৩ মাঘ, ১৪৩১ - ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫ - 16 January, 2025

মশিউর রহমান রাঙ্গার মোটর মালিক সমিতিতে উত্থান-পতন

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
25


মহানগর প্রতিবেদক:

১৯৮৯ সাল হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। ১৯৮৯ সালের পর হতে নেতৃত্বে থাকলেও এই প্রথম মোটর মালিক সমিতিতে নেই জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। ২০২৪ সালে এসে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন ওয়াসিম বারী রাজ। আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে পরিবহন সেক্টরের শীর্ষ নেতা রাঙ্গা এখন আত্মগোপনে রয়েছেন। জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দালনে হত্যাসহ কয়েকটি মামলা হয়েছে প্রভাবশালী এই সাবেক মোটর নেতা ও এমপির বিরুদ্ধে।

জেলা মোটর মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালে সঞ্চিতা পরিবহন নামে একটি পুরাতন মিনিবাস কিনে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সদস্য হয়েছিলেন রাঙ্গা। এর পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। এরশাদকে মামা ও রওশন এরশাদকে মামী ডেকে আস্থাভাজন হয়ে রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসন থেকে তিনবার এমপিসহ একবার প্রতিমমন্ত্রীও হন তিনি। এরপর থেকে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে জেলা মোটর মালিক সমিতি নিজের আয়ত্বে নেন। পরে তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহনের প্রেসিডেন্টও হন।

তাকে আইনের আওতায় আনতে সম্প্রতি জেনারেল কমান্ডিং অফিসার বরাবর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা রংপুর জেলার পক্ষে মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী সাক্ষরিত সেই অভিযোগের অনুলিপি অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, জেলা প্রশাসক, পিবিআই, দুদকসহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ‘১৯৯০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত মসিউর রহমান রাঙ্গা সিলেকশনের মাধ্যমে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতিতে একটানা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তার ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। ফলে রংপুর থেকে সকল রুটের পরিবহনের চেইন তিনি তার বাহিনী দিয়ে তোলেন। সমিতিতে নামমাত্র টাকা দিয়ে সব তিনি আত্মসাৎ করেন। আর এভাবে প্রচুর টাকার মালিক বনে যান তিনি। আমেরিকা ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি রয়েছে তার। এছাড়া রংপুর নগরীর গুপ্তপাড়া ও গঙ্গাচড়ায় বাড়িসহ নগরীর কয়েকটি মার্কেট ও নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি আছে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির একাধিক নেতা বলেন, রাঙ্গা এই সমিতি নিয়ে অনেক বাড়াবাড়ি করেছেন। তিনি নিজের প্রভাব খাটিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতেন।

নবনির্বাচিত রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ বলেন, পরিবহন সেক্টরে রাঙ্গার সাম্রাজ্যের অবসান হয়েছে। আর কখনও গুন্ডামি, চাঁদাবাজিসহ কোনো ধরনের হয়রানি করতে দেওয়া হবে না। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের ফসল এই বাংলাদেশ। স্বৈরাচার ও দুর্নীতিবাজদের স্থান রংপুর পরিবহন সেক্টরে থাকবে না।

এ ব্যাপারে মসিউর রহমান রাঙ্গার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

জেলা মোটর মালিক সমিতির নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার রংপুর চেম্বারের সভাপতি আকবর আলী জানান, শুক্রবার যাচাই-বাছাই শেষে সাধারণ সম্পাদককসহ ৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় তাদের বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

আগামী ১১জানুয়ারি/২৪ রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মোট পদ রয়েছে ১৬টি। এর মধ্যে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৮ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায়  নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৮টি পদে ভোট গ্রহণ হবে। ভোটার সংখ্যা ২০৩ জন। বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতা নির্বাচিতরা হলেন সভাপতি শরিফুল আলম হিরু, সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুল আমিন, সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম বারী রাজ, যুগ্ম সম্পাদক মাহ্শিদ ফারহান জিহান, সাংগঠনিক সম্পাদক বহুলুল ইসলাম জেপলিন, সড়ক সম্পাদক মনোয়ার হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সায়দুর রহমান ও দপ্তর সম্পাদক কাশেম মৃধা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth