হিলিতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযানে বিজিবির বাধা, মাদকদ্রব্য উদ্ধার

হিলি (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের হিলিতে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজিবির বিরুদ্ধে। এসময় আসামী ইমন হোসেন (২৭) পালিয়ে গেলেও তার বাড়ী থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় একটি মাদক মামলা করা হয়েছে। সোমবার (২ জুন) সন্ধ্যায় উপজেলার হিলি বিওপি ক্যাম্পের সামনে এঘটনা ঘটে।
উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুরের চুড়িপট্টি গ্রামের স্থানীয়রা জানান, হাকিমপুর থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য বিজিবির হিলি বিওপি ক্যাম্পের গেটের সামনে ইমন হোসেনের বাড়ীতে যায়। তারা ইমনের খোঁজে অভিযান শুরু করলে ক্যাম্পের বিজিবি গোয়েন্দা সদস্য রুকু মিয়া থানার এস আই মোস্তাফিজুর রহমানকে উচ্চস্বরে বাড়ী থেকে বের হয়ে যেতে বলে। এস আই মোস্তাফিজুর সহ অন্যান্য ফোর্স বাড়ী থেকে বের হয়ে ওই বিজিবি গোয়েন্দা সদস্যের পরিচয় জানতে চায়। তখন সে আরও উত্তেজিত হয়ে পুলিশদের সামনে গিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। এসময় বিজিবির গোয়েন্দা সদস্যের সাথে ৩/৪ জন বিজিবি সদস্য ছিল। একপর্যায়ে এস আই মোস্তাফিজুর ওসিকে ফোন দিলে কিছুক্ষণ পর ওসি আসে। কিন্তু তার আগেই ইমন বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়।
জানা গেছে, ইমন হোসেন হিলি বিওপি ক্যাম্পের গেটের ৩০-৩৫ গজ পশ্চিমে মৃত আব্দুস ছালামের ছেলে। সে এলাকায় মাদক সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে।
থানার এস আই মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী ইমনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নিয়ম মেনে তাকে গ্রেপ্তার করতে চুড়িপট্টিস্থ হিলি বিওপি ক্যাম্প এলাকায় অভিযানে যায়। এছাড়া খবর ছিল সে ভারত থেকে মাদক পাচার করে এনে নিজ বাড়ীতে কেনা-বেচা করছে। এসময় বাড়ীর লোকজনকে তার ব্যাপারে জানতে চাওয়া মাত্র সিভিলে একব্যক্তি এসে উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে এই বাড়ী থেকে বের হও। তোমরা কারা। তোমাদের পরিচয় কি এমন নানা আজে-বাজে কথা বলতে থাকে। আমি বলি আমরা থানার পুলিশ, আমি এস আই মোস্তাফিজুর। পাশের উনি থানার সেকেন্ড অফিসার। আমি বলি আপনার পরিচয় কি? সে তখন পরিচয় না দিয়ে রাগান্বিত হয়ে কথা বলতেই থাকে। আমি উপায়ন্তু না পেয়ে ওসি স্যারকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে আসতে বলি। এরপর জানতে পারি ওই ব্যক্তি বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য। তার নাম রুকু মিয়া বলে জানতে পারি। কিছুক্ষণ পর ওসি স্যার আসলে সে ক্যাম্পের ভিতরে ঢুকে পড়ে।
এস আই মোস্তাফিজ আরও জানান, সাংবাদিক ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে ইমনকে গ্রেপ্তারে তার বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন বাড়ীতে তল্লাশী অভিযান চালানো হয়। এসময় তার বাড়ী থেকে আমদানি নিষিদ্ধ ভারতীয় ৪৯০ পিস নেশাজাতীয় ইনজেকশন (এ্যাম্পল) ও ৭ বোতল অফিসার চয়েস মদ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে সেখানে স্বাক্ষীদের উপস্থিতিতে উদ্ধার করা ভারতীয় মাদকদ্রব্যের সিজারলিষ্ট তৈরী করে থানায় জমা রাখা হয়েছে।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: নাজমুল হক জানান, দুটি মাদক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী মাদক ব্যবসায়ী ইমনের বাড়ীতে মাদক কেনা-বেচার খবর পেয়ে এবং ইমনের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে থানার দুইজন অফিসার সহ সঙ্গীয় ফোর্স তাকে গ্রেপ্তার করতে যায়। এসময় ইমনের বাড়ীতে প্রবেশের পরপরই বিজিবির একজন গোয়েন্দা সদস্যের বাধা দেওয়ার কারণে ইমনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। বিজিবির গোয়েন্দা সদস্য রাষ্ট্রীয় কাজে পুলিশকে সহযোগিতা না করে সেখানে বাধা দেওয়া হয়েছে। তার বাধার মুখে পুলিশ আসামীকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ইমনের নামে আরও ৪টি মাদক মামলা সহ তার মায়ের নামও ২টি মামলা রয়েছে।
ওসি আরও জানান, এব্যাপারে আমি বিজিবির হিলি বিওপি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার ও ওই বিজিবি গোয়েন্দা সদস্যের সাথে কথা বলতে চেয়েছি। কিন্তু তারা কেউ কথা বলতে চাননি। পরে জয়পুরহাট- ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) মহোদয়ের সাথে ফোনে কথা বলেছি। কেন বাধা দেওয়া হলো বা মাদক ব্যবসায়ীর সাথে বিজিবির ওই গোয়েন্দা সদস্যের কি সম্পর্ক রয়েছে বিষয়টি তাকে জানানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এই ঘটনা আমাদের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। ইমনের বাড়ী থেকে উদ্ধার হওয়া মাদকদ্রব্যগুলি থানায় রাখা হয়েছে।
এব্যাপারে জয়পুরহাট- ২০ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক (সিও) লে. কর্ণেল মো: আরিফুল দৌলা সাংবাদিকদের জানান, মাদক উদ্ধারে পুলিশকে বাধা দেওয়া হয়নি। বিজিবির সদস্যরা পুলিশকে সহযোগিতা কেেরছে। সীমান্ত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করতে হলে কিছু নিয়ম আছে, তা মেনে পুলিশ অভিযান করতে পারে। পরে থানার অফিসার ইনচার্জ আমাকে ফোন করলে আমি অভিযানের অনুমতি দিয়েছি। বাধা দেওয়ার কারণে পুলিশ আসামী গ্রেপ্তার করতে পারেনি এমন প্রশ্নের উত্তরে সিও বলেন, এমন কোন ঘটনা সেখানে ঘটেনি।
এদিকে এঘটনায় থানার এস আই সুমন কুমার সরকার বাদী হয়ে ইমন ও তার মা লিলি বেগমকে আসামী করে গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৯টায় থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। যার নং ০৩।