নাগেশ্বরীতে যৌতুক না পেয়ে সন্তানসহ স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে স্বামী বিচার দাবিতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে স্ত্রী
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে যৌতুকের টাকা না পেয়ে ৩ সন্তানসহ স্ত্রীকে বের করে দিয়েছেন স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের হাইল্যাটারী গ্রামে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কুড়িগ্রাম আদালতে স্বামী শফিকুল ইসলাম (৪২) সহ ৫ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেছেন নির্যাতনের শিকার নারী দুলালী খাতুন (৩৭)।
মামলার বিবরণে জানা যায় ২০০৫ সালে রামখানা ইউনিয়নের ছবিল উদ্দিনের মেয়ে দুলালী খাতুনের সাথে সন্তোষপুর ইউনিয়নের হাইল্যাটারী গ্রামের শাহজাহান আলীর ছেলে শফিকুল ইসলামের পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে তার স্বামী শফিকুল ইসলাম ঢাকায় গার্মেন্টস কারখানাসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করতেন। স্ত্রী দুলালী খাতুনও গার্মেন্টস কারখানায় কাজ করতেন। এদিকে ১৯ বছর সংসার জীবনে ২ মেয়ে ও এক ছেলে সন্তানের জন্ম দেয় দুলালী খাতুন। এরই মাঝে এক সময় স্ত্রী দুলালী খাতুনের অনুমতি ছাড়াই ঢাকায় গোপনে বিয়ে করেন তার স্বামী। দ্বিতীয় বিয়ের কিছুদিন পর কৌশল অবলম্বন করে প্রথম স্ত্রী দুলালী খাতুনকে তার বাবার বাড়ি থেকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় দুলালীর উপর প্রতিনিয়ত অমানবিক নির্যাতন শুরু করেন তার স্বামী। একদিন এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হলে টাকা দাবি করে তাকে শারিরিক নির্যাতন করে ঘরে আটকে রাখেন। পরে দুলালীর বাবা খবর পেয়ে ৯৯৯-এ থানা পুলিশের সহযোগিতায় মেয়েকে উদ্ধার করে নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা নেন। এখন ২ বছর বয়সের এক ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন দুলালী খাতুন। এর মাঝে দুই মেয়েকে বিয়ে দিলেও মেয়ে-জামাইদের কোনো প্রকার খোঁজ খবর নেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে মেয়েদের। বড় মেয়ে শিউলি খাতুন (১৯) জানায়, তার বাবা তার মাকে বিভিন্ন সময় অত্যাচার ও নির্যাতন করতো। মায়ের কাছে যৌতুক দাকি করতো। বিভিন্ন সময় কারণে-অকারণে মারধর করতো। এখন আমাদের ২ বোন ও ২ বছর বয়সী ছোট ভাইটারও কোনো খোঁজখবর নেয়না। মা এখন ছোট ভাইটাকে নিয়ে নানার বাড়িতে কষ্ট করে থাকছে। আমরা চাই এই একটা সুষ্ঠু বিচার হোক।
স্থানীয়রা জানান, শফিকুল ইসলাম কৌশল অবলম্ব করে দ্বিতীয় বিয়ে করে তার স্ত্রী সন্তানদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। এখন দুলালী তার সন্তানকে নিয়ে বাবার ঘরে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।
দুলালী খাতুনের বাবা ছবির উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে আমাদের ওয়ার্ডের সদস্য ও স্থানীয়রা একাধিকবার শালিস বৈঠক করে সমাধানের চেষ্টা করেছেন কিন্তু শফিকুল কোনো বিচারই মানে নাই। উল্টো তিনি বারবার আমাদের পরিবারকে নানাভাবে হুমকী প্রদান করেছে। এর একটু সুষ্ঠু বিচার হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে জানতে বিবাদী দুলালী খাতুনের স্বামী শফিকুল ইসলামকে ফোন দিলে, তিনি বলেন ভাই এগুলো ফাও কথা বলিয়েন না নাতো। আপানাকে আমি এগুলো বলব কেন? বলেই ফোন কেটে দেন তিনি। সন্তোষপুর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড সদস্য মোস্তফা কামালের সাথে কথা বলতে একাধিকবার ফোন দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নাগেশ্বরী থানার অফিসার ইনচার্জ মিজানুর রহমান বলেন, এ সম্পর্কে আমার ভালোকরে জানা নেই। মামলার আইওর সাথে কথা বললে বলতে পারব।