সরকারের পট পরিবর্তন আন্দোলনে দিনাজপুরে ভাংচুর হয়েছে অর্থমন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের হুইপের বাড়ী
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের মুহুর্তে দিনাজপুরে আওয়ামীলীগ সরকারের পতাকাবাহী একজন মন্ত্রী ও জাতীয় সংসদের একজন হুইপের বাড়ী ভাংচুর করা হয়েছে। তবে এলাকাবাসীর প্রতিরোধে সুরক্ষিত রয়েছে অপর একজন প্রতিমন্ত্রীর বাড়ী।
আওয়ামীলীগ সরকারের দিনাজপুর—৪ (খানসামা—চিরিরবন্দর) আসনের সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর গ্রামের বাড়ী দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ২নং ভেরভেরী ইউনিয়নের খামার বিষ্ণুগঞ্জ গ্রামে। সন্তানরা আমেরিকা প্রবাসী হলেও তিনি থাকতেন ঢাকায়। এলাকাবাসী জানান, দিনাজপুরে আসলে থাকতেন খামার বিষ্ণুগঞ্জ গ্রামের বাড়ীতে। টিন চালার আধাপাকা ওই বাড়ীতে ছিলো ৫টি কক্ষ। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেশ ছাড়ার খবরের পর তার বাড়ীর সবকটি কক্ষই ভাংচুর করা হয়। নিশ্চিহ্ন প্রায় ওই বাড়ীতে এখন আর কেউ নেই। জানাগেছে, আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের আগ মুহুর্তে তিনি সন্তানদের কাছে আমেরিকায় চলে গেছেন।
আওয়ামীলীগ সরকারের দিনাজপুর—৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাড়ী দিনাজপুর শহরের জেনারেল হাসপাতাল সংলগ্ন মুন্সীপাড়া এলাকায়। পৈত্রিক সূত্রে ওই বাড়িটি তার বড় ভাই সদ্য পদত্যাগ করা সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমেরও। দিনাজপুরে আসলে তারা থাকতেন ওই বাড়ীতেই। দুই তলা বিশিষ্ট ওই বাড়ীর সামনে ছিলো হুইপ ইকবালুর রহিমের চেম্বার। পিতা—মাতার নামে গড়া নাজমা—রহিম ফাউন্ডেশনের ওই চেম্বারে বসেই ইকবালুর রহিম চালাতেন এলাকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড। বাড়ীর কেয়ার টেকার সুমন জানান, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৪ আগস্ট ইকবালুর রহিমের চেম্বারে ভাংচুর চালায় আন্দোলনকারীরা। পরের দিন ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে যাওয়ার খবরের পর দোতালা বিশিষ্ট ওই বাড়ীতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয় এবং নাজমা—রহিম ফাউন্ডেশন ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হয় এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। বর্তমানে সেটি এখন ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। বাড়ীতে এখন কেউ নেই। হুইপ ইকবালুর রহিম স্ত্রী—সন্তান নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। বর্তমানে কোথায় আছেন, তার ঘনিষ্টজনরা কেউ বলতে পারেননি। তবে ৪ আগষ্টের হামলার পর হুইপ ইকবালুর রহিম জানান, বাড়ীটি তার পিতা স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মরহুম এম. আব্দুর রহিমের। এই হামলা ও ভাংচুরের বিচার তিনি দিনাজপুরবাসীর উপরই ছেড়ে দেন।
আওয়ামীলীগ সরকারের দিনাজপুর—২ (বিরল—বোচাগঞ্জ) এলাকার সংসদ সদস্য ও নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ী দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সেতাবগঞ্জ পৌর এলাকার ধনতলা গ্রামে। সেখানে থাকেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর মা রমিজা বেগম। দিনাজপুরে আসলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ওই বাড়ীতেই থাকতেন। তার ওই বাড়ীটি সুরক্ষিত রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধনতলা গ্রামের এক ব্যাক্তি জানান, আওয়ামীলীগ সরকারের পতন ও শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কিছু মানুষ খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বাড়ীতে হামলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে কেউ হামলা চালাতে পারেনি। খালিদ মাহমুদের স্ত্রী সন্তান থাকেন লন্ডনে। তবে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমানে কোথায় আছেন, তা কেউ বলতে পারেননি।
আওয়ামীলীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও দিনাজপুর—৫ (ফুলবাড়ী—খানসামা) আসনের সংসদ সদস্য এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের বাড়ী দিনাজপুরের ফুলবাড়ী পৌর এলাকার নিমতলা এলাকায়। নীচে মার্কেট ও দোতলায় তার বাড়ী। দেশের পট পরিবর্তনের পর এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ীতে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও জানালার কাঁচ ভাংচুর করে আন্দোলনকারীরা। এক পর্যায়ে তার বাড়ীতে থাকা দুটি মোটরসাইকেল জ¦ালিয়ে দেয়া হয়। তবে বাড়ীর তেমন ক্ষতি হয়নি বলে জানান এলাকাবাসী। এডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ্য। তিনি ভারতে চিকিৎসা শেষে বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়াও দিনাজপুর—৬ (হাকিমপুর—বিরামপুর—নবাবগঞ্জ—ঘোড়াঘাট) আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের বাড়ী দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার স্বপ্নপুরীতে। তার বাড়ীতে হামলার কোন খবর পাওয়া যায়নি। শিবলী সাদিক বর্তমানে দেশ ছেড়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছেন বলে গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে।
দিনাজপুর—১ (বীরগঞ্জ—কাহারোল) আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচিত সদস্য সদস্য আলহাজ¦ জাকারিয়া জাকার বাড়ী বীরগঞ্জ পৌর এলাকার সুজালপুর গ্রামের বীরগঞ্জ থানা এলাকায়। তার বাড়ীতে কোন হামলা হয়নি বলে জানাগেছে।