১০ মাঘ, ১৪৩১ - ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫ - 24 January, 2025

ব্রীজের নিচ থেকে মাটি কেটে বিক্রি:হুমকির মুখে ব্রীজ-বসতবাড়ি ও আবাদি জমি

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
118


পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার সীমান্ত কালুর ঘাট

পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুরের পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার সীমান্ত কালুর ঘাট ব্রীজের নিচ থেকে দেদারছে নদীর মাটির কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। মিঠাপুকুর ও পীরগাছা থানা পুলিশ কে ম্যানেজ করে গত এক সপ্তাহ  থেকে এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু) দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর (কাকড়া) মাটি বিক্রি করা হলেও  প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। নদীর উপর ফসলি জমির মালিকরা এর প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। আওয়ামী সরকারের পট পরিবর্তনের পর স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি বিএনপি-জামায়াতের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে বেপরোয়া হয়ে  উঠেছে বালু খেকো আংগুর মিয়া ও মোখলেছুর রহমান নামে দুই ব্যক্তি।

সরেজমিনে দেখা যায়, পীরগাছা ও মিঠাপুকুর উপজেলার সীমান্তে কালুর ঘাট ব্রীজটি দুই উপজেলার মেলাবন্ধনে পরিনত হয়। মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে সড়কটি পাকা করণ করা হয়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ থেকে ব্রীজের নিচ থেকে মাত্র ১০০ ফিট দুরে বসানো হয়েছে এস্কেভেটর মেশিন (ভেকু)। যা দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক্টর মাটি কেটে দেদারছে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে করে বর্ষাকালে চরম হুমকির মুখে পড়ছে কালুরঘাট ব্রীজ এবং পাশে থাকা একটি বসতবাড়ি ও কয়েক একর আবাদি জমি। ধ্বসে যাওয়ার আশংকা করছেন এলাকাবাসী। স্থানীয়রা জানান, প্রতি ট্রাক্টর মাটি এক হাজার টাকা করে বিক্রি করা হয়। প্রতিনিয়ত এসব ট্রাক্টর যাওয়া-আসার কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে পাকা সড়ক, ঘটছে অহরহ দুর্ঘটনা।

নদীর উপর থাকা ফসলি জমির মালিক মোজাম আলী, রফিকুল ইসলাম বলেন, যে ভাবে ভেকু দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে, তাতে সামনের বর্ষায় আমাদের তিন ফসলি জমি নদীতে চলে যাবে। এতে কোন সন্দেহ নেই। মাটি কাটা লোকজন স্থানীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। তাই কে শোনে কার কথা! তারা নাকি দুই উপজেলার প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব করছে। তাই আমরা অসহায়। মাটি কাটার স্থানে থাকা একটি বসতবাড়ি রয়েছে। যার টিনের চাল ও বেড়া ঘেষে ট্রাক্টরগুলো চলাচল করছে। ওই বাড়ির বৃদ্ধ মোখলেছুর রহমান বলেন, আমার ঘরের পিড়ালি দিয়ে ট্রাক্টর চলছে। সারা দিন ধুলাবালুতে বাড়িঘর একাকার হয়া গেইছে। কাক বিচার দেমো, আমরা গরীব মানুষ, কইলে কি শোনবে! তাই কিছু কই না। গরীবের আল্লাহ ছাড়া কেই নাই!

ভেকু মেশিন ও ট্রাক্টর দেখাশোনা ও হিসাব রাখার জন্য রয়েছে দু’জন ব্যক্তি। একজন বালু খেকো আংগুর মিয়ার ভাতিজা নিরব। আরেক জন হচ্ছেন বুলবুল মিয়া। সাংবাদিক দেখে বুলবুল মিয়া প্রথমে মাটি কিনতে আসছেন বলে জানালেও পরে তিনি দাবি করেন, তিনি জামায়াতের লোক। পারুল ইউনিয়ননের ৯নং ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক। তবে কেউ কেউ তাকে বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানান।

এ বিষয়ে কথা হয় বালু ব্যবসায়ী আংগুর মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, দুই উপজেলা প্রশাসন ম্যানেজ করা হয়েছে। এই বালু বিক্রির টাকায় ট্রাক্টর প্রতি ১০০ টাকা পায় বিএনপি, দেড়শ টাকা পায় রাস্তার জমি ভাড়া। আরো অনেকের মধ্যে সাংবাদিক, ছাত্রদল-যুবদলসহ স্থানীয় অনেক ছেলে আছেন। সবাইকে টাকা দিতে হয়। প্রশাসনের কি অনুমতি আছে, প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মৌখিক অনুমতি! পুলিশ আসলেই তো দুই-তিন হাজার টাকা দিতে হয়।

জানতে চাইলে পীরগাছা উপজেলা জামায়াতের আমির বজলুর রশিদ মুকুল বলেন, অবৈধ কাজে আমাদের কেউ জড়িত থাকলে আমরা ব্যবস্থা নেব। এটা সংগঠনের সবাইকে বলা হয়েছে।

পীরগাছা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা বলেন, বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে যদি কেউ এ ধরনের কাজ করেন, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পুলিশের অনুমতি বা টাকা নেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি ইউএনওকে বলেন, আমরা দেখছি।

এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র বর্মন বলেন, দুই উপজেলার প্রশাসন মিলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, আমরা অতিদ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth