৩১ আষাঢ়, ১৪৩২ - ১৫ জুলাই, ২০২৫ - 15 July, 2025

ফুলবাড়ীতে ৪ বছরে ব্রীজের নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ

3 weeks ago
63


লোকজন পারাপারে চরম ভোগান্তি

আব্দুল আজিজ মজনু, ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে খোচাবাড়ী তালেরতল জোলের (ছড়া) উপর ৬৭০০ মিটার চেইনেজে ৪২ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার চার বছর পেরিয়ে গেলেও আজও কাজ শেষ না হওয়ায় প্রায় ১০ গ্রামের হাজার হাজার মানুষজনের যাতায়তে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অন্যদিকে নামেমাত্র ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রীজটি দু’পাড়ে শুধুমাত্র দেয়াল তৈরি করে অন্যান্য কাজ করতে ঢিলেমি করায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, উপজেলার খড়িবাড়ী জিসি-খোচাবাড়ী ভায়া ভাঙ্গামোড় ইউপি সড়কে খোচাবাড়ী তালেরতল জোলের উপর ৬৭০০ মিটার চেনইজে ৪২ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রীজ নিমার্ণের কাজ শুরু হয় ১৯ শে এপ্রিল ২০২১ সালে। জউজওওচ-২/ড-ইজও-০৩২@ঞবহফবৎওউ :৫২৪২৫০ প্যাকেজ নং-এ এটির কার্যাদেশ দেওয়া হয় ১২ই এপ্রিল ২০২১ সালে। নুফা-জেডএইচডি-জেভি, ঘোষপাড়া কুড়িগ্রাম নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রীজটির কাজ ১৮ এপ্রিল ২০২২ সমাপ্তি করার চুক্তি করে। কিন্ত আজও পর্যন্ত কাজটি শেষ করতে না পাড়ায় ওই এলাকার খোচাবাড়ী, রাঙ্গামাটি, ভাঙ্গামোড়, নগরাজপুর, ভেরভেরি, সুবারকুটি, চন্দন পাক, আরডিআরএস,তালুকদার পাড়া, সদ্দারপাড়া, হোলখানা, রক্ষীকান্ত ও আবাসন প্রকল্প এলাকার ২০/২৫ হাজার মানুষজনের যাতায়তে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমনকি যেখানে ব্রীজটি নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে সেখানে একটি লোকজন পারাপারের জন্য ব্রীজ ছিল। সেটি ভেঙে যাওয়ায় নতুন করে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যায়ে ব্রীজ নির্মাণের টেন্ডার হলে মানুষ পারাপারের জন্য বিকল্প পথ সৃষ্টি না করেই নতুন ব্রীজের কাজ শুরু করে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে এলাকার লোকজনের সহয়োগিতায় প্রতিদিন ড্রামের ভেলা তৈরি করে হাজার হাজার লোকজন পারাপার করছে। ব্রীজটি চার বছরেও নির্মাণ কাজ শেষ না হওয়ায় ব্রীজটির দক্ষিণপাড়ের গ্রামগুলোর স্কুল কলেজে পড়ুয়া প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ জন শিক্ষার্থীর পড়ালেখা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে খোচাবাড়ী আবাসন প্রকল্পের হতদরিদ্র পরিবার গুলোর জীবন জীবিকার উপর বিরুপ প্রভাবের সৃষ্ঠি হয়েছে। এছাড়াও প্রতিদিন এই তালেরতল জোলের (ছড়া)বুকে ড্রামের ভেলা তৈরি করে শতশত লোকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন।

 ব্রীজটির ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষে মিস্ত্রি আব্দুল হালিম ও মাইদুল ইসলাম জানালেন, আমাদের যেভাবে ঠিকাদার কাজ করতে বলেন আমরা সেভাবেই কাজ করি। কেন যে, ব্রীজের কাজ করতে সময় লাগছে আমরা বলতে পারবো না।

স্থানীয় নজির হোসেন, মনসুর আলী, মতিয়ার রহমান, ফারুক হোসেন ও আমিনুল ইসলাম আমাদের প্রতিদিনকে  জানালেন, বর্তমানে আমরা অনেক কস্ট করে ফসল সংগ্রহের সময় ব্রীজ না থাকায় ছোট ছোট ভুড়া ও ড্রামের ভেলায় (এক ধরণের কলা গাছের ভেলা) করে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করে থাকি। অনেক সময় পানির স্রোতে পড়ে দুর্ঘনার শিকার হই। অনেকে আবার ভেলায় পাড় হতে গিয়ে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে শিকার হচ্ছেন। এটা কি দেখার কেউ নেই!

স্থানীয় এনজিও কর্মি আমিনুল জানালেন, প্রায় ২০/২৫ হাজার লোকজনের জোলটি (ছড়া) পারপারে প্রভাব পড়ছে, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ব্যবসা ও বিশেষ করে কৃষিকাজে। চার বছর পূর্বে ব্রীজটির কাজ শুরু হলেও সংশ্লিষ্টদের তেমন আগ্রহ চোখে পড়েনি। তিনি দ্রুত কাজটি শেষ করার আহবান জানান।

মিশুক চালক আমিনুল ইসলাম জানালেন, আমাদের যে দূগর্তি। বর্ষা আসলেই ব্রীজটি না থাকায় জীবন মরণের সমস্যা হয়ে যায়।

ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বাবু জানালেন, ব্রীজটির নির্মাণ কাজ নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শেষ না করায় জনদূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। তিনি দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।

উপজেলা প্রকৌশলী মামুনুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ব্রীজটি নির্মাণ স্থানে পানির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া ব্রীজটির প্রাক্কলনের সময়ে ওই এলাকায় পানি নিষ্কাশনের ও প্রতিরোধ বাঁধ দেওয়ার বাজেট না থাকায় ব্রীজটি নির্মাণে ধীরগতি ও সময় লাগছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে কাজ শেষ করার আশা করছি।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth