারকে খোলামেলাভাবে কথা বলতে হবে। সেইসঙ্গে ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

কোটা আন্দোলন নিয়ে জিএম কাদের বলেন, কোটা আন্দোলনে নির্বিচারে যাদের গুলি করে হত্যাকারীদের নিরপেক্ষ তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া মানুষকে হয়রানি, মামলা মোকদ্দমায় ফেলা হচ্ছে। মামলা দেওয়া হলো— একজনকে পঙ্গু করে দেওয়া। মামলা হলে আদালতে যাওয়া, জামিন নেওয়া, মামলা মোকাবেলা করাসহ নানা সমস্যা জর্জরিত হয়ে ছাত্ররা নিঃস্ব হয়ে যাবে। আমি ছাত্রদের নামে মামলা দেওয়ার ঘটনাটি ঘৃণার সঙ্গে প্রতিবাদ করি। আওয়ামী লীগও এক সময় বিএনপি দ্বারা এমন নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। 

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সরকারের ইন্ধনে কোটা ব্যবস্থাকে দলীয় ও ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহারের জন্য এটি আদালতের মাধ্যমে পূর্নবহাল করা হয়েছিল। সাধারণ ছাত্রসহ জনগণ এর প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আমি আমরা জীবদ্দশায় এত স্বতঃষ্ফূর্ত আন্দোলন দেখিনি। এসময় তিনি রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সারা দেশের যত শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে সকল শিক্ষার্থীর বেহেস্ত নসিব যেন আল্লাহ করে এই কামনা করেন।

এ সময় জাতীয় পার্টির কো—চেয়ারম্যান, রংপুর মহানগর কমিটির সভাপতি ও রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির, সহ—সভাপতি লোকমান হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক আজমল হোসেন লেবু, কেন্দ্রীয় সদস্য নুরে আলম যাদু, রংপুর জেলা যুবসংহতির সভাপতি হাসানুজ্জামান নাজিম সহ কেন্দ্রীয়, রংপুর মহানগর ও জেলা জাতীয় পার্টি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth